সীমিত ওভারে ক্রিকেট এবং টেস্ট ক্রিকেট দুই ভিন্ন সংস্করণে উইকেট রক্ষকের ভূমিকা ভিন্ন ধরণের। সীমিত ওভারের ক্রিকেটের একজন উইকেট রক্ষক একজন ব্যাটসম্যানের ভূমিকাতেও থাকে। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে উইকেট রক্ষকের প্রধান কাজ থাকে উইকেটের পিছনের দায়িত্ব সামলানো।
এক টেস্ট ম্যাচে মূলত চার ইনিংস খেলা হয়। একজন উইকেট রক্ষকে দুই ইনিংসে উইকেটের পিছনে দাড়াতে হয়। দুই ইনিংস উইকেটের পিছনে দাঁড়ানোর যেকোনো উইকেট রক্ষকের জন্য ব্যাটিং করা টা খুবই কষ্টকর। এর পরেও কিছু সংখ্যক উইকেট রক্ষক আছে যারা চতুর্থ ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছেন। তাদেরকে নিয়েই খেলা ৭১ এর আজকের এই আয়োজন।
- অ্যাডাম গিলক্রিস্ট (অস্ট্রেলিয়া)
পাকিস্তানের বিপক্ষে চতুর্থ ইনিংসে ৩৬৯ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নামে। এই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১২৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বসে অজিরা। শেষ ভরসা হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান উইকেট রক্ষক অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। আর আগে থেকে উইকেটে ছিলেন জ্যাস্টিন ল্যাঙ্গার।
ব্যাটিংয়ে নেমে দূর্দান্ত ব্যাটিং শুরু করেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। চোখ ধাঁধানো সব স্ট্রোক এবং ফ্লিক শট খেলে পাকিস্তানকে ম্যাচ থেকে ছিটকে যেতে শুরু করেন। অস্ট্রেলিয়া যখন জয় থেকে মাত্র পাঁচ রান দূরে তখন আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান জ্যাস্টিন ল্যাঙ্গার। আর দলকে জয় এনে দিয়ে ১৪৯ রানে অপরাজিত থেকে মাটহ ছাড়েন তিনি।
- মঈন খান (পাকিস্তান)
এটা ছিলো মঈন খানের সেরা একটি টেস্ট ইনিংস। কিন্তু টেস্টে ১১৭ রানের ইনিংস খেলার পথে বেশির ভাগ সময় সুযোগ্য সমর্থন পাননি তিনি। তবুও ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন তিনি।
শ্রীলংকা প্রথম ইনিংসে ব্যাট করে তুলেছিলো ২৩২ রান। জবাবে প্রথম ইনিংসে ২১৪ রানে থামে পাকিস্তানের ইনিংস। দ্বিতীয় ইনিংসে অর্জুনা রানাতুঙ্গা এবং হাশান তিলাকারাটের ইনিংসে দ্বিতীয় ইনিংসে শ্রীলংকার সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩৩৮ রান।
চতুর্থ ইনিংসে বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই হোচট খায় পাকিস্তান। প্রমোদ বিক্রমাসিংহে এবং চামিন্দা ভাসের বোলিং তোপে পড়ে পাকিস্তান। সেখান থেকে এক প্রান্ত আগলে রেখে ১১৭ রানে অপরাজিত থেকে পাকিস্তানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান মঈন খান।
- ঋষাভ পান্ত (ভারত)
ঋষাভ পান্তের চতুর্থ ইনিংসে এই সেঞ্চুরি ভারতকে জয় এনে দিতে পারে নাই। তবে জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করেছিলো। ৪৬৩ রান তাড়া করতে নেমে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদেরকে সুইং এবং বাউন্সের মুখোমুখি হতে হয়। আর এই কারণেই জয়ের বন্দরে ভিড়তে পারেনি ভারত।
ইংল্যান্ডের দেওয়া ৪৬৩ রানে ইনিংস তাড়া করতে নেমে লোকেশ রাহুল প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এক প্রান্তে লোকেশ রাহুল থাকলেও অপর প্রান্তে ব্যাটসম্যানরা যাওয়া আসার মধ্যে ছিলেন। এরপর ঋষাভ পান্তের সাথে বড় একটি জুটি গড়ে তোলেন। এই জুটি জয়ের আশা দেখাচ্ছিলো। কিন্তু ঋষাভ পান্তের ১১৪ রানে আদিল রশিদের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরার পর ভারতের কোনো ব্যাটসম্যান আর উইকেটে থাকতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ৩৬৫ রানে থামে ভারতের চতুর্থ ইনিংস।
- ম্যাট প্রায়র (ইংল্যান্ড)
এটি ছিলো ইংলিশ উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যানের নীরব এক প্রচেষ্টা। প্রথমে ব্যাট করে পিটার ফুলটন এবং কেন উইলিয়ামসনের ব্যাটে ভর করে নিউজিল্যান্ড সংগ্রহ করে ৪৪৩ রান। জবাবে প্রথম ইনিংসে তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে গিয়ে ২০৪ রানে অল আউট হয় ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় ইনিংসে পিটার ফুলটনের সেঞ্চুরিতে ৬ উইকেটে ২৪১ রান করে নিউজিল্যান্ড।
৪৮০ রানের বিশাল লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৯০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বসে ইংল্যান্ড। জনি বেয়ারস্টোর বিদায়ের পর ইয়ান বেলের সাথে ব্যাটিংয়ে আসেন ম্যাট প্রিয়র। এই জুটি কিউইদের বিপক্ষে বেশ ভালো খেলছিলো। কিন্তু ইয়ান বেল বিদায় নিলে ড্র করার আশাও ক্ষীন হয়ে আসে ইংলিশদের জন্য। বেলের বিদায়ের পর ম্যাচ বাঁচানোর চেষ্টা করেন প্রিয়র। শেষ পর্যন্ত ১৮২ বলে ১১০ রানে অপরাজিত থাকেন। কিন্তু ম্যচ জেতাতে পারেননি তিনি।
- অ্যালান নট (ইংল্যান্ড)
অ্যালান নটের দূর্দান্ত ইনিংসের পরও ম্যাচ জিততে ব্যর্থ হয়েছিলো ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা। প্রথম ইনিংসে প্রথমে ব্যাট করে ৩০৪ রান সংগ্রহ করে অস্ট্রেলিয়া। জবাবে প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ছিলো ১৭২ রান। বড় লিড পেয়ে ইংল্যান্ডের সামনে বিশাল লক্ষ্য দেয় অস্ট্রেলিয়া।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট হারাতে শুরু করে ইংল্যান্ড। এর মধ্যে ব্যতিক্রম হয়ে দাড়ান কেইথ ফ্লেচার এবং অ্যালান নট। তাঁরা বেশ ভালো একটি জুটি গড়লেও সেটা পর্যাপ্ত ছিলো না ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য। এর পর আর এক প্রান্ত আগলে রেখে ১০৬ রানের ইনিংস খেলেন অ্যালান নট। কিন্তু দলকে জয় এনে দিতে পারেননি।
- এবি ডি ভিলিয়ার্স (দক্ষিণ আফ্রিকা)
এবিডি চতুর্থ ইনিংসে দূর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে এক জয় এনে দেবার পথে ছিলেন। কিন্তু মাত্র ৭ রান দূরে থাকতেই আটকে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের নৌকা।
প্রথম ইনিংসে প্রথমে ব্যাটিং করে বিরাট কোহলির সেঞ্চুরিতে ভর করে ২৮০ রানের সংগ্রহ দাড় করায় এবি ডি ভিলিয়ার্স। প্রথম ইনিংসে গ্রায়েম স্মিথ এবং ভারনন ফিলান্ডারের ব্যাটে ভর করে ২৪৪ রানে অল আউট হয় দক্ষিণ আফ্রিকা।
দ্বিতীয় ইনিংসে বিরাট কোহলি এবং চেতেশ্বর পূজারার ব্যাটে ভর করে ৪২১ রানের সংগ্রহ পায় ভারত। এর ফলে চতুর্থ ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার লক্ষ্য দাঁড়ায় ৪৫৭ রান। এই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে আলভিরো পিটারসেন এবং গ্রায়েম স্মিথের ব্যাটে ভর করে দূর্দান্ত শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর মাঝে ফ্যাফ ডু প্লেসিস এবং এবি ডি ভিলিয়ার্সের সেঞ্চুরিতে জয়ের আশা দেখতে শুরু করে প্রোটিয়ারা। এবি ডি ভিলিয়ার্সের ১০৩ রান করা সত্ত্বেও ৭ রানে হেরে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
- মুশফিকুর রহিম (বাংলাদেশ)
বাংলাদেশ দলের আর একটি ব্যর্থতার গল্প। বল হাতে বেশ ভালো বোলিং করার পরও বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার পরও এগিয়ে যেতে পারেনি বাংলাদেশ দল। দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৮৭ ওভারে ৪১৩ রান সংগ্রহ করে ভারত। বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে টপ অর্ডার বেশ ভালোই করেছিলো। কিন্তু মিডল অর্ডার এবং লোয়ার মিডল অর্ডারের ব্যর্থতার পর আর আগাতে পারেনি বাংলাদেশ। সান্ত্বনা সূচক ভাবে শেষ চেষ্টা করেছিলেন উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান মুশফিক। তিনি চতুর্থ ইনিংসে করেছিলেন ১০১ রান।