বিশ্বকাপ ফাইনাল, ভারতের শক্তিমত্তা, দুর্বলতা ও সম্ভাবনা

অসাধারণ, অপ্রতিরোধ্য, অপরাজেয়— বিশ্বকাপ জেতার হাতছোঁয়া দূরত্বে দাঁড়িয়ে থাকা ভারতের এই দলটাকে আপনি এমন বিশেষণে অনায়াসেই বিশেষায়িত করতে পারেন। রাউন্ড রবিন লিগ থেকে সেমিফাইনাল, কোনো ম্যাচেই এখন পর্যন্ত কোণঠাঁসা হতে দেখা যায়নি রোহিত শর্মার দলকে। প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে, লজ্জায় ডুবিয়ে ভারতের জয়রথ চলছেই। আর জয়ের ধারা এক ম্যাচ অব্যাহত থাকলেই বিশ্বজয়ের জয়ধ্বনিতে মেতে উঠবে গোটা ভারত।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আহমেদাবাদের ফাইনালে ভারতের শক্তিমত্তা কিংবা সম্ভবনার জায়গা কোথায়? দৌর্দণ্ড প্রতাপে ছুটে চলার ভারতের এই দলটার কি কোনো দুর্বলতাই নেই? একই সাথে ভারতের জন্য কি ন্যূনতম হুমকিও অপেক্ষা করছে না? এ সব প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজেছে খেলা ৭১। চলুন দেখে নেওয়া যাক।

ভারতের এই দলটার সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা হচ্ছে তাদের টিম পারফরম্যান্স। একাদশের প্রায় সবাই রয়েছেন দারুণ ছন্দে। সেটা ব্যাটিং, বোলিং কিংবা ফিল্ডিং, সব ইউনিটেই চলতি বিশ্বকাপে রাজত্ব দেখিয়েছে ভারত। ওপেনিংয়ে প্রতি ম্যাচেই দারুণ শুরু এনে দিয়েছেন রোহিত শর্মা। টুর্নামেন্টে একবার শতক পেরিয়েছেন। তবে তাঁর শুরুর ঝড়ো ইনিংস ভারতকে একটা বড় সংগ্রহের ভিত্তি গড়ে দিয়েছে। একই সাথে, মোক্ষম সময়ে শুভমান গিলও নিজের চেনা ছন্দে ফিরেছেন।

আর নাম্বার তিনে বিরাট কোহলি তো ক্যারিয়ারের সেরা বিশ্বকাপ কাটাচ্ছেন। ৭১১ রান নিয়ে এখন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহ ব্যাটার হচ্ছেন তিনি। এ ছাড়া যে মিডল অর্ডার নিয়ে ভারতের দুশ্চিন্তা ছিল, তা উবে গিয়েছে শ্রেয়াস আইয়ার আর লোকেশ রাহুলের ব্যাটিংয়ে।

দুজনই সেঞ্চুরি পেয়েছেন। শ্রেয়াস আইয়ার পেয়েছেন ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি। সব মিলিয়ে ভারতের ব্যাটিং লাইন আপ রীতিমত অপ্রতিরোধ্য ছিল গেল ১০ ম্যাচের যাত্রায়। ফাইনালেও তাই এই শক্তিমত্তার একটা প্রয়োগ ঘটাতে চাইবে রোহিত-বিরাটরা।

একটুও পিছিয়ে নেই, ভারতের বোলিং ইউনিট। ৬ ম্যাচে ২৩ উইকেট নিয়ে রীতিমত উড়ছেন মোহাম্মদ শামি। ভারতের সেমি জয়ের নায়ক ছিলেন তিনিই। এ ছাড়া বুমরাহ ১৮ উইকেট নিয়েছেন। আর স্পিনারদের মধ্যে রবীন্দ্র জাদেজা ও কুলদ্বীপ যাদবও রয়েছেন ছন্দে। জাদেজা ১৬, আর কুলদ্বীপ নিয়েছেন ১৫ টা উইকেট।

অবশ্য বোলিং শক্তিমত্তার জায়গা হলেও এই বোলিং ইউনিট নিয়েও রয়েছে শঙ্কা। আর সেটিই ভারতের দুর্বলতম জায়গা। হার্দিক পান্ডিয়া ইনজুরিতে পড়ার পর ভারত ৫ বোলার নিয়েই এগিয়েছে। ফাইনালেও ৫ বোলার তত্ত্বতেই মাঠে নামবে তাঁরা।

কিন্তু শঙ্কা হল, অপ্রত্যাশিত ভাবে যদি কোনো বোলার ফাইনালে অফফর্মে চলে যান, অর্থাৎ রান হজম করে সে ক্ষেত্রে তাঁকে ব্যাক আপ দেওয়ার জন্য দলে কোনো সিক্সথ বোলারের অপশন নেই। যদিও পার্ট টাইমার হিসেবে কোহলি, গিলরা বল করেছেন। তবে ফাইনালের মঞ্চে তা নিশ্চিতভাবেই পর্যাপ্ত রসদ না।

তবে এই দুর্বলতা বাদ দিলে বিশ্বকাপ জেতার পথে সম্ভাবনার দুয়ারেই দাঁড়িয়ে আছে ভারত। শেষ তিন ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতেছে স্বাগতিকরাই। এবারও তার ব্যত্যয় না ঘটলে রোহিত শর্মাদের হাতেই উঠবে বিশ্বকাপ। তাছাড়া, আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের দর্শক ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৩১ হাজারের মধ্যে সিংহভাগরাই থাকবে ভারতীয় সমর্থক। ঘরের মাটিতে এমন সমর্থন তাই নিশ্চিতভাবেই ম্যাচের আগেই এগিয়ে রাখবে ভারতকে।

ভারতের জন্য একেবারেই যে কোনো হুমকি অপেক্ষা করছে না, সেটিও বলা যাবে। রাউন্ড রবিন লিগে এই অস্ট্রেলিয়াকেই হারিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করেছিল ভারত। তবে শুরুর দুই ম্যাচ হেরে অস্ট্রেলিয়া ব্যাকফুটে চলে গেলেও, টানা ৮ ম্যাচ জিতে তাঁরা ফাইনাল নিশ্চিত করেছে।

সে হিসেবে ফাইনালে ওঠার পথে শুধু ভারতেরই জয়রথ ছিল না, জয়ের ধারায় রয়েছে অজিরাও। এখন শেষ পর্যন্ত কাদের জয়রথ থামবে, তার জন্য অপেক্ষা আর এক দিনের। শুরুর মতোই নিশ্চিতভাবে শেষটাও অজিদের হারিয়েই ওয়ানডে ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসতে চাইবে ভারত।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link