Social Media

Light
Dark

সাঈদ আনোয়ার, ঘায়েল সিংহের কীর্তি

ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ মানেই ইতিহাসের অন্যতম উত্তেজনাকর লড়াই। ভারত-পাকিস্তানের লড়াই মানেই দম্ভ আর অহংকারের লড়াই। দুই দেশের রাজনৈতিক দ্বৈরথটা মাঠ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে। কেউ যেন কাউকে ছাড় দেবে না, কানায় কানায় দর্শকপূর্ণ স্টেডিয়াম আর মাঠে দুই দলের আধিপত্য বিস্তারের লড়াই।

সেই আদি কাল থেকে চলা এই দ্বৈরথ এখনো বজায় রয়েছে। তবে রাজনৈতিক অবস্থা দুই দেশের মধ্যে আগের চেয়ে এতটাই খারাপ যে এখন দ্বি-পাক্ষিক সিরিজটা যেন স্বপ্নই।

এমনি একদিন আধিপত্য দেখানোর লড়াইয়ে তপ্ত গরমে স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শকের সামনে পাকিস্তান ওপেনার সাইদ আনোয়ার খেললেন এক মহাকাব্যিক ইনিংস। সেদিন ভারতের মাটিতে ভারতকেই মাথা তুলে দাঁড়াতে দেননি এই মানুষটি। ইনজুরি নিয়েও ঘায়েল সিংহের মত ভারতীয় বোলারদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি! যেন তিনি এক ঘায়েল অজেয় যোদ্ধা! এমন না – তেমন ইনিংস এর আগে পরে কেউ খেলেননি – তবে সাঈদ আনোয়ারের সেই মহাকাব্যের মোহনীয়তা আজও অমর।

নিজে দৌঁড়াতে না পারলেও শহীদ আফ্রিদির পায়ে ভর দিয়ে রান টুকে নিয়েছিলেন নিজের নামের পাশেই। সেদিন দিনের আলোয় নিজের ব্যাটকে অস্ত্র বানিয়ে যুদ্ধ জয় করে নিজের নামকে আলোকিত করেছিলেন তিনি।

দিনটা ছিল ২১ মে। ১৯৯৭ সাল। চেন্নাইয়ের চিপাকে ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপে ভারত-পাকিস্তানের লড়াই। বলার অপেক্ষাই রাখে না  গ্যালারিতে তিল ধারণের জায়গাটুকু নেই। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামে পাকিস্তান। ওপেনিংয়ে শহীদ আফ্রিদির সাথে ছিলেন সেদিনের সেই বীর সাইদ আনোয়ার।

দলীয় ৮ রানেই শহীদ আফ্রিদিকে মাত্র ৫ রানেই ফেরান আবে কুরুভিলা। এরপর রমিজ রাজাকে নিয়ে জুটি বাধেন সাইদ আনোয়ার। দু’জনে মিলে দ্বিতীয় উইকেটে জুড়ে দেন ৮৯ রান। দলীয় ৭৫ রানেই সাইদ ৪৩ বলে তুলে নেন ব্যক্তিগত ফিফটি।এরপর দলীয় ৯৭ রানে ৫১ বল খেলে মোটে ২২ রান করে আউট হন অধিনায়ক রমিজ রাজা।

একপ্রান্তে ব্যাট হাতে শুরু থেকে রানের চাকা সচল রাখেন সাইদ আনোয়ার। দলীয় ১৮.৪ ওভারের সময় হঠাৎ পায়ের ব্যাথায় মাঠে ফিজিও ডাকেন সাইদ! এরপরই দেখা যায় ব্যাট-প্যাড নিয়ে মাঠে প্রবেশ করছেন শহীদ আফ্রিদি। মানে পায়ের ব্যাথায় দৌড়াতে পারবেন না সাইদ, তাই রানার হিসেবে শহীদ আফ্রিদি নেমেছেন।

বাকি পথটা এই আফ্রিদির পায়ে ভর দিয়েই চেন্নাইর বুকে ব্যাটিং তাণ্ডব চালান সাইদ। আর সেটার পথেই সাইদ আনোয়ার তুলে নেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি। দলীয় ১৪৩ রানেই নিজের ব্যক্তিগত সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। ৮২ বলে ২ ছক্কা ও ১২ চারে তিনি সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। ইজাজ আহমেদের সাথে ৩য় উইকেটে গড়েন ১১৬ রানের জুটি!

এরপর দলীয় ২১৩ রানে ইজাজ আহমেদ ৩৯ রান করে ফিরলে একপ্রান্তে রান তুলতে ব্যস্ত সাইদ তখনো ঠায় দাঁড়িয়ে। এরপর দলীয় ৪১ তম ওভারে অনিল কুম্বলের বলে লং অনে জোসির ক্যাচ মিসে ছক্কা হলে সাইদ আনোয়ার দেড়শো পূর্ণ করেন! ওই ক্যাচ মিসের পরের দুই বলে আরো দুই ছক্কা হাঁকান সাইদ। কুম্বলের ওই ওভার থেকে তিনি ২৪ রান আদায় করেন।

দলীয় ৪৭ তম ওভারে স্যার ভিভ রিচার্ডসের করা ১৮৯ রানের রেকর্ড টপকে ১৯০ রান করে ওয়ানডেতে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েন। শচীনের সেই ওভারে আরেকটি চার মেরে তিনি ১৯৪ রানে পৌঁছে যান! ওয়ানডে ইতিহাসের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৬ রান দূরে!

শচীন টেন্ডুলকারের করা বলে লেগ সাইডে বাউন্ডারি মারতে গিয়ে বল বেশ উপরে উঠে যায় আর দুর্দান্ত এক ক্যাচ ধরেন সৌরভ গাঙ্গুলি। মুহূর্তেই নিভে যায় সাইদ আনোয়ারের সেই মহাকাব্যিক ইনিংস। ২২ চার ও ৫ ছক্কায় ১৯৪ রানে আউট হন তিনি।

তার ১৯৪ রানে ভর করে পাকিস্তান সেদিন ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ৩২৭ রান সংগ্রহ করে। সেদিন ইনিংসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ছিল ৩৯। করেছিলেন দু’জন – ইনজামাম উল হক ও ইজাজ আহমেদ।

জবাবে ব্যাট করতে নেমে রাহুল দ্রাবিড়ের সেঞ্চুরির পরেও আকিব জাবেদের বোলিং তোপে ২৯২ রানে অল আউট হয় ভার‍ত। আকিব জাবেদ ৬১ রানে নেন ৫ উইকেট অপরদিকে, রাহুল দ্রাবিড় করেন ১০৭ রান।

১৯৮৯ সালে ইংল্যান্ডের ওল্ড ট্রাফোর্ডে স্যার ভিভ রিচার্ডসের করা ১৮৯ রানের ৮ বছরের রেকর্ড ভেঙে সাইদ আনোয়ার নতুন রেকর্ড গড়েন ১৯৪ রানের। সেই রেকর্ড স্থায়ী হয়েছিল ১২ বছর। ২০০৯ সালে বুলাওয়েতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৯৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে সেই রেকর্ডে ভাগ বসান চার্লস কভেন্ট্রি। ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে ইতিহাসের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করে সেই ১৯৪ রানের রেকর্ড ভেঙে দেন শচীন টেন্ডুলকার।

এরপর আর অসংখ্য ডাবল সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছে ক্রিকেট বিশ্ব। কিন্তু, সাঈদ আনোয়ারের সেই ইনিংসের আবেদন আজও আছে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link