লাল-সবুজের বিজয় কেতন উড়ছে নীলাম্বরে

পাকিস্তানের ঘরের মাটিতে পাকিস্তানকেই ধরাশায়ী করছে টাইগাররা। এর থেকে বড় টেস্ট অর্জন হয়ত এখনও ধরা দেয়নি বাংলাদেশের হাতে।

বিজয় কেতন উড়ছে ওই। লাল-সবুজের পতাকা পাকিস্তানের বুকে মাথা উঁচু করে নীলাম্বর ছুঁয়েছে। প্রায় ১৫ বছর পর বিদেশের মাটিতে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের ঘরের মাটিতে পাকিস্তানকেই ধরাশায়ী করছে টাইগাররা। এর থেকে বড় টেস্ট অর্জন হয়ত এখনও ধরা দেয়নি বাংলাদেশের হাতে।

এক বদলে যাওয়া বাংলাদেশের দেখা মিলেছে রাওয়ালপিন্ডিতে। রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস খ্যাত শোয়েব আখতারের ভূমিতে দাঁড়িয়ে নাহিদ রানা তুলেছেন গতির ঝড়। পাকিস্তানি পেসারদের ঝড়েও টলেনি লিটন দাসের ব্যাট। ইনিংস ব্যবধানে পরাজয় যখন দিচ্ছিল উঁকি, তখন মেহেদী মিরাজরাও হাত বাড়িয়ে দলকে টেনে তুলেছেন খাদের কিনারা থেকে।

রাওয়ালপিন্ডির দ্বিতীয় টেস্টে একটি সেশন বাদে, পুরোটা সময় জুড়েই হয়ত বাংলাদেশ ছিল চালকের আসনে। এতটা ক্যালকুলেটিভ টেস্ট ক্রিকেট বাংলাদেশ শেষ কবে খেলেছিল, তা মনে করাও মুশকিল। ৬ উইকেটের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। অথচ এই টেস্টের প্রথম ইনিংসে মাত্র ২৬ রানেই ৬ উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ দল।

তখন সম্ভবত সিরিজ জয়ের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়েছিল। বাংলাদেশ সেই ধূলিকণা থেকেই হাজির হয়েছে ফিনিক্স পাখি হয়ে। মিরাজ, লিটনরা ব্যাট হাতে দেখিয়েছেন মুন্সিয়ানা। গতি আর সুইংয়ে পাকিস্তানি ব্যাটারদের চোখ ছানাবড়া করেছেন, নাহিদ রানা ও হাসান মাহমুদরা।

টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে বাংলাদেশের পেসাররা প্রথমবারের মত দশ উইকেট নিয়েছে। রাওয়ালপিন্ডিতে দ্বিতীয় টেস্ট জয়ের পথে বাংলাদেশ নিজেদেরকে একেবারে নতুনভাবে সামনে এনেছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের পর হয়ত সিরিজ জয়ের স্বপ্নও দেখেনি কেউ কেউ। বাংলাদেশও আকাশ-কুসুম স্বপ্নের ঘর বাঁধেনি।

তারা বরং নিজেদের পরিকল্পনা ঠিক রেখেছে। বিশ্বাস রেখেছে নিজেদের সামর্থ্যের উপর। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ব্যাট হাতে যতটা অনুজ্জ্বল ছিলেন, ঠিক ততটাই উজ্জ্বলতা ছড়িয়েছেন অধিনায়কের কাঁধে। প্রতিটা সেশনে বাংলাদেশ নতুন সব চিন্তা নিয়ে হাজির হয়েছে। সেসব ফল বয়ে নিয়ে এসেছে। ঐতিহাসিক এক টেস্ট জয়!

এর আগে ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদের মাঠে সিরিজ হারিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে বিতর্ক আছে সেবারের ক্যারিবিয়ান দলের সামর্থ্য নিয়ে। এবারের পাকিস্তান শক্তিমত্তা বা ঐতিহ্য বিচারে সেবারের ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে ঢের এগিয়ে। এমন এক দলের বিপক্ষে প্রতিটা মুহূর্তে এগিয়ে থেকে ম্যাচ জিতেছে টাইগাররা। অবিশ্বাস্য বলা যেতে পারে, কিন্তু তাকে বিশ্বাসযোগ্য বানিয়েছেন মুশফিকুর রহিমরা।

 

Share via
Copy link