কুইন্সল্যান্ড টি-টোয়েন্টি লিগের ফাইনালে স্রেফ ২৮ বলে ৭১ রান করে নর্দান সুবার্বসকে শিরোপা জিতিয়েছেন নিখিল চৌধুরী। এর আগে সেমিফাইনালে সাত সাতটি ছক্কা মেরেছিলেন তিনি। অবিশ্বাস্য পাওয়ার হিটিং সামর্থ্য দেখিয়ে অস্ট্রেলিয়া জুড়ে হইচই ফেলে দেয়া এই ক্রিকেটার কিন্তু পুরোদস্তুর অজি নন; চার বছর আগে ভারত ছেড়ে ব্রিসবেনে পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি।
তবে বিগ ব্যাশ লিগে দল পেতে বহু অপেক্ষা করতে হয়েছে তাঁকে। শেষপর্যন্ত হোবার্ট হ্যারিকেন নিজেদের স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত করে নিখিলকে। এর মধ্য দিয়ে মাত্র দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে বিবিএল খেলার সুযোগ পান তিনি। আর এটি তাঁর জীবনের গতিপথ অনেকটাই বদলে দিয়েছিল।
ভারতের যুব দলের জার্সিতে খেলা এই ডানহাতির ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরুটা হয়েছিল ব্রেট লিকে অনুসরণ করে। কিন্তু এই কিংবদন্তির মত বিদ্যুৎ গতিতে বোলিং করতে না পারায় একটা সময় ফাস্ট বোলিং ছেড়ে স্পিনার বনে যান তিনি। ২০১৭ সালে পাঞ্জাব রাজ্য দলে সুযোগ পান, সেসময় অবশ্য তাঁর পরিচয় ব্যাটিং অলরাউন্ডার।
পাঞ্জাবে হরভজন সিং, যুবরাজ সিংদের সাথে খেলার ব্যাপারে নিখিল বলেন, ‘ভারতে ক্রিকেটারদের ভগবান মনে করা হয়। তাই কিছুটা নার্ভাস ছিলাম, কিন্তু পরবর্তীতে তাঁদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি।’
২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ছুটি কাটাতে চান তিনি। এরপরই কোভিড-১৯ এর কারণে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায়, আটকা পড়েন ব্রিসব্রেনে। যখন পুনরায় সব ঠিকঠাক হয়েছিল ততদিনে এই শহরের মায়ায় পড়ে গিয়েছিলেন এই উদীয়মান তারকা। তাই ভারতে আর ফেরেননি, ক্যাঙারুদের দেশেই ক্রিকেট ক্যারিয়ার গড়ার সিদ্ধান্ত নেন।
কাজ করার পাশাপাশি তাই ব্যাট বল নিয়ে ব্রিসবেনের মাঠে পড়ে থাকতেন তিনি। একটা সময় হোবার্ট থেকে ডাক আসে, এরপরই নতুন করে শুরু হয় তাঁর ক্যারিয়ার। অবশেষে ২০ ডিসেম্বর প্রথমবার দলটির হয়ে মাঠে নামেন এই ভারতীয়, অভিষেক ম্যাচেই চাপের মুখে ৩১ বলে ৪০ রান করেন, প্রমাণ দেন নিজের সাম্যর্থের।
এরপর মেলবোর্ন স্টারসের বিপক্ষে খেলেছেন ১৬ বলে ৩২ রানের ঝড়ো ইনিংস। সেই ইনিংসে হারিস রউফকে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টের উপর দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন তিনি; যেটির ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ে ইন্টারনেটে।
ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের দরুণ একাদশেও তাঁর জায়গা পাকা হয়ে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, এই ব্যাটিং অলরাউন্ডার ম্যাথু ওয়েডস বাহিনীর এক্স-ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছেন। তিনি বলেন, ‘দলের প্রয়োজনে যেকোনো ভূমিকা পালন করব। আমার মনোযোগ এখন হ্যারিকেনের জন্য বেশি বেচি ম্যাচ জেতা কারণ আমরা প্রথম শিরোপা জিততে মরিয়া।’
উন্মুক্ত চাঁদের পথে হেঁটে নিখিল চৌধুরী এখন বিবিএল মাতাচ্ছেন। তাঁর চোখেমুখে রয়েছে হোবার্ট হ্যারিকেনের প্রতি কৃতজ্ঞতা আর অস্ট্রেলিয়ায় মনে রাখার মত ক্রিকেট ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন – এই স্বপ্ন পূরণে তিনি কতটা সফল হবেন সেটা সময়ই বলে দিবে।