Social Media

Light
Dark

যেদিন হয়েছিল ভিভ রিচার্ডসের জন্ম

স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডসের এই দৃশ্য তো বহুকাল দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব। কিন্তু এই মূর্তিমান আতংকের শুরুটা কবে জানেন?

মেরুন ক্যাপ মাথায় দিয়ে, চুইংগাম চাবাতে চাবাতে এগিয়ে আসছেন একজন। ঠিক যেন গ্রিক রুপকথার কোন এক সেনাপতি। যার হাতে তলোয়ার নেই কিংবা ব্যাটটা তলোয়ারের থেকে কোন অংশে কম নয়। স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডসের এই দৃশ্য তো বহুকাল দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব। কিন্তু এই মূর্তিমান আতংকের শুরুটা কবে জানেন?

১৯৭৫ সাল, অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সফর। বিশ্বকাপ জয়ের পরপরই ক্যারিবিয়ানদের সে সফর। ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম বিশ্বকাপের ফাইনাল জিতেছে ক্লাইভ লয়েডের দল। পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়াকে ফাইনালে হারিয়েছিল দলটি। সবাই সেটাকে অঘটন ভেবে নিয়েছিল। আর অস্ট্রেলিয়া পুষে রেখেছিল ক্ষোভ।

সেই ক্ষোভের প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার পেসাররা। ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আতিথেয়তায় তারা কমতি রাখেনি। ভয়ের এক অন্ধকার রাজ্যে হারিয়ে যায় গোটা ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রতিটা ক্যারিবিয়ান ব্যাটার সেই সিরিজে চোট নিয়ে মাঠ থেকে উঠেছিলেন। বাইশ গজে সতীর্থদের অসহায় আত্মসমর্পণ দেখেছিলেন ভিভিয়ান রিচার্ডস।

দুমড়ে-মুচড়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের মানসিকতা। সেখান থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় বের করেছিলেন ভিভ রিচার্ডস। তিনি জানেন, আঘাতের পালটা জবাব দিতে হয়, রক্তচক্ষু দিয়ে। বছর চারেক পর সে জবাবটাই ভিভ দিয়েছিলেন বাইশ গজে।

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলার নিমন্ত্রণ পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অস্ট্রেলিয়ার দম্ভকে চূর্ণ করে দেয় ক্যারিবিয়ানরা প্রথম টেস্ট ম্যাচেই। সে সময়ের বিশ্বের সেরা দল হিসেবেই বিবেচিত হত অস্ট্রেলিয়া। তাদের বিপক্ষে তাদেরই আঙিনায় টেস্ট ড্র করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অজিদের অহংকারে বেশ আঘাত হানে সেটি।

তাই তো দ্বিতীয় টেস্টে আবারও পুরনো পন্থায় অবতীর্ণ হন অজি পেসাররা। ক্যারিবিয়ান ব্যাটারদের বাউন্সারে কুপোকাত করতে চাইলেন। বাইশ গজে রক্তের উল্লাস করতে চাইলেন প্রত্যেকে। রডনি হগ দলের পরিকল্পনায় একটা মারাত্মক বাউন্সার ছুঁড়ে দেন ভিভ রিচার্ডসের মুখ বরাবর। স্রেফ একটি ক্যাপ মাথায় দেওয়া রিচার্ডসের মুখে আঘাত করে বল।

হগ হয়ত ভেবেছিলেন এই তো বাগে আনা গেছে। কিন্তু না পরক্ষণেই একজোড়া অগ্নিগোলক তার দিকে হুঙ্কার জানানো দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রইল। বহু বছর বাদে হগ সে চাহনিকে রীতিমত একটা ‘হরর মুভি’ বলে আখ্যায়িত করলেন। আর সেদিনই জন্ম হয় এক দৃঢ়চেতা চরিত্রের। সেদিনই লেখা হয়ে যায় ভিভিয়ান রিচার্ডসের গ্রীক সেনাপতির চরিত্র।

এরপর আর দমানো যায়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। প্রথমবারের মত অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট সিরিজ জিতে নেয় ক্যারিবিয়ানরা। অজি বোলারদের বাউন্সার তখন বড্ড নির্বিষ হয়ে যায়। ভিভ রিচার্ডসের ওই এক চাহনিই বদলে দেয় ক্রিকেটের গোটা ইতিহাস। ১৯৭৯ এর বিশ্বকাপও জিতে নেয় ক্লাইভ লয়েডের দল। আর জন্ম নেয় এক অকুতোভয় চরিত্রের।

সেদিনই ভিভ নামক দানবকে সমীহ করতে শুরু করে সকলে। সেদিন থেকে আজ অবধি ভিভিয়ান রিচার্ডসের ওই রক্তচক্ষু সাফল্যের পূর্বশর্ত হিসেবে বিবেচিত হতে শুরু করে। আর ক্রিকেট দুনিয়ায় অমরত্ব পেয়ে যান স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস।

Share via
Copy link