অফফর্মের যাতাকলে পিষ্ট হচ্ছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। সেই দুর্বিষহ দিন থেকে ফিরে আসলেন বটে। কিন্তু একরাশ হতাশাই সঙ্গী হল তার। এদফা আর লেখা হল না কোন এক মহাকাব্য। হওয়া হল না তার কোন এক গ্রিক পুরাণের নায়ক। পরাজিত সৈনিকের দলে তিনি ফিরলেন মাথানত করেই।
মাত্র ১৪৯ রানের টার্গেট। অস্ট্রেলিয়ার আগ্রাসনের সামনে এটা নেয়াহেত মামুলি হওয়ার কথা। কিন্তু হয়েছে উলটো। আফগান বোলারদের ক্রমাগত আক্রমণে দিশেহারা অজিরা। উইকেটে টিকে থাকাই যেন দায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবুও ম্যাক্সওয়েল গড়লেন প্রতিরোধ। তিনি যেন আফগানিস্তানের মনে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন ভয়।
২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের কথা এতদ্রুতই তো ভুলে যাওয়ার নয়। সেদিন একা ম্যাক্সওয়েল ধূলিসাৎ করেছিলেন আফগান রুপকথার সকল রসদ। বিশ্বকাপের মঞ্চে ২০০ রানের এক হার না মানা ইনিংস খেলে অজিদের নিয়ে গিয়েছিলেন জয়ের বন্দরে। মাংশপেশির টানকে উপেক্ষা করেই সেদিন এক ভয়ার্ত চিত্র এঁকে দিয়েছিলেন তিনি আফগানদের মনে।
২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও প্রায় একই কাজ করতে চলেছিলেন তিনি। পুরো টুর্নামেন্ট ধরে যার ছিল না কোন সারাশব্দ, তিনিই জ্বলে উঠলেন। আফগানিস্তানের বোলারদের বাউন্ডারি ছাড়া করলেন। দলের উপর আসা চাপকে প্রশমিত করলেন। ব্যক্তিগত অর্ধশতক তুলে দিলেন। আরেকবার নায়ক হওয়ার মঞ্চ তৈরি ছিল ম্যাক্সওয়েলের জন্যে।
কিন্তু সেটি হতে দেননি গুলবাদিন নাইব। তার ছোড়া বলেই যে কুপকাত হয়েছেন ম্যাক্সওয়েল। অবশ্য গুলবাদিনের উইকেট প্রাপ্তির সিংহভাগ কৃতীত্ব তরুণ নুর আহমেদের প্রাপ্য। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে দূর্দান্ত এক ক্যাচ লুফে নিয়েছিলেন নুর। যার কল্যাণে ৫৯ রান করা ম্যাক্সওয়েল ফেরেন প্যাভিলিয়নে।
সেখান থেকে সূর্যদয়ের আভা হয়ে চোখে ভাসতে থাকে আফগান রুপকথা। পাহাড়ের পাদদেশে বারুদের গন্ধ এখনও হয়ত পাওয়া যায়। সেখানে আনন্দের জলধারা ছুটে চলার উপক্রম। শেষ অবধি হয়েছেও তাই। আফগানরা করেছে অজি বধ। ২১ রানের একটা জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে রশিদ খানের দল।
ম্যাক্সওয়েলের সকল প্রচেষ্টার ধানে মই দিয়ে আফগানিস্তান ছুটেছে স্বপ্নের পাণে। আরেকটু দূর এগুলেই যে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল। সে পথের মাঝে একমাত্র বাঁধা বাংলাদেশ। তাদেরকে উড়িয়ে দেওয়া উজ্জীবিত আফগানদের জন্যে বিশাল কিছু নয় নিশ্চয়ই।