একদিন ২০০’র দিন

ডাবল সেঞ্চুরি তো আজকাল ওয়ানডেতেও ডাল-ভাত হয়ে গেছে। এক রোহিত শর্মাই তিনটf করে ফেলেছেন। কিন্তু এক দশক আগেও চিত্রটা এমন ছিলো না। তখনও ওয়ানডে ক্রিকেট ডাবল সেঞ্চুরি দেখেনি।

২০১০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি সেই প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিটা করেছিলেন শচীন টেন্ডুলকার। তবে এই দিনে আরও তিনটি ঐতিহাসিক ডাবল সেঞ্চুরি হয়েছে। এই দিনে গেইল করেছিলেন আরেকটি ওয়ানডে ডাবল। আর মুশফিকুর রহিম টেস্টে রেকর্ড গড়া এক সেঞ্চুরি করেছিলেন। মহেন্দ্র সিং ধোনির নামও আছে তাঁদের সাথে। সব মিলিয়ে দিনটা যেনো ডাবল সেঞ্চুরির দিন।

ক্রিকেটের ইতিহাসে ‘২৪ ফেব্রুয়ারি’ যেন ব্যাটসম্যানদের শ্রেষ্ঠত্বই ঘোষণা করে। বিভিন্ন সময়ে হলেও একই দিনে চারটা ডাবল সেঞ্চুরি মুখের কথা নয়।

  • ২০১০: শচীনের প্রথম, ওয়ানডের প্রথম

ক্রিকেটের প্রায় সব রেকর্ডের অগ্রভাগে থাকবেন শচীন রমেশ টেন্ডুলকার, এটাই স্বাভাবিক। ২০১০ সালের আজকের এই দিনে গোয়ালিওরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডেতে নিজের প্রথম দ্বি-শতকের পাশাপাশি ওয়ানডে ইতিহাসের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকান শচীন টেন্ডুলকার।

এই দ্বিশতক গড়ার পথে তিনি ভাঙেন সাঈদ আনোয়ার এবং চার্লস কভেন্ট্রির (জিম্বাবুয়ে) ওয়ানডে ক্রিকেটে রেকর্ড ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৯৪ রানের ইনিংস। এই রেকর্ড প্রায় ১৩ বছর ধরে অক্ষুন্ন অবস্থায় ছিলো। শচীনের এই রেকর্ড ভাঙ্গতে সময় লেগেছিলো মাত্র দুই বছর। তারই জাতীয় দল সতীর্থ বিরেন্দর শেবাগ এই রেকর্ড ভাঙ্গেন এবং নতুন ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড তৈরি করেন ২১৯ রানের। শচীনের এই দ্বি শতকের পর ১০ বছরে ওয়ানডে ক্রিকেটে আরো ৬টি দ্বি শতক দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব। এর মধ্যে তিনটিই করেছেন ভারতের হার্ড হিটার ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মা।

  • ২০১৫: এবার গেইল

শচীনের ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানোর ঠিক ৫ বছর পরে একই দিনে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকান ক্রিস হেনরি গেইল। ২০১৫ বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই রেকর্ড গড়েন গেইল। এই ম্যাচে প্রথম বলেই প্যাভিলিয়নের ফিরতে পারতেন ক্রিস গেইল। তবে জিম্বাবুয়ের আপিলে আম্পায়ার সাড়া না দেয়ায় ক্রিজে থেকে যান গেইল।

ওয়ানডে বিশ্বকাপের ইতিহাসের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকান গেইল। এরপর একই বিশ্বকাপে দ্বি-শতক করেন নিউজিল্যান্ডের মার্টিন গাপটিল। গেইলের এই রকম বিস্ফোরক ব্যাটিং দেখে অভ্যস্ত সবাই। তাই তাঁর কাছ থেকে একটি  দ্বি-শতক আশা করাই যেত। গেইল তাঁর ১০০ রান পূর্ণ করতে বল খেলেন ১০৫ টি। পরের ৫০ রান করতে বল খরচ করেন মাত্র ২১ টি। ১৫০ থেকে ২০০ রানে পৌছাতে বল খেলেন মাত্র ১২ টি। এতেই বোঝা যায় শতরানের পর কতটা চড়াও হয়েছিলেন জিম্বাবুইয়ান বোলারদের উপর। এই ম্যাচে মাত্র ৫৯ টি ডট বল খেলেছেন গেইল।

  • ২০১৩: ধোনির একমাত্র

এদিন মহেন্দ্র সিং ধোনি নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম ও একমাত্র ডাবল সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন। ইনিংসটা শুধু ডাবল সেঞ্চুরির বিবেচনায় নয়, পরিস্থিতি বিবেচনাতেও খুবই জরুরী। অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ৩৮০ রানের জববে চেতেশ্বর পূজারা আর শচীন টেন্ডুলকার ফিরে গেলে চাপে পড়ে যায় ভারত। আর তখনই ধোনি ব্যাট হাতে নেমে পড়েন। ২৬৫ বলে ২২৪ রান করে ভারতকে ৫৭২ রানের বড় সংগ্রহ এনে দেন তিনি। শেষ অবধি ভারত ম্যাচটা জিতে আট উইকেটে।

  • ২০২০: মুশফিকের দিন

এই একই দিনে ২০২০ সালে টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি হাকান মুশফিকুর রহিম। ২০২০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে মিরপুরে ক্যারিয়ারে তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকান মুশফিকুর রহিম। মুশফিকের এই ডাবল সেঞ্চুরির কল্যাণে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সহজেই জয় পায় বাংলাদেশ।

এই ডাবল সেঞ্চুরিটার কৃতিত্ব অন্য জায়গায়। এটা ছিল তাঁর তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরি। এর আগে কোনো উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান একাধিক ডাবল সেঞ্চুরিও করতে পারেননি। এই রেকর্ডটা শুনলে অনেকে অবশ্য চমকে ওঠেন। কারণ, কুমার সাঙ্গাকারার তো অনেকগুলো ডাবল সেঞ্চুরি আছে। মজা হলো, এর মধ্যে একটি মাত্র ডাবল সাঙ্গাকারা উইকেটরক্ষক থাকা অবস্থায় করেছেন। বাকি সবগুলো কিপিং ছেড়ে দেওয়ার পর করা।

 

লেখক পরিচিতি

খেলাকে ভালোবেসে কি-বোর্ডেই ঝড় তুলি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link