কিছু পার্শ্বচরিত্র নি:শব্দে ছাপ ফেলে যায়

আরব সাগরের তীরঘেঁষা ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে একটা রূপকথার মঞ্চায়নই হয়েছে বটে। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল যা করে দেখিয়েছেন, তা তার আগ পর্যন্ত অবাস্তব ও কল্পনাপ্রসূতই ছিল। মানুষের সামর্থ্যের অনবদ্য প্রদর্শনী যে কল্পনাকেও ছাপিয়ে যায় তারই একটা প্রামাণ্য দৃশ্যের মঞ্চায়ন ঘটিয়েছেন ম্যাক্সওয়েল।

তবে অজি এ ব্যাটার যে অভাবনীয় ইনিংসটি খেললেন, অস্ট্রেলিয়াকে অবিশ্বাস্য জয় এনে দিলেন, সেই অভিযানেও তো একটা পার্শ্বচরিত্র আছে। ম্যাক্সির বীরোচিত ইনিংসে সেই পার্শ্বচরিত্রটা হলেন প্যাট কামিন্স।

৯১ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া তখন বিপর্যস্ত, বিধ্বস্ত। অস্ট্রেলিয়ার জয়ের সম্ভাবনার সূচকও তখন নেমে গিয়েছিল ১ শতাংশেরও নিচে। সেখান থেকেই ম্যাক্সওয়েলের ইনিংস অবিশ্বাস্য জয় এনে দেয় অস্ট্রেলিয়াকে। ২০২ রানে যে জুটিতে স্মরণীয় এই জয়, তার অন্য প্রান্তে ছিলেন কামিন্স।

২০২ রানের জুটিতে ম্যাক্সওয়েলের একারই ১৭৯। সেখানে কামিন্স করেছেন ৬৮ বলে মাত্র ১২! ২৯২ রানের লক্ষ্যে এমন একটা ইনিংস নিয়ে সমালোচনা কুড়ানোটাই অনুমেয়। তবে কামিন্স যেটা করেছেন তা অনেকটা অধিনায়কোচিত, দুর্দান্ত, একই সাথে সতীর্থের প্রতি ভরসার অনন্য উদাহরণও।

৬৮ বলে ১২ রান করলেও তাই ম্যাক্সওয়েলের মহাকাব্যিক ইনিংসের গল্পের লুকায়িত চরিত্র হচ্ছেন প্যাট কামিন্স।ম্যাক্সওয়েলের ইনিংসটা কেউ দেখেছেন স্টেডিয়ামে, কেউ প্রশংসা করেছেন কমেন্ট্রি বক্সে মাইক্রোফোন হাতে, আর সিংহভাগ ক্রিকেট প্রেমী স্বাক্ষী হয়েছে টেলিভিশনের পর্দায়।

তবে সবচেয়ে কাছ থেকে যিনি দেখেছেন, তিনি হলেন প্যাট কামিন্স। যার দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে থেমেছিলে নাভিন, আজমতউল্লাহদের পেস আগ্রাসন, আর রশিদ, মুজিবদের স্পিনবিষের ভয়াল থাবা।

ম্যাক্সওয়েলের সাবলীল, আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে প্রয়োজন ছিল একটা সঙ্গ। যে ঐ মুহূর্তে মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে পারবে, মানসিকভাবে জয়ের পথে চোখ রাখবে। দৃঢ়চেতা, অভঙ্গুর মননে কামিন্স আক্ষরিক অর্থেই ম্যাচ জয়ের পথে চোখ রেখেছিলেন। ভরসা রেখেছেন ম্যাক্সির উপরে।

শুধু তাই নয়, কামিন্সের সঙ্গও ম্যাক্সওয়েলকে এমন দুর্দান্ত একটা ইনিংস খেলার রসদ জুগিয়েছিল। ম্যাক্সওয়েলের একক প্রচেষ্টায় পুরো বিশ্ব যখন বিস্ময়ের অপেক্ষায়, তখন কামিন্স অন্য প্রান্ত থেকে করতালি দিয়েছেন।

অবশ্য ম্যাক্সির ইনিংসে যেমন ভাবে আড়ালে চলে গিয়েছে কামিন্সের অবদান, ঠিক সেভাবে আড়াল করেছেন তিনি নিজেকেও। এই না হলে অধিনায়ক। ম্যাচশেষের পুরো বক্তব্যের কেন্দ্রেই থাকলো ম্যাক্সওয়েল। নিজেকে নিয়ে যে টুকু বললেন তাও সেটি হাস্যরসাত্বক ভাবে। বললেন, আমি তো স্ট্রাইকই পাইনি! ম্যাক্সিকে তার কাজ করতে দেওয়াই তো আমার দায়িত্ব।

কামিন্স যেভাবে ‘দায়িত্ব’-এর আদলে নিজেকে পরিমিতরূপে বেঁধেছেন, তা মোটেও ঠিক ‘ততটুকু’ নয়। ভাবনা কিংবা প্রত্যাশাকেও ছাপিয়ে যায় এমন দায়িত্বশীল ইনিংস। যে ইনিংস নিয়ে কথা হবে কম, প্রশংসার জোয়ার বইবে পরিমিত। কিন্তু ক্রিকেট ইতিহাস স্বাক্ষী থাকবে, ম্যাক্সওয়েলের ইতিহাস গড়ার দিনে আরো একজন ছিলেন সেই যুদ্ধক্ষেত্রে। সেই একজনটা প্যাট কামিন্স।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link