ক’দিন আগে জানিয়েছিলেন, টেস্ট ক্রিকেটই তাঁর কাছে সর্বেসর্বা। কিন্তু ঘরের মাটিতে সেই ফরম্যাটে বিচরণ করার সুযোগ কই! শেষবার ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে যখন ভারত সফর করেছিল ইংল্যান্ড, তখন উইকেট ছিল স্পিন সহায়ক। দলের অন্যতম সেরা পেসার হওয়া সত্ত্বেও ৪ ম্যাচের সে সিরিজে ২ ম্যাচে খেলেছিলেন জাসপ্রিত বুমরাহ। বল করেছিলেন মাত্র ৪৮ ওভার।
দুই বছর বাদে আবার যখন ভারত সফরে ইংল্যান্ড, তখনও পিচের অবস্থা সেই একই, স্পিন সহায়ক। কিন্তু এবার নিজেদের পাতা স্পিনিং উইকেটের ফাঁদেই আটকে যায় ভারত। তবে হায়দ্রাবাদ টেস্টের সে দুঃস্মৃতি ভুলে বিশাখাপত্তনমে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ভারত। দ্বিতীয় দিনশেষে আপাতত চালকের আসনে রয়েছে তারাই। আর তার নেপথ্যে ব্যাট হাতে যেমন অবদান রেখেছেন জশস্বী জয়ওয়ালে, ঠিক তেমনি বোলিং ইনিংসে ইংলিশ ব্যাটারদের উপর ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন জাসপ্রিত বুমরাহ।
ডানহাতি এ পেসার একাই নিয়েছেন ৬ টি উইকেট। আর তাতেই ২৫৩ রানে অলআউট হয়েছে ইংল্যান্ড। তবে শুরুর চিত্রটা মোটেই এমন ছিল। বরং ইংল্যান্ডের ‘বাজবল’ অ্যাপ্রোচের অংশ হিসেবে বুমরাহর বল প্রথমদিকে বেধড়ক পিটিয়েছে দুই ওপেনার। জ্যাক ক্রলি তো এক ওভারেই টানা তিন চারসহ চারটি চার মারেন।
কিন্তু প্রথম স্পেলে ম্লান বুমরাহ ঘুরে দাঁড়ান দ্বিতীয় স্পেলেই। তাঁর রিভার্স সুইংয়ে পরাস্ত হন জো রুট। ক্রিজে থিতু হওয়ার আগেই স্লিপে থাকা শুভমান গিলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ইংলিশ এ ব্যাটার। এর ঠিক পরের ওভারেই স্ট্যাম্প গুঁড়িয়ে দেন আগের ম্যাচে ১৯৪ রানের ইনিংস খেলা ওলি পোপের। বুমরাহর পেস আর ইয়র্কারের সমন্বয়ে ছত্রখান তিন স্ট্যাম্পই।
বুমরাহ প্রতাপ শুরু সেখান থেকেই। এরপর তাঁর পেস, সুইং আর ইয়র্কারের মিশেলে নাভিশ্বাস উঠে যায় ইংলিশ ব্যাটারদের। রুটের মতোই সুইংয়ে বিধ্বস্ত হন জনি বেয়ারস্টোও। ইনসুইং করা বলটা হঠাতই আউট সুইংয়ে রূপ নেওয়ায় বলটা বুঝতেই পারেননি এ ব্যাটার। ফলাফল, গিলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান এ ব্যাটার।
ইংল্যান্ডের হয়ে প্রতিরোধ গড়ার লড়াই চালিয়েছিলেন অধিনায়ক বেন স্টোকস। এগিয়েছিলেন ব্যাক্তিগত অর্ধ-শতকের পথে। তবে তিনিও বুমরাহর শিকার হয়ে ফিরে যান ৪৭ রানেই। এর ঠিক পরের ওভারেই টম হার্টলিকে ফিরিয়ে ফাইফার পেয়ে যান বুমরাহ। ফাইফারের পর ৬ নম্বর উইকেটটাও নেন তিনিই। ইংল্যান্ডের শেষ ব্যাটার হিসেবে তাঁর শিকার হন জেমস অ্যান্ডারসন।
১৫.৫ ওভারে ৪৫ রানে ৬ উইকেট। যে ৬ উইকেট পাওয়ার পথে তিনি টপকেছেন ১৫০ উইকেটের মাইল ফলক। একই সাথে পেয়েছেন টেস্ট ক্যারিয়ারের দশম ফাইফার। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট দিয়ে পরিচিতি পাওয়া বুমরাহ লাল বলের ক্রিকেটেও রাখছেন পরিপক্বতার ছাপ। মাঝে ইনজুরির কারণে মাঠের বাইরে থেকেছেন অনেক দিন। তবে সে সব দিন পেছনে ফেলে বুমরাহ এখন হয়ে উঠেছেন তিন ফরম্যাটেরই দেশ সেরা পেসার। সাদা বল থেকে লাল বল, বুমরাহর পেস আগ্রাসনের বদল নেই কোনো ফরম্যাটেই। ক্রিকেটের এই কুলীন ফরম্যাটে এমন রাজকীয় পারফর্ম্যান্সই তো তাঁকে শ্রেষ্ঠত্বের পথে এগিয়ে দিবে।