১২০ বছরের অপেক্ষা শেষে অপরাজিত শিরোপা জয়

‘দ্য গোল্ডেন টাচ’ – যে স্পর্শে বদলে যায় সবকিছু, হয়ে যায় স্বর্ণের মত উজ্জ্বল আর বহুমূল্যবান। তেমন এক স্পর্শের অপেক্ষাতেই ছিল লেভারকুসেন শহরের বাসিন্দারা। সে স্পর্শ যে তাদেরকে ভাসিয়েছে আনন্দ ধারায়। বে-অ্যারেনায় হয়েছে সেই আনন্দের জলোচ্ছ্বাস। তাদের প্রতিনিধি হওয়া বেয়ার লেভারকুসেন ক্লাব যে ছিল এতকাল শিরোপা বঞ্চিত। সেজন্য উচ্ছ্বাসের উপলক্ষ হয়েছে খুব সামান্যই।

সেই ১৯০৪ সালে যাত্রা শুরু বেয়ার লেভারকুসেন নামক ক্লাবের। জার্মানির বিভিন্ন স্তরের ফুটবল পেরিয়ে বুন্দেসলিগার মূলপর্বে খেলেছে প্রায় নিয়ম করেই। তবে কখনো চ্যাম্পিয়ন হয়ে উঠতে পারেনি ক্লাবটি। চ্যাম্পিয়ন তো দূরে থাক, গেল মৌসুমে তো দ্বিতীয় স্তরে অবনতি হওয়ার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ছিল ক্লাবটি। এই তো মাত্র ১৮ মাস আগের গল্প ছিল সেটি।

টেবিলের তলানিতে ঘুরপাক খেয়েছে ক্লাবটি। তেমন এক মুহূর্তে ক্লাবের ডাগআউটে হাজির হয়েছিলেন জাবি আলোনসো। প্রথম স্তর থেকে অবনমনের শঙ্কায় থাকা দলের দায়িত্ব নিলেন। একটা দু:সাহস তিনি দেখালেন বটে। এমন একটা দলের দায়িত্ব নেওয়া তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। কোচিং ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে অন্তত বিশাল বড় এক ঝুকি তা।

কিন্তু জাবি ঝুঁকিকে ভালবেসে আপন করে নিলেন। তিনি জার্মান ক্লাবটিকে আপন করে নিলেন। তারপর থেকে কেমন একটা ঘুরে দাড়ানোর শুরু। আগের মৌসুমে রেলিগেট হতে যাওয়া দলটি বুন্দেসলিগা শেষ করে ষষ্ঠ স্থানে থেকে। ইউরোপা লিগে জায়গা করে নিতেও ভুল হয়নি দলটির।

তারপরের মৌসুমে এক রুপকথার জন্ম হল। যে রুপকথার কারিগর সেই জাবি আলোনসো। মাত্র ১৮ মাসের মধ্যে তিনি বদলে ফেললেন গোটা দলকে। তিনি শেখালেন দলগতভাবে কি করে করতে হয় পারফরম। তিনি দেখালেন কি করে তাবড় সব কোচদের কৌশলকে মাত দিতে হয়। সর্বোপরী তিনি গোটা দলকে শেখালেন হার না মানা মানসিকতা।

ফ্লোরিয়ান উইৎজ, প্যাট্রিক শিক, গ্যানিট জাকারা কি বুঝলেন কে জানে! তবে তারা যে ঠিক বুঝেছিলেন, সেটার প্রমাণই তো রেখেছেন গোটা যাত্রায়। এখনও অবধি অপরাজিত থেকে দলটি যে শিরোপা জয় করেছে সেই শিরোপা যে ছিল আরও এক দলের প্রায় নিজস্ব সম্পত্তি। প্রায় ১১ বছর ধরে বায়ার্ন মিউনিখ রেখেছিল দখলে। সেই রাজত্বের অবসান ঘটাতে অতিমানবীয় কিছুই করতে হতো।

সেটাই করেছে বায়ার লেভারকুসেন। পাঁচ ম্যাচ বাকি থাকতেই লিগ টাইটেল জয়ের উল্লাস করেছে ক্লাবটি। লিগের ২৯ ম্যাচের একটি ম্যাচও হারেনি জাবির দল। চার ম্যাচে পয়েন্ট ভাগাভাগি করতে হয়েছে। যে ম্যাচটার উপর ঝুলে ছিল শিরোপা ভাগ্য। ৫ গোলের ব্যবধানে জিতে নিয়েছে সেটিও। ম্যাচ শেষ হতে তখনও বাকি অনেকটা সময়। কিন্তু আনন্দের বাধ ভেঙে বে-অ্যারেনা ছয়লাভ। মাঠের প্রতিটি ঘাসে তখন পাগলাটে দর্শকদের পদচারণরা।

স্টেডিয়াম জুড়ে আনন্দ চিৎকার। খেলোয়াড়দের জাপ্টে ধরে অবিশ্বাস্য়ের চুম্বন এঁকে দিয়েছেন কয়েকজন। কোন ধরণের প্রতিবন্ধকতা আর মানুষের ঢলকে রাখতে পারেনি আটকে। এই উল্লাস করবে বলেই তো দীর্ঘকাল ধরে ছিল অপেক্ষায়। শত বছর ধরে যে দিনটির ছিল অপেক্ষা, সে দিনটি যে অবশেষে এসেছে। নিজেকে আটকে রাখা কি আর যায়!

নিজেদের আটকে রাখতে পারেননি বায়ার লেভারকুসেন ভক্তরা। ইতিহাসের পাতায় লেখা হয়ে গেছে এক নতুন অধ্যায়। এক নতুন দিনের শুরু। এই দিনগুলো লেভারকুসেনের দিন, এই দিনের জন্যেই ছিল অপেক্ষা। শেষ হয়েছে সে প্রহর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link