শেষ বাশি বেজে উঠল। হলুদিয়া পাখির দল ছুটে গেল একটা কোণার দিকে। দূর প্রবাশে এক চিলতে গ্যালারি ছিল বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডের ঘরবাড়ি। সবচেয়ে আনন্দের দিনটা তো ঘরের লোকদের সাথেই উদযাপন করতে হয়। প্যারিস সেইন্ট জার্মেইকে হারানোর পর তাইতো দর্শকদের সাথেই উদযাপন করেছেন মার্কো রয়েসরা।
প্রায় এক যুগের আগের কথা। ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১২-১৩ মৌসুমের উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল। আবারও যখন সেই ইংল্যান্ডের ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম তৈরি, ঠিক তখন ফাইনালের রাস্তাটা খুঁজে নিয়েছে জার্মান ক্লাবটি।
মাঝের সময়টা নিদারুণ কষ্টে কেটেছে। বায়ার্ন মিউনিখের কাছে সেবার শিরোপা হারের পর সেমিফাইনালও যেন আকাশ-কুসুম স্বপ্নে পরিণত হয়েছিল। তবে সেই স্বপ্নকে ছাপিয়ে যাওয়ার আশা জুগিয়েছেন এডিন টার্জিচ। জার্মান এই কোচের হাত ধরেই তো নবউত্থানের পথে অগ্রসর হয়েছে সেই হলুদিয়া পাখির দল।
ফ্রান্সের পার্ক দে প্রিন্সেসে হতাশায় ভাসিয়েছে পিএসজি সমর্থকদের। আরও একবার ট্র্যাজিক হিরো হয়েই প্রস্থান ঘটেছে কিলিয়ান এমবাপ্পের। তাকে আরও একটিবার নিরাশ করবার সম্পূর্ণ দায়িত্বটা তুলে নিয়েছিল বুরুশিয়ার রক্ষণভাগ। সামনে থেকে যার নেতৃত্ব দিয়েছেন ম্যাটস হামেলস। ওই যে জয়ের ফারাক করে দেওয়া একটি গোল, সেটিও তিনিই করেছেন।
জার্মান এই ডিফেন্ডার যেন এদিন পণ করে নেমেছিলেন- যা কিছু হয় হোক, তিনি জয় নিয়েই ছাড়বেন মাঠ, তাকিয়ে দেখবে প্যারিসের লোক। দৃঢ় সেই প্রতিজ্ঞায় সমর্থন জুগিয়েছে পার্ক দে প্রিন্সেসের গোলবারও। তিন তিন বার প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ের শট রুখে দিয়েছে সেই তিনকাঠি। ডর্টমুন্ডের চীনের প্রাচীরে মাঝে মধ্যেই চিড় ধরেছিল। কিন্তু সেই চিড়ের মাঝে ইস্পাতের প্রলেপ হয়ে দাঁড়িয়েছিল গোলবার।
কিলিয়ান এমবাপ্পে, ওসমান ডেম্বেলেরা আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন। গ্রেগর কোবেলকে বোকা বানিয়ে বল জালে জড়াতে চেয়েছে পুরোটা ম্যাচ জুড়েই। ৩০ খানা শট চালিয়েও হলুদ রাঙা রক্ষণ যায়নি ভাঙা। অসহায় কিলিয়ান শেষতক এক অবিশ্বাসের হাসিই হেসেছেন। আর তিনি হয়ত মনে মনে বলেছেন প্রকৃতি একদিন না একদিন বিচার করেই।
এই তো বছর চারেক আগের কথা, সেবারও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নকআউট পর্বে মুখোমুখি হয়েছিল ডর্টমুন্ড ও পিএসজি। তবে সেবার ঘরের মাঠে জয়ই পেয়েছিল প্যারিসের দলটি। আর খানিকটা বিদ্রুপ করেই উদযাপন করেছিল গোটা দল। তরুণ আর্লিং হাল্যান্ডকে উপহাসের চিত্রই তারা ফুটিয়ে তুলেছিল।
সেই দিনটির প্রতিশোধ অবশেষে নিতে পেরেছে ডর্টমুন্ড। তবে এবার তারা উপহাস করেনি, এবার তারা বিদ্রুপ করেনি। তারা স্রেফ তাদের সমর্থকদের সাথে উদযাপন করেছে দিনটি। যে সমর্থকরা দিনের পর দিন অকুণ্ঠ সমর্থন জুগিয়েছে, যে সমর্থকরা সফলতা না পেয়েও চুপস যায়নি, যে সমর্থকরা ইদুনা পার্ককে হলুদ আভায় রাঙিয়ে তোলে, জয়-পরাজয় ছাপিয়ে আকাশ-বাতাস কাপিয়ে তোলে, এ আনন্দ তো তাদের, এ আনন্দে উল্লাস করা তো তাদেরই মানায়।