নাজমুল হোসেন শান্ত যেন এক পরশ পাথর। তার ছোঁয়াতে বদলে যেতে শুরু করেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। একটু বাড়াবাড়ি মনে হচ্ছে নিশ্চয়ই। কিন্তু এই তুলনার রাস্তাটা খোদ শান্তই তৈরি করে দিয়েছেন। তার অধিনায়কত্বের ঝলকে অবিশ্বাস্য সব জয় এসে ধরা দিচ্ছে। অপূর্ণতাগুলো পাচ্ছে পূর্ণতা।
একটু খতিয়ে দেখা যাক, শান্ত পরশ পাথর- এই কথার তো ভিত্তি থাকা প্রয়োজন। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাকাপাকিভাবে অধিনায়কত্ব পান নাজমুল শান্ত। এর আগে অবশ্য প্রয়োজনের মুহূর্তে দলের দায়িত্বভার সামলেছেন তিনি।
তেমন এক দায়িত্বভার নিয়ে নিউজিল্যান্ডে গিয়েছিলেন শান্ত। সেবার ওয়ানডে সিরিজটা হেরেছিল বাংলাদেশ। তবুও প্রাপ্তি ছিল তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে। শেষ ম্যাচটা যে বাংলাদেশ নিজেদের করে নিয়েছিল। এর আগে কখনোই নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তাদেরকে পরাস্ত করতে পারেনি বাংলাদেশ। বদলে যাওয়ার শুরুটা বলা যেতে পারে সেখান থেকেই।
এরপর ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডকে আতিথেয়তা দিয়েছিল বাংলাদেশ। সিলেটের মনোরম পরিবেশের মাঝে ব্ল্যাকক্যাপসদের একেবারে চমকে দেয় শান্তর বাংলাদেশ দল। টানা পাঁচ দিন দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলে জয় ছিনিয়ে নেয় টাইগাররা। এর আগে কখনও ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডকে সাদা পোশাকে হারানোর স্বাদ পায়নি বাংলাদেশ।
তারপর তো এলো এই পাকিস্তান সিরিজ। দীর্ঘ দুই যুগের পথ চলায় পাকিস্তানকে টেস্টে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ দল। এই পরিসংখ্যান মাথায় নিয়ে, ২০০৩ সালের মুলতানের দুঃখ হৃদয়ের আলিঙ্গন করে রাওয়ালপিন্ডিতে পা রাখে বাংলাদেশ দল।
তারপর তো লেখা হয়ে যায় প্রথম ইতিহাস। রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম টেস্ট ম্যাচ জিতে নেয় বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে যেকোন জায়গায় বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয় ছিল সেটিই। এরপর বাকি অপূর্ণতাটুকু আর বাকি রাখলেন না অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।
গোটা দলকে সাথে নিয়ে তিনি নতুন করে লিখলেন ইতিহাস। পাকিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানকেই ধবলধোলাই করে টাইগাররা। এসব কিছু নিশ্চয়ই বদলে যাওয়ার অংশ। শান্তকে তাই পরশ পাথর বললে দোষের কিছু নেই নিশ্চয়ই। যদিও ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফরমেন্সকে নিয়ে কাটাছেড়া হতেই পারে। কাঠগড়ায় তোলা যেতে পারে শান্তকে।
কিন্তু তরুণ একজন অধিনায়ক, বাংলাদেশের দুর্বলতম ফরম্যাটে সহসাই আকাশচুম্বী ফলাফল এনে দেবেন- সেটা ভাবা অন্যায়। তবুও প্রশংসা প্রাপ্য শান্তর। তিনি দলের শক্তিমত্তা বোঝেন ভাল। তিনি জানেন দলে থাকা খেলোয়াড়দের সক্ষমতা ঠিক কতটুকু। তিনি ততটুকু সক্ষমতার সর্বোচ্চটা নিঙড়ে নেওয়ার প্রদ্ধতিও আয়ত্বে এনেছেন।
অধিনায়ক শান্তর দুর্ধর্ষ অধিনায়কত্বের উজ্জ্বলতম উদাহরণ হয়ে থাকবে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলা টেস্ট সিরিজ। তিনি পেসারদের যথাযথ ব্যবহার করেছেন। পাকিস্তানি অভিজ্ঞ ব্যাটারদের ফাঁদে ফেলার পরিপূর্ণ ছক কষে মাঠে নেমেছেন। বোলারদের যথাযথ ব্যবহার করেছেন। পরিশেষে ব্যাটাররাও নিজ দায়িত্বজ্ঞানে এগিয়ে এসেছে।
এতসব প্রাপ্তির মাঝেও শান্তর ব্যাটে ধারাবাহিক রান না পাওয়াটা ভীষণ আক্ষেপের। তাই তো প্রত্যাশা স্রেফ এতটুকুই- শান্তর ব্যাটে মুক্তোর মত ঝলমলে রানের দেখা মিলবে নিয়ম করে। পরিসংখ্যান কিংবা রেকর্ড সবকিছুই তো নস্যি।