দুয়োধ্বনিতে জর্জরিত সাকিব আল হাসান। দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষেও একই ঘটনার অবতারণা মিরপুর হোম অব ক্রিকেটে। কিন্তু এদিন সেই দুয়োধ্বনির জবাব দিলেন তিনি। ব্যাটে-বলেই জবাবটা দিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। ভুয়া ভুয়া বলে চিৎকারের জনস্রোত মুহূর্তেই ভেসেছে সাকিবের সাফল্যের উৎসবে।
চোখের সমস্যা। ব্যাট করতে বিপাকেই পড়তে হয়েছে তাকে। কোন কোন ম্যাচে ব্যাট করতেই নামেননি। যেসব ম্যাচে নেমেছেন তখনও নেমেছেন ব্যাটিং অর্ডারের একেবারে শেষের দিকে। কিন্তু দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে তিন নম্বরে এলেন উইকেটে। সেই চিরচেনা ব্যাটিং পজিশন। যেখান থেকেই ২০১৯ সালে সাকিব লিখেছিলেন এক মহাকাব্যিক পদচারণার গল্প।
এদিন এসেই বাউন্ডারির পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন তিনি। তিনটি সুবিশাল ছক্কায় পুরো মাঠে সেই পুরনো উল্লাস। সাকিবের ব্যাট থেকে রান আসার স্বস্তি। নিজেকে ফিরে পাওয়ারও একটু খানি স্বস্তি সম্ভবত অনুভব করছিলেন সাকিব নিজেও। দুর্দান্ত ঢাকার বোলারদের উপর স্বল্প সময়ের একটা স্টিমরোলার চালালেন সাকিব। ১৭০ স্ট্রাইক রেটের একটা দুর্দান্ত ইনিংস।
স্রেফ ২০ বলে ৩৪ রান করে মোসাদ্দেক হোসেনের শিকারে পরিণত হন সাকিব। তবে ততক্ষণে চারিদিকে প্রত্যাবর্তনের একটা সুবাতাস ছড়িয়ে দিয়েছেন বাঁ-হাতি এই ব্যাটার। ব্যাট হাতে সাকিব স্বরূপে ফিরেছেন। আর বল হাতে থাকবেন নিষ্প্রভ, সেটা কি করে হয়!
তেমনটি হয়ও নি শেষ অবধি। দুর্দান্ত ঢাকার ব্যাটিং ইনিংসের সপ্তম ওভারে সর্বপ্রথম বল হাতে এলেন তিনি বাইশ গজে। তখনও স্টেডিয়ামের একপ্রান্ত থেকে সেই দুয়োধ্বনি শোনা গেল। সাকিবের তাতে ‘থোরাই কেয়ার’। তিনি নিজের কাজে দিয়েছেন সবচেয়ে বেশি মনোযোগ। এই পৃথিবীতে সম্ভবত সাকিবকে দমানোর মত শক্তি খুব স্বল্পই রয়েছে।
নিজের প্রথম ওভারেই উইকেটের দেখা পেয়ে যান সাকিব। অজি ব্যাটার অ্যালেক্স রসকে নিজের শিকারে পরিণত করেন। অফ স্ট্যাম্প লাইনে ফুলার লেন্থের বলটা ডিপ মিডউইকেটে খেলার চেষ্টা করেন রস। তবে সেই শটের শেষ পরিণতি হয় ক্যাচ আউট। মোহাম্মদ নবীর তালুবন্দী রস। আবারও সেই দুয়োধ্বনি কোথাও একটা মিলিয়ে যায়। পুরো স্টেডিয়াম জুড়েই তখন উল্লাস ছড়ানো গগনবিদারী চিৎকার।
সেই চিৎকার তার চতুর্থ ওভারে পরিণত হয়, জয়ধ্বনিতে। সাকিব সাকিব বলে বহুদিন বাদে যেন শেরে বাংলাতে হয়ে গেল এক মধুর স্লোগান। সেটার কারণ অবশ্য সাকিব নিজেই সৃষ্টি করেছেন। নিজের শেষ ওভারটায় পরপর দুই বলে দুই উইকেট তুলে নেন। মারকুটে ভঙ্গিমায় ব্যাট করতে থাকা তাসকিন আহমেদ ও এরপর শরিফুল ইসলাম। দুইজনই মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন।
তাতে করে সাকিবের বোলিং ফিগারটাও যেন হয় আরও খানিকটা সমৃদ্ধ। চার ওভারে স্রেফ ১৬ রান খরচায় সাকিব বাগিয়ে নেন ৩ উইকেট। কতশত ঝঞ্ঝাট পেরিয়ে দেখা মিলল আরও একটি সাকিবময় দিনের। ব্যাটে-বলে মাতিয়ে রাখলেন সাকিব আল হাসান। এটাই তবে ফেরার সুবাস?