অনৈতিকতার চর্চায় লিপ্ত শ্রীলঙ্কা ও হাসারাঙ্গা

বেশ সূক্ষ্ম বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট দল। চতুরতার চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত। আইনের মারপ্যাঁচের ফাঁক গলে বিশ্বকাপে নিজেদের অন্যতম অস্ত্রকে অক্ষতই রাখল শ্রীলঙ্কা। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, বিষয়টি নৈতিকতার নিরিখে ঠিক কোথায় স্থান পাবে?

প্রথমত ঘটনাটা একটু বর্ণনা করা প্রয়োজন। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, আম্পায়দের সাথে খারাপ ব্যবহার করবার কারণে দুই ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছেন। আর এখানেই মূলত সেই সূক্ষ্ম একটা চাল চেলেছে শ্রীলঙ্কা দল কিংবা ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা।

হাসারাঙ্গা গেল বছরের আগস্টে লাল বলের ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন। তিনি চেয়েছিলেন তার সাদা বলের ক্যারিয়ারকে আরও খানিকটা রঙিন করতে। আরও খানিকটা দীর্ঘ করতে। সে চিন্তাধারা থেকেই তিনি বিদায় বলেছিলেন সাদা পোশাকের ক্রিকেটকে।

কিন্তু বছরের চাকা ঘুরতেই তিনি আবারও টেস্টে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজকে সামনে রেখে নিজের প্রত্যাবর্তনের ঘোষণা দেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। এখানেই আসলে এক ধূর্ত কৌশল অবলম্বন করে ফেলেন তিনি।

সাধারণত কোন ম্যাচের শৃঙ্খলা ভঙ্গের শুনানি সেই ম্যাচ শেষ হওয়া মাত্রই অনুষ্ঠিত হয়। মূলত বাংলাদেশের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে তিনি আইসিসির খেলোয়াড় আচরণবিধির ২.৮ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করেন। তাতে করে শুনানি শেষে তিনি নিশ্চিত ছিলেন- নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হবে তাকে।

বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের পর আর কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ নেই শ্রীলঙ্কার। অতএব টেস্টের অবসর বলবৎ থাকলে তার এই শাস্তি গিয়ে গড়াতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। টুর্নামেন্টের প্রথম দুই ম্যাচে তিনি থাকতেন মাঠের বাইরে। বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচে দলের সেরা অস্ত্রকে নিয়ে নামতে নারাজ শ্রীলঙ্কার টিম ম্যানেজমেন্ট।

তাইতো কারসাজি করে শ্রীলঙ্কার টেস্ট দল ঘোষণা করা হয় ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে রেখেই। তাতে করে শাস্তি ভোগের একটা পন্থা তৈরি হয়ে যায়। এখানেই আসলে আসে সেই নৈতিকতার প্রশ্ন। প্রথমত দল সংশ্লিষ্ট সকলে মিলে নিঃশব্দে হাসারাঙ্গার অসদাচারণকে সমর্থন জানিয়ে গেল। তাতে করে আইসিসির খেলোয়াড় আচরণবিধির আর মান থাকল কই?

দ্বিতীয়ত, পুরো ঘটনার অবতারণা একটা বাজে উদাহরণ সৃষ্টি করল। এখন যে কেউ শাস্তি এড়াতে হুটহাট অবসর ভেঙে ফিরে আসবেন। শাস্তি কাটিয়ে, দিব্যি অন্য ফরম্যাটে খেলে যাবেন। টেস্ট সিরিজ শেষে হাসারাঙ্গা যদি আবারও অবসর নিয়ে ফেলেন- তাতে অবাক হওয়ারও কিছু থাকবে না।

ক্রিকেটকে বরাবরই বলা হয় ভদ্রলোকের খেলা। অন্তত নীতি বহির্ভূত কাজ ভদ্রলোকের হতে পারে না। তাছাড়া গোটা একটা ক্রিকেটীয় সিস্টেম এক অপরাধকে প্রশ্রয় দিয়ে ফেলল। নিশ্চয়ই তা নৈতিকতার দারুণ অবক্ষয়। এমন দৃষ্টান্ত অন্তত ক্রিকেটের জন্য অমঙ্গল।

আইনের ফাঁক-ফোকড়কে মানুষ সব সময়ই নিজের মত করে ব্যবহার করে এসেছে। আইন-কানুনকে যেকোন সময় দুমড়ে-মুচড়ে ফেলা যায়। নিঃশব্দে অট্টহাসি হাসা যায়। শ্রীলঙ্কা ও হাসারাঙ্গা এখন বরং তাই করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link