বিশ্বকাপের মধ্যেই বাংলাদেশের প্রধান কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহে বলেছিলেন, তাঁর আসল কাজ শুরু হবে বিশ্বকাপের পর। বিশ্বকাপ এখন শেষ। আর তাই টাইগার এ কোচ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজ নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। সেই লক্ষ্যে টেস্ট সিরিজের আগে ১৮ নভেম্বর শুরু জাতীয় লিগের শেষ পর্বটাতে চোখ রাখবেন বলে জানা গিয়েছে।
তবে বিশ্বকাপ শেষের পর টাইগার এ কোচ যতই নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ুক না কেন, বিশ্বকাপ ব্যর্থতা তো আর এখনই মুছে ফেলতে পারেন না। আর সে ব্যর্থতার দায়টা থেকে যে তিনি একেবারে মুক্ত, তেমনটিও নয়। বরং বিশ্বকাপ ব্যর্থতাকে ঘিরে তাঁকে নিয়ে দলের অন্দরমহলে কম অভিযোগ নেই। ভারত বিশ্বকাপে যেভাবে দলের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠেছিলেন, বিশ্বকাপের পর সেভাবেই তিনি থাকবেন কিনা, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
বিসিবির অধিকাংশ পরিচালকই মনে করেন, বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ব্যর্থতার অনেকটা দায় রয়েছে হাতুরুসিংহেও। কেননা, বিশ্বকাপ চলাকালীন যেভাবে বাংলাদেশ ব্যাটিং অর্ডারে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছে, তাতে চরম মাশুলও গুণতে হয়েছে তাদের। আর হাতুরুর এমন পরীক্ষা নিরীক্ষায় অসন্তুষ্ট ছিলেন খোদ ক্রিকেটাররাই।
এ ছাড়া দল নির্বাচনেও হাতুরুসিংহে দিয়েছেন চরম স্বেচ্ছাচারিতার পরিচয়। বিশ্বকাপের দল থেকে তামিম বাদ পড়ার পরই তৃতীয় ওপেনার সংকটে ভুগছিল বাংলাদেশ। কিন্তু বিস্ময়করভাবে, তামিমের বিকল্প হিসেবে নেওয়া হয়নি আর কোনো ওপেনার। যার কারণে পুরো বিশ্বকাপ জুড়ে একাদশের বাইরে ছিল না কোনো বিকল্প ব্যাটার।
অবশ্য হাতুরু জানিয়েছেন, বিশ্বকাপ দল ঘোষণার আগে বিকল্প কোনো টপ অর্ডার ব্যাটারের নামই বলতে পারেননি নির্বাচক প্যানেল। সব কিছু মিলিয়ে নিজের দিকে ছুঁড়ে আসা অভিযোগ কিংবা দায়টা তিনি দিয়েছেন অন্যদের উপরেই। একই ভাবে কোচিং স্টাফের বেশ কিছু সদস্যও হাতুরুর এমন আচরণে বেশ ক্ষিপ্ত।
অবশ্য তা প্রকাশ্যে না এলেও স্পষ্ট হয়েছে অনুশীলন কিংবা টিম হোটেলেই। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগের দিন ইডেন গার্ডেনের অনুশীলনে অন্য কোচরা নাকি ইচ্ছা করেই খেলোয়াড়দের নিয়ে মাঠের একপাশে সরে যান। সেই সেশনে নেটে একা ছিলেন হাথুরুসিংহে। এভাবেই কোচিং স্টাফদের সাথে হাতুরুর দূরত্ব পরিলক্ষিত হয়েছে। দল সূত্রে জানা গেছে, এটি অন্য কোচদের পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত ছিল যে মাঠে তাঁরা সেদিন প্রধান কোচের কাছে থাকবেন না।
এখানেই শেষ নয়। এমন অভিযোগও আছে, অন্যান্য কোচদের কাজে হস্তক্ষেপ করেছেন হাতুরুসিংহে। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের ইচ্ছা মতো কাজ করেছেন। কিন্তু অন্যদের কাজ করতে দিতেন না স্বাধীনভাবে। এমনকি খেলোয়াড়দের সঙ্গে তাঁদের ঠিকভাবে কথাও বলতে দিতেন না। আর তাঁর স্বেচ্ছাচারিতায় কাল হয়ে এসেছে বাংলাদেশে।
দলের ভেতর থেকে আসা এসব অভিযোগের ভিত্তিতেই হাতুরুসিংহের ব্যাখ্যা জানতে চাইবে বিসিবি, এখন পর্যন্ত এমনটাই জানা গেছে। আর সেই ব্যাখ্যার ওপরই নির্ভর করবে বাংলাদেশ দলের কোচ হিসেবে তাঁর ভবিষ্যৎ। অবশ্য সেই সিদ্ধান্ত বরখাস্ত পর্যন্ত এগোবে না বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে।
কারণ ২০২৫ পর্যন্ত চুক্তি রয়েছে এ কোচের সাথে। সে ক্ষেত্রে এখনই বিদায় করে দিলে মোটা অঙ্কের টাকার ক্ষতিসহ নতুন কোচ খোঁজার মতো কঠিন প্রসেসের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে বিসিবিকে। বিসিবি নিশ্চিতভাবেই তাই সেই পথে হাটবে না। তবে হাতুরুর ক্ষমতার বলয়টা কমিয়ে আনা হতে পারে বলে জানা গিয়েছে।