৭ মার্চ, ২০২০। পচেফস্ট্রুম।
সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টেস্টে মুখোমুখি হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া। এমনিতে পচেফস্ট্রুমের এই মাঠে খুব একটা দর্শকের ভিড় হয় না। কিন্তু এই দিনটা ব্যতিক্রম। পাশের ক্লার্কসড্রপ নামে একটা শহর থেকে দলে দলে লোক এসে গ্যালারির একটা অংশ ভরে ফেলেছে। এদের প্রায় সবার নামের শেষে পদবী একই।
অস্ট্রেলিয়া থেকে যাওয়া সাংবাদিকরা ভাবলেন, দক্ষিণ আফ্রিকান তারকাদের দেখতে এই ভিড়। কিন্তু কিছুক্ষনের মধ্যে তাদের ভুল ভাঙলো। এক স্থানীয় সাংবাদিক জানালেন, ‘এই লোকেদের পদবী প্রায় সবার লাবুশেন। আর এরা এসেছে আফ্রিকার মার্নাস লাবুশেনকে দেখতে।’
হ্যাঁ, বিশ্বাস করুন, এটাই সত্যি।
মার্নাস লাবুশেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে অনেক কীর্তি করে ফেললেও আজও ক্লার্কসড্রপের লোকজনদের কাছে তিনি একজন ‘আফ্রিকান’। আর লাবুশেন তাদের কাছে খাটি তাদের জাতিগোষ্ঠীর লোক। কারণ, এখান থেকেই ১০ বছর বয়সে এই মার্নাস লাবুশেনকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েছিলেন তার বাবা-মা।
ম্যাচটা উপলক্ষে আরেকটা ব্যাপার ঘটেছিলো।
স্থানীয় পত্রপত্রিকায় বড় বড় করে লাবুশেনকে নিয়ে ফিচার ছাপা হয়েছিলো, তাকে নিয়ে কিংবদন্তী শন পোলকের কথা ছাপা হয়েছিলো এবং ছাপা হয়েছিলো একটা ঝাপসা ছবি। সেই ছবি নিয়েই আমাদের গল্প। হ্যা, শন পোলকের কোলের কাছে দাড়িয়ে থাকা বছর চারেক বয়সের লাবুশেনের ছবি।
তখনও মার্নাসের বাবা ও পরিবার ক্লার্কসড্রপেই থাকেন। পোলক মনে করেছেন, এই ছবিটা ১৯৯৭ সালের। সে সময় দক্ষিণ আফ্রিকা এখানে কোনো একটা সিরিজের প্রস্তুতি হিসেবে ক্যাম্প করছিলো। আর সেই ক্যাম্পে ছেলেকে জাতীয় তারকাদের দেখাতে নিয়ে এসেছিলেন লাবুশেনের বাবা।
পোলক ছবিটা দেখে কিছুটা মনে করতে পেরে বলেছেন, ‘এটা ১৯৯৭ সালের কথা, এটা নিশ্চিত। কারণ, এই পোশাকটা আমরা ওই বছর পচেফস্ট্রুমের ক্যাম্পে পরেছিলাম। আমার মনে আছে, একটা বাচ্চাকে তার বাবা নিয়ে এসেছিলেন। সম্ভবত উনি বললেন, যাও, ওনার কাছে দাড়াও; আমি ছবি তুলি। বাচ্চাটা আমি কে, সেটা বুঝতে পেরেছিলো বলে মনে হয় না। সে বাবার কথা শুনেছিলো শুধু।’
এরপর সাংবাদিকরা আরও চেপে ধরলেন পোলককে-লাবুশেনের সাথে ক্রিকেট নিয়ে কথা হয়েছিলো? পোলক হো হো করে হাসেন, ‘হ্যা, আমি ওকে টেস্ট ব্যাটিং শিখিয়ে দিয়েছিলাম। গেমপ্লান নিয়ে কথা হয়েছিলো। হা হা হা…। তখন তো ও একেবারে বাচ্চা। ক্রিকেট খেলতো কি না, আমি জানি না। কিন্তু এখন আমার গর্ববোধ হয় যে, বিশ্বের অন্যতম সেরা এই খেলোয়াড়টিকে আমি ওই বয়সে দেখেছিলাম।’
তবে লাবুশেনের বাবা বলছেন, মার্নাস সেই সময়ই ক্রিকেট শুরু করেছিলেন। আর দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ, প্রয়াত বব উলমারের সামনে লাবুশেন ব্যাট-বলও করে দেখিয়েছিলেন। উলমার নাকি লাবুশেনের বাবাকে রেফান নম্বর দিয়ে যেতে বলেছিলেন। কে জানে, উলমার বেচে থাকলে হয়তো আমরা দক্ষিণ আফ্রিকার লাবুশেনকেই চিনতাম!
তবে লাবুশেন এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে গেলেও তাকে নিয়ে আফ্রিকানদের গর্বে ভাটা নেই। খোদ পোলক বলেছেন, ‘ও অসাধারণ, তাই না? আমরা কমেন্ট্রিবক্সে বসে কত জনকেই তো ভালো বলি। কিন্তু মার্নাসের মতো অসাধারণ ক্রিকেটার তো খুব একটা হয় না। আমাদের আফ্রিকানদের জন্য ও একটা গর্বের নাম। আমি আশা করি, ও একজন গ্রেট হয়ে উঠবে।’
আফ্রিকানদের আশা মিথ্যে হওয়ার কথা নয়।
কেনো? সেই ম্যাচটার কথা মনে করে দেখুন। অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকার সেই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা জিতেছিলো। আর তার আগে ঘরের লোকেদের সামনে মার্নাস লাবুশেন সেঞ্চুরি করেছিলেন। একেই বলে আফ্রিকার জয়!