বেশ একটা কঠিন সিদ্ধান্তই নিয়েছেন উসমান খান। সংযুক্ত আরব আমিরাত জাতীয় ক্রিকেট দল ছেড়ে পাকিস্তানের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সিদ্ধান্ত। সে সিদ্ধান্ত যে তার জন্যে কাল হয়ে দাড়াতে পারে সেটা সম্ভবত বুঝে উঠতে পারেননি উসমান খান।
পাকিস্তানের জার্সি গায়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক হয়েছে উসমান খানের। ইতোমধ্যেই দু’টো ম্যাচ খেলেছেন, একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে বৃষ্টির কারণে। উসমান পাকিস্তানের হয়ে খেলতে আমিরাত দল ছেড়েছেন এমন খবর যখন চাওড় হয়েছে, তখন অধিকাংশই মানুষই ভেবেছিলেন তিনি হয়ত পাকিস্তান দলে সুযোগ পাবেন না।
সে শঙ্কা অবশ্য বাস্তব হয়নি। পাকিস্তানের জার্সিতে খেলার সুযোগ তিনি পেয়েছেন। তবে সে সুযোগ তার জন্যে কতটুকু ফলপ্রসূ হয়েছে, সে প্রশ্ন কিন্তু চাইলেই তোলা যায়। কেননা দুই ম্যাচে ব্যাট চালিয়েছেন উসমান খান। সেই দুই ম্যাচে বলার মত কিছুই করতে পারেননি। দুই ম্যাচ মিলিয়ে মোট ১১ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে, বল খরচ করেছেন ১২ বল।
অথচ মারকুটে ব্যাটার বলেই পাকিস্তানের হয়ে খেলার প্রস্তাব পেয়েছিলেন তিনি। সমস্যা হচ্ছে ডানহাতি এই ব্যাটার নিজের পছন্দসই ব্যাটিং পজিশনে ব্যাট করতে পারছেন না। সাধারণত তিনি ব্যাট করে থাকেন টপ অর্ডারে। ১-৩ নম্বর পজিশনের মধ্যেই ব্যাট করে সফলতার দেখা পেয়েছেন তিনি।
টপ অর্ডারে ব্যাট করা ২৩ ইনিংসে তার রান ৯৩৩। চোখ ধাঁধানো গড় তার টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে। প্রায় ৪৯ গড়ে তিনি রান করেছেন। স্ট্রাইকরেট আরও দুর্ধর্ষ। টপ অর্ডারে ১৫৯.৭৬ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করতে সক্ষম তিনি। পাকিস্তানের প্রেক্ষাপটে যা বেশ প্রয়োজনীয়। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে শীর্ষ তিন ব্যাটিং পজিশনে ব্যাট করে ৪টি সেঞ্চুরিও করেছেন উসমান।
অথচ পাকিস্তান দলে তাকে খেলতে হচ্ছে নম্বর চার পজিশনে। দু’টো ম্যাচে মিডল অর্ডারের শুরু হয়েছে উসমানের হাত ধরে। ততক্ষণে ম্যাচের দৈর্ঘ্য গড়িয়ে গেছে অনেকখানি। সেই পরিস্থিতির সাথে খুব একটা মানিয়ে নিতে পারেননি উসমান কখনোই। টপ অর্ডারের বাইরে ১২টি ম্যাচে ব্যাট করেছেন উসমান। সে ১২ ম্যাচে তার ব্যাটিং গড় নেমেছে ২১.৭২ এ। স্ট্রাইকরেট যাচ্ছেতাই ১১৬ এর একটু বেশি।
পাকিস্তানের জার্সিতেও সেই ধারাই অব্যাহত রইলো। উসমান ফ্লপ করবে এমন এক আলোচনা শুরু করার সময় এখনো হয়ে ওঠেনি। তবে সমস্যা হচ্ছে পাকিস্তানের টপ অর্ডারে উসমানের ব্যাট করতে পারার সম্ভবনা যে একেবারে নেই বললেই চলে। কেননা সাইম আইয়ুবের সংযুক্তির পর টি-টোয়েন্টি মোহাম্মদ রিজওয়ান তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে ব্যাট করতে নামেন।
ফখর জামান ফিরলে হয়ত উসমানকে ঠেলে মিডল অর্ডারের আরও ভেতরের দিকেই পাঠানো হবে। সেসব বিবেচনায় যে বিশাল এক ঝুঁকি নিয়ে ফেলেছেন উসমান খান- তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কেননা এখন চাইলেও আরব আমিরাত দলে ফিরতে পারবেন না উসমান। লম্বা সময়ের জন্যে আরব আমিরাত ক্রিকেট বোর্ড তাকে নিষিদ্ধ করেছে। দেশটির কোন পর্যায়ের ক্রিকেটেই আর খেলতে পারবেন না উসমান।
এখন উসমানের সামনে একটি পথই খোলা রয়েছে মানিয়ে নেওয়া। তিনি হয়ত সে চেষ্টাই করবেন। তবে মানিয়ে নিতে না পারলে যে তিনি তলিয়ে যাবেন চোরাবালিতে- সে কথা আর বলে দিতে হয় না। উসমান যেন রীতিমত নিজের জন্যে খাল কেটে কুমিড়ই ডেকে এনেছেন।