ব্র্যাডম্যান এবং রেকর্ডময় দিনের গল্প

স্যার ডন ব্র্যাডম্যান তখনো স্যার তকমাটি পাননি। আর পাবেই বা কি করে? এ তো ২১ বছরের এক তরুণ, যে শক্তিশালী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাট হাতে চালিয়েছিলেন ব্যাটিং তাণ্ডব। গড়েছিলেন বিশ্বরেকর্ড; নিজের নামটি লিখেছিলেন রেকর্ড পাতায়। যেই রেকর্ড আজ পর্যন্ত ছুঁয়ে দেখার সুযোগ হয়নি বিশ্বের বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানদের। আচ্ছা কি সেই রেকর্ড! জানতে কি ইচ্ছে করছে? আচ্ছা আসুন এবার সেই রেকর্ডময় দিনটির গল্প শুনি।

ইতিহাসের পাতা উল্টিয়ে ফিরে গেলাম ১১ জুলাই ১৯৩০ সালের ঘটনায়। সেদিন ইংল্যান্ডের লিডসের হেডিংলি স্টেডিয়ামে হচ্ছিলো অ্যাশেজ সিরিজের তৃতীয় টেস্ট। সেই টেস্টে টস জয়ী অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ব্যাট করতে আসা ২১ বছর ৩১৮ দিনের এক তরুণ ব্যাট হাতে একের পর এক বাউন্ডারিতে সীমানা ছাড়া করছিল ইংল্যান্ডের সেরা বোলারদের।

এভাবেই কিছুক্ষণ চললো তরুণের ব্যাটিং তাণ্ডব। দিনের প্রথম সেশনেই পৌঁছে গেলেন ৩ অঙ্কের ম্যাজিগ ফিগারে। টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে লাঞ্চের আগেই সেঞ্চুরি করা তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে সেই রেকর্ডে নাম লিখিয়ে ফেললেন ব্র্যাডম্যান। এরপর যেনো আরো ভয়ংকর হয়ে উঠেছিল ডনের ব্যাট! একের পর এক রেকর্ড লিখেছেন নতুন করে। বিশ্ব তখন তাকিয়ে অবাক দৃষ্টিতে।

দিনের প্রথম সেশনে সেঞ্চুরি করা ব্র্যাডম্যান এবার পৌঁছে গেলেন আরেক মাইলফলকে। শুধু পৌঁছায়নি, ইতিহাস লিখেছিলেন নতুন করে। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে কম সময়ে তুলে নিয়েছিলেন ডাবল সেঞ্চুরি। সেদিন মাত্র ২১৪ মিনিটেই(সেই সময় বলের হিসেব হতো না) সেই রেকর্ড গড়ে ইতিহাসের খাতায় যুক্ত করেছিল নতুন পাতা!

দিনের খেলা তখনো অনেকটা বাকি। ইংল্যান্ড শিবিরে তখন ভয়ের কারণ হয়ে ক্রিজে দাঁড়িয়ে থেকে সাবলীল ভঙ্গিতে উইকেটের চারদিকে শট খেলে দর্শকদের মাতিয়ে তুলেছিলেন ডন। প্রথম সেশনে সেঞ্চুরির পর দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরি করা ব্র্যাডম্যান তখনো রানক্ষুধায়! ইংল্যান্ডের বোলারদের সামনে ধারণ করেছিলেন রূঢ়মূর্তি। সেদিন দিনের খেলা শেষ হবার আগেই নিজের নামটি লিখে ফেলেছিলেন রেকর্ড বুকে। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে এক দিনেই খেলেছিলেন ৩০৯ রানের অপরাজিত রেকর্ডময় ইনিংস।

এখানেই শেষ নয় রেকর্ডের। সেদিন ব্র্যাডম্যান যেনো হয়ে উঠেছিল এক রেকর্ডের খনি! কেননা সেদিন সেই ইনিংসের মাধ্যমেই তৎকালীন সময়ে সবচেয়ে কম বয়সে ট্রিপল সেঞ্চুরির রেকর্ডও গড়েছিলেন তিনি।

টেস্টে এক দিনেই সেঞ্চুরি করা ব্র্যাডম্যান থেমেছিল দ্বিতীয় দিনে। আউট হয়ে সাজঘরে ফেরার আগে নামের পাশে যুক্ত করেছিলো ৩৩৪ রান! যা ছিলো তৎকালীন সময়ে অ্যাশেজ ইতিহাসের সর্ব্বোচ্চ রানের ইনিংস। এরই সাথে সেই ইনিংসটিই ছিলো ব্র্যাডম্যানের টেস্ট ক্যারিয়ারের সর্ব্বোচ্চ রানের ইনিংস।

সেদিন ডন ব্র্যাডম্যানের রেকর্ডময় ইনিংসের উপর ভর করে অস্ট্রেলিয়া দিন শেষ করেছিল ৩ উইকেট হারিয়ে। স্কোরকার্ডে যুক্ত হয়েছিলো ৪৫৮ রান। ফিরে দেখা স্মৃতিতে ১৯৩০ সালের আজকের দিনটি ছিলো স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের জন্য রেকর্ডময় একটি দিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link