বাংলাদেশের ক্রিকেটে সম্ভবত এখন এই ধরনের ব্যাপারগুলোর জন্য অভ্যস্ত করতে হবে। এখন অনেক খেলোয়াড় উঠে আসছেন। ফলে আমরা হয়তো এখন প্রায়শই দেখবো জাতীয় দলের খেলা ফেলে কেউ কেউ টাকা তৈরীর অন্য কোনো লিগ খেলছেন। কিংবা কেউ পরিবারের সাথে একান্তে সময় কাটানোর জন্য একটা বিরতি নিতে চাচ্ছেন। কেউ আবার ইনজুরি থেকে সেরে ওঠার জন্য নিজেকে সময় দিতে জাতীয় দলের বাইরে থাকছেন। কিছু কিছু ক্রিকেটার আবার বায়ো-বাবলে দমবন্ধ অনুভব করতে পারেন।
এমনকি খেলোয়াড়রা ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়ে ছুটি নিতে পারেন। যেহেতু ব্যক্তিগত কারণে একজন ক্রিকেটার ছুটি চাচ্ছেন, তাই কারণ জানতে চেয়ে বেশি প্রশ্ন করাটাও শোভনীয় নয়। ক্রিকেটার যদি স্পষ্ট করে কারণ না জানান তাহলে আমরা শুধুই অনুমান করতে পারি, তার বেশি কিছু নয়।
তামিম ইকবাল নিউজিল্যান্ড সফরের টি-টোয়েন্টি সিরিজ না খেলার ঘোষণা দেওয়ায় এমনই একটি পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশের ক্রিকেট। গত বছর তামিম খুব বেশি ম্যাচও খেলননি। তাই অবসাদগ্রস্ত হবার প্রশ্নই উঠছে না। অনেকে বলছেন তিনি ১৪ দিন বায়ো-বাবলে থেকে অস্বস্তি বোধ করছেন। এটি তামিমের টি-টোয়েন্টি না খেলতে চাওয়ার কারণ হতেই পারে।
তবে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থেকে ২৬ শে মার্চ পর্যন্ত ওয়ানডে সিরিজ খেলার পর তিনি সহজেই আরেকটা সপ্তাহ থেকে যেতে পারতেন। যত যাইহোক তিনি একজন পেশাদার ক্রিকেটার। আর একজন পেশাদার ক্রিকেটার ভালো করেই জানেন কী করে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে হয়।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করিনা বায়ো-বাবল এখানে কোনো ইস্যু। আমরা সবাই জানি গত কয়েক বছরে সাদা বলের ক্রিকেটে তামিমের স্ট্রাইকরেট খুব একটা ভালো না। তবে তিনি খুব খারাপও করছেন না। আমাদের সবসময় ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি তে ১৫০ প্লাস স্ট্রাইকরেটের প্রয়োজন নেই।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে তিনি একজন ক্লাস ব্যাটসম্যান। তিনি ধীর গতির শুরু করে তাঁর ইনিংসের শেষে গিয়ে গতি বাড়িয়ে ব্যালেন্স করতে পারেন। কোনো ফরম্যাটের ক্রিকেটেই এখনও বাংলাদেশ তামিমকে ছেটে ফেলার মত জায়গায় পৌছায়নি।
আমার মতে, এটি পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসের ব্যাপার। তাঁর স্ট্রাইকরেটের জন্য কয়েক মাস ধরেই তাঁকে অনেক সমালোচিত হতে হয়েছে। আমার ধারণা সেজন্যই তিনি টি-টোয়েন্টিতে ঝুকিটা নিতে চাচ্ছেন না। ওয়ানডে ক্রিকেটে তিনি তাঁর ইনিংস গড়ার জন্য সময় পান। কিন্তু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তো আর এই সুযোগ নেই।
এই ফরম্যাটে তাঁকে প্রথম বল থেকেই এট্যাকিং ক্রিকেট খেলতে হবে। আমার মনে হয় না এই কাজটা তিনি নিউজিল্যান্ডের সুইংয়িং কন্ডিশনে এত সহজে করতে পারবেন। তাই নিউজিল্যান্ডে এই ফরম্যাট থেকে সড়ে দাঁড়ানো খুব একটা খারাপ সিদ্ধান্তও নয়।
আশা করা হচ্ছে ভারতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে বাংলাদেশ এই কয়েক মাসে ডজন খানেক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবে। সেগুলোতে যেকোনো সময় তামিম চাইলেই দলে ফিরে আসতে পারেন। এদিকে তাঁর এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের ক্রিকেটকে ব্যাক আপ প্ল্যান করার সুযোগ দিচ্ছে। অন্তত দুই-একজন নতুন ক্রিকেটারকে বাংলদেশ টি-টোয়েন্টিতে জরুরী এক্সপোজারটা দিতে পারে। কেননা তামিমের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারও প্রায় শেষের পথে। এই সময়ে এসে আমাদের সত্যিই এমন একজনকে খোজা দরকার যিনি লম্বা সময়ের জন্য দলকে সার্ভিস দেবেন।
তামিমের জায়গায় নাঈম শেখ আসতে পারেন। কিংবা অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের তানজিদ হাসানও একজন অপশন হতে পারেন। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য টিম ম্যানেজমেন্ট আছে। শুধু তামিমকে তাঁর সিদ্ধান্তের জন্য দোষ না দিয়ে বাংলাদেশের এই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার পথ খোজাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
ফেসবুক থেকে অনুবাদ: রাহুল রায়