বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) বিদেশি নামকরা খেলোয়াড়দের তেমন একটা দেখা যায় না। যারা আসেন তারা প্রত্যেকেই নিজেদের প্রাইম-টাইম পেরিয়ে যাওয়ার পর এসে যোগ দেন বিপিএলে। তাঁদের কাছ থেকে পারফরমেন্সও ঠিকঠাক মেলেনা। কাড়িকাড়ি অর্থের বিনিময়ে খেলতে এলেও যেন তাদের নিবেদনে থেকে যায় ঘাটতি।
আবার ঠিক তার ভিন্ন চিত্রের দেখা মেলে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) মঞ্চে। দুর্ধর্ষ সব পারফরমেন্সের মেলা সাজিয়ে হাজির হন ভিনদেশী ক্রিকেটাররাও। তাদের পারফরমেন্স যেমন বিনোদনের খোরাক মেটায়, তেমনি দলকেও জয়ের পথ দেখায়। মুহূর্তের মধ্যে ম্যাচের মোড় পালটে দেন খেলোয়াড়রা। যেটা বিপিএলে সচারচর দেখা মেলে না।
খালি চোখেই এই বৈপরীত্য ধরা পড়ে। তখন সাধারণভাবেই অর্থের পার্থক্য় সামনে আসে প্রাথমিক চিন্তায়। তবে অর্থ ছাপিয়ে আরও বেশকিছু ফ্যাক্টর কাজ করে। প্রথমত নির্ভরতার জায়গা। প্রতিটা খেলোয়াড় জানেন আইপিএলে আজকে ভাল করলে, কালকে তার পারিশ্রমিক বেড়ে যাবে বহুগুণে। বিপিএলের ক্ষেত্রে ঘটনাটা তেমন ঘটে না। কেননা এখানে যে ফ্রাঞ্চাইজিগুলোরই নেই কোন নিশ্চয়তা।
এবারের আসরে যে ফ্রাঞ্চাইজিটি রয়েছে আগামী আসরে সে ফ্রাঞ্চাইজি থাকবে কি-না তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। তাছাড়া স্যালারি স্ট্রাকচার নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা। প্রাপ্তির ঝামেলা কমলেও মৃদু শঙ্কা থেকেই যায় খেলোয়াড়দের মনে। সে কারণেও খেলোয়াড়রা ঠিক নিজেদের সর্বোচ্চটুকু নিঙড়ে দেওয়ার স্পৃহাটা পান না।
স্রেফ অর্থই প্রধান বিষয় নয়। বিপিএলে যে সকল খেলোয়াড়রা আসেন তারা স্বল্প সময়ের জন্যে আসেন। টুর্নামেন্টের মাঝ পথে হুট করে চলে যান অন্যত্র। তাদেরকে নিয়ে করা যায় না দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। তেমনটি অবশ্য আইপিএলে ঘটতে দেখা যায় না। আইপিএল খেলোয়াড়দের রদবদল হয় খুব অল্পই। টুর্নামেন্টের মাঝপথে অন্তত খেলোয়াড় যাওয়া-আসা করেন না। দলগুলোর পরিকল্পনা করতে সহজ হয়। সেই অনুযায়ী খেলোয়াড়রাও পারফরম করে থাকেন।
এছাড়াও বিপিএলের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়। বিপিএলে বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের প্রমাণের মঞ্চ। এখানে ভিনদেশীরা স্রেফ প্রতিযোগিতার মাত্রা বাড়াতেই আসেন। অন্যদিকে আইপিএলে নজর থাকে সকলের। এমনকি অধিকাংশ ক্রিকেট বোর্ড আইপিএল উইন্ডো-তে খেলোয়াড়দের ফ্রী রাখার চেষ্টা করে। যাতে করে তারা সেখানের প্রতিকূলতা সামলে পারফরম করবার দীক্ষাটুকু অর্জন করতে পারে। সে সাথে রেমিটেন্সের বিষয়টিও তো থেকেই যায়।
এছাড়া উইকেটের পার্থক্যও বেশ বড় প্রভাবই রাখে। যেহেতু বিপিএলে খেলোয়াড়রা আসা-যাওয়ার মাঝে থাকেন তারা উইকেট সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার সময় পান অল্পই। আর সেই অল্প সময়ে দুর্ধর্ষ পারফরমেন্স উপহার দেওয়া কঠিনই বটে। আর মিরপুরের উইকেটে দাঁড়িয়ে বিশাল সব রান করা তো অসম্ভব।
এই সব কারণে ভিনদেশী খেলোয়াড়দের মাঝে চাহিদা ও নিবেদনের ফারাকটা দেখা যায়। তারা আইপিএলের প্রায় প্রতি ম্যাচেই ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেন। কিন্তু বিপিএলে এসে মাঝারি মানের সব ইনিংসই যেন উপহার দেন। এখানে তারা হাজির হন প্রুভেন ক্রিকেটার হিসেবে। আর আইপিএলে প্রতিটি মৌসুমে টিকে থাকার লড়াই করতে হয়। এভাবেই পিছিয়ে যাচ্ছে বিপিএল।