সাফল্যের মূলমন্ত্র জানেন মাশরাফি

তিনি দিনবদলের একটা সুর তুলেছিলেন। একই সুঁতোয় বেঁধেছিলেন গোটা দলকে। ডুবতে থাকা নৌকাকে শক্ত হাতে সামলেছেন। দেখিয়েছেন আলোর পথ।

তিনি দিনবদলের একটা সুর তুলেছিলেন। একই সুঁতোয় বেঁধেছিলেন গোটা দলকে। নৌকার মাঝি হয়ে সতীর্থদের শক্ত হাতে সামলেছেন। দেখিয়েছেন আলোর পথ। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ঠিক সে কারণেই তো সমাদৃত সর্বস্তরে। বাংলাদেশের ক্রিকেটের নব জাগরণের সেনাপতি যে তিনিই ছিলেন।

একের পর এক ইনজুরি। হাটুতে অগণিত অস্ত্রপচার। ব্যথায় কাতরে উঠেছেন বারংবার। ম্যাচের পর সহ্য করেছেন নিদারুণ যন্ত্রনা। সুচ ফুটিয়ে হাঁটু থেকে বের করতে হয়েছে জমে থাকা তরল। এতসব কিছু সহ্য করেও মাশরাফি বিন মর্তুজা ছুটেছেন, গোটা দলকে নিয়েই ছুটেছেন তিনি। দলকে দেখিয়েছেন আলোকিত ভূবন।

তিনি যখন অধিনায়ক হয়ে ফিরলেন জাতীয় দলে, এরপর থেকেই যেন বদলে যেতে শুরু করে সমস্ত কিছু। চোটের কারণে টেস্ট ক্রিকেট তিনি খেলতে পারেননি। তবে বর্তমান সময়ে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সমীহ আদায় করার শুরুর কাণ্ডারি তিনি। মাশরাফি জানেন ঠিক কি করে বদলে দিতে হয় সবকিছু। তিনি জানেন নেতিবাচকতাকে দূরে ঠেলে এগিয়ে যাওয়ার সরু পথ।

একজন পথিকৃৎ হয়ে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাফল্যের যাত্রা নব জাগরণ সৃষ্টি করেছেন। সেই মাশরাফি আবারও নেমেছেন লড়াইয়ে। না ক্রিকেট ময়দানে নয়। তার এবারের লড়াইটা নির্বাচনের মাঠে। আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনিও একজন প্রতিযোগি। সাংসদ হওয়ার লড়াইয়ে তিনি দিনরাতে এক করে ছুটে যাচ্ছেন মানুষের দোড়গোড়ায়।

ছেলে-বুড়ো সবার কাছেই চাইছেন ভোট। অদম্য মাশরাফি এখানেও যেন অদম্য। সেই হাটুর চোট তার নিশ্চয়ই আছে এখনও। তবুও তিনি এ গ্রাম থেকে ও গ্রাম ছুটে চলেছেন। মানুষের সাথে মিশে যাচ্ছেন। তার চাওয়া একটাই, তিনি তার জনপদের মানুষের ভাল কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দিতে চান।

মাশরাফির ভক্ত কিংবা সমর্থক, পুরো দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তিনি চাইলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়ে দিতে পারতেন নিজের মনোবাসনা। শীতের কুয়াশায় ঢাকা ভোরে ছুটে যাওয়ার তার বিশেষ কোন প্রয়োজন ছিল না। কনকনে শীতের রাতে তিনি নিজ বাড়ির উঠোনে বসে হরেক রকমের পিঠে উৎসব চাইলেন করতে পারতেন।

তবে মাশরাফি সেসব করছেন না। তিনি বরং মানুষের মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দিতে চাইছেন। যেমনটা দিয়েছেন নিজের খেলোয়াড়ী জীবনে। নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্যে সাফল্য বয়ে নিয়ে আসার আপ্রাণ চেষ্টাই মাশরাফি করে গেছেন। এবার তিনি প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন নড়াইলের মানুষদের সুদিন ফেরানোর।

আগেও অবশ্য সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। উন্নয়নে অবদান রাখতে পেরেছেন সামান্যই। বিনয়ী মাশরাফি অবশ্য তেমনটা বলেই মাটিতে রাখতে চাইছেন পা। প্রথম দফায় যে মহামারী তাকে আটকে দিয়েছিল বছর দুয়েকে জন্যে। অপূর্ণ থেকে গেছে অনেক কিছুই। সেই অপূর্ণতা তিনি রাখতে চান না। নড়াইলের কৌশিক হয়ে তিনি অমর হয়ে যেতে চান।

বাংলাদেশের ক্রিকেটেও তো অমরত্ব পাওয়ার দাবিদার তিনি। ওয়ানডেতে তার সময়কালে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেছে ৫০টি। জয়ের শতকরা হিসেবে তা ৫৬.৮১ শতাংশ। এমন পরিসংখ্যান যে নেই আর কারো। ক্রিকেট থেকে বেশ খানিকটা দূরে অবস্থিত রাজনীতিতেও এমন সফলতার দেখা মাশরাফি নিশ্চয়ই পাবেন। জনপ্রতিনিধি হয়ে তিনি হয়ত পেয়ে যাবেন অভাবনীয় সাফল্য।

সাফল্যের চাবিকাঠি যে মানুষকে একত্র করা, সব শক্তির পূর্ণ ব্যবহার করা- সেটা মাশরাফির জানা। তাইতো তিনি নড়াইলের সব মানুষকে এক করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দিনভর। বাদ যাচ্ছে না সন্ধ্যা কিংবা রাত।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...