দুই নৌকায় যখন পা রাখবেন, তখন একটা ফঁসকে যাওয়ার শঙ্কা থাকবেই। তা আপনি যতই বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হন না কেন। সর্বশেষ দুই নৌকায় পা দিয়ে একই ভাবে নিজের পতন ডেকে এনেছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। এবার সেই একই হতাশা বরণ করতে হচ্ছে সাকিব আল হাসানকেও।
মাঠের রাজনীতি আর মাঠের ক্রিকেট – দুটো ভিন্ন ব্যাপার। দু’টোর জন্য আলাদা স্কিল দরকার, দুটোর জন্য দরকার আলাদা সময়। আর দু’টোই খুবই জরুরী। একটাকে ছাড় দিয়ে আরেকটা হবে না, কোনো ভাবেই না।
মাশরাফির এই ব্যাপারটা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) বুঝতে পেরেছিল একটু দেরিতে। যার ফলশ্রুতিতে ২০১৯ বিশ্বকাপে নিজেদের ইতিহাসের সেরা সুযোগ হাতছাড়া হয় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের। সাকিবের ক্ষেত্রেও বিষয়টা তাই।
তবে, একই সাথে এটাও ঠিক মাশরাফির চেয়ে সাকিবের ক্ষেত্রে বিসিবি সময় পেয়েছে অনেক বেশি। সাকিব অনেক দিন ধরেই জাতীয় দলে ‘যাওয়া আসার মধ্যে’ আছেন। তাঁর ইচ্ছা হলে তিনি খেলেন, না ইচ্ছা হলে খেলেন না। সাকিবের ক্ষেত্রে ববাবরই বিসিবি বাড়তি ছাড় দিয়ে এসেছে।
কিন্তু, বাস্তবতা হল – সাকিব আইসিসি ইভেন্টে বা বড় কোনো আসরে বাংলাদেশকে বড় কোনো সাফল্যের ধারের কাছেও পৌঁছে দিতে পারেননি। ২০১৯ সালে তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। যদিও, বাকিদের নীরবতায় সাকিবের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এর বাদে আইসিসি ইভেন্টে সাকিব যা করেছেন, তাতে কেবল তাঁর নিজের অর্জনের পাল্লাই ভারি হয়েছে, তিনি র্যাংকিংয়ে ওপরের দিকে উঠেছেন, আদতে বাংলাদেশের কোনো লাভ হয়নি।
আর বর্তমান প্রেক্ষাপট সাকিবের দলের প্রতি সততা, দলের প্রতি নিবেদন নিয়েও প্রশ্ন ওঠায়। তিনি চোখের সমস্যা মারাত্মক আকার নিয়েছে। নেটে নিয়মিত তিনি নেক ব্রেস পরে ব্যাটিং করেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শতভাগ ফিট না হয়ে কোনো খেলোয়াড় যখন খেলতে নামে – তখন সেটা দলের প্রতি চরম বেইমানী। এই কথাটা তো সাকিব নিজেই বলেছেন, তাহলে কি সাকিব এখন নিজেকে বেইমান বলেই জাহির করতে চাইছেন?
সাকিবের এখন ক্রিকেট ক্যারিয়ার থেকে পাওয়ার তেমন আর কিছু নেই। সাকিব কি চান তিনিই ভাল জানেন, হয়তো তিনি আগামী বছরের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলার স্বপ্ন দেখছেন। কিংবা বছর তিনেক বাদের বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্নও দেখতে পারেন। কিন্তু, সৎ হয়ে ভাবলে সাকিবের আদৌ কি সেই স্বপ্ন দেখা উচিৎ। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের কাছে এই প্রশ্নটা সাকিব নিজেও করে দেখতে পারেন?