জিম্বাবুয়ের ক্যাম্পবেলদের সাথে বাংলাদেশের চিরকালীন সম্পর্ক

সময়টা তখন ১৯৯৯, বিংশ শতাব্দীর প্রায় শেষের দিকে। বাংলাদেশ তখন সবে মাত্রা গুটি গুটি পায়ে ক্রিকেটের দুনিয়াতে রাখছে পা। জিম্বাবুয়ের এখন যেমন দশা, তখন অন্তত ছিল না তেমন। একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকটাতেও জিম্বাবুয়ের কাছে ধরাশায়ী হয়েছে বাংলাদেশ।

তেমনই এক দিন ছিল ২৫ মার্চ। মেরিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট টুর্নামেন্টের একটি ম্যাচ। তখন বাংলাদেশের ক্রিকেটের ঘরবাড়ি বর্তমান বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম। জিম্বাবুয়ের সেই দলটার নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল।

সেদিন অবশ্য নেতৃত্ব দিয়েই ক্ষান্ত থাকেননি। দক্ষ নাবিকের মত জয়ের বন্দরে দলের তরী ভিড়িয়েছেন। ব্যাট হাতে খেলেছিলেন ৯৭ রানের এক ঝকঝকে ইনিংস। বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজের প্রথম সেঞ্চুরিটা সেদিনই পেয়ে যেতে পারতেন। তবে রানআউট কাটা পড়ে সেদিনের মত সেঞ্চুরি বঞ্চিত হন অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল।

ঢাকার মাটিতে সেঞ্চুরি করতে না পারলেও অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল হারারের মাটিতে ঠিকই সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে সেটি ছিল তার দ্বিতীয় সর্বশেষ ইনিংস। হারারেতে সেবার ১০৩ রানে ক্যাচ আউট হয়েছিলেন অ্যালিস্টার। ২০০১ সালের সে ম্যাচটিও বাংলাদেশ হেরেছিল, তাও আবার বড় ব্যবধানে। সেদিন অবশ্য অধিনায়ক ছিলেন না অ্যালিস্টার, ছিলেন ওপেনার।

বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই ফরম্যাটেই মাঠে নামার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। মোট মিলিয়ে ১০ ইনিংস ব্যাট করেছেন টাইগারদের বিপক্ষে। হারারের একটি ইনিংসে শতক, ঢাকার একটি ইনিংসে ৯৭ ছাড়াও আরও দুইটি অর্ধশত রানের বেশি ইনিংস খেলেছেন তিনি। সবমিলিয়ে ৪২১ রান করেছেন তিনি বাংলাদেশের বিপক্ষে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার নামের পাশে প্রায় ৮ হাজার রান রয়েছে।

জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটের এক ‘কাল্ট ক্যারেক্টার’ তিনি। এতক্ষণে ধরে চলেছে অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলের আলাপ। নিশ্চয়ই খানিকটা বিস্ময় জেগেছে। হুট করে কেন ক্যাম্পবেল বর্ণনা! পেছনে অবশ্য একটা দারুণ কারণ রয়েছে। দুই প্রজন্মের একটা মেলবন্ধনের গল্প।

মে মাসের শুরুর দিকে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে জিম্বাবুয়ে। সেই সিরিজ উপলক্ষে ১৫ সদস্যে দলও ঘোষণা করেছে দেশটির ক্রিকেট বোর্ড। সেই দলে জায়গা পেয়েছেন জনাথন ক্যাম্পবেল। এখনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার অভিষেক ঘটেনি। বাংলাদেশের বিপক্ষেই হয়ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের যাত্রা শুরু করবেন জনাথন।

এই জনাথন ক্যাম্পবেল সেই অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলের পুত্র। বাংলাদেশ ক্রিকেটের শুরুর দিকের স্মৃতিতে জড়িয়ে থাকা ক্যাম্পবেল পরিবারের নতুন এক শুরুতে জড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট। বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করবার চাপ ছাপিয়ে নিশ্চয়ই  দারুণ রোমাঞ্চিত জনাথন ক্যাম্পবেল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া যে কারো জন্যেই যে ভীষণ আবেগের।

বাবা ছিলেন একজন পুরোদস্তুর ব্যাটার। আর ছেলে একজন অলরাউন্ডার। লেগব্রেক বোলিংয়ের পাশাপাশি বা-হাতে ব্যাটটাও চালাতে জানেন জনাথন। তিনি এখন স্রেফ নিজের প্রাপ্ত সময়কেই কাজে লাগাতে চাইবেন। বাবার মতই হয়ত সুখস্মৃতি জরো করতে চাইবেন। বাংলাদেশের বিপক্ষেই নিজের বিস্তৃতির শুরুটা করতে চাইবেন। বাবার মতই এক রঙিন অধ্যায় লেখার অপেক্ষার এখন জনাথনের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link