ওয়ানডেতে সর্বশেষ হাফ সেঞ্চুরি বছর দুয়েক আগে। তাও এমন একটা ম্যাচে যখন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাঁর করা ৬৯ রানের ইনিংসটা পরাজয়ের ব্যবধান-কমাতে কোনো ভূমিকা রাখেনি। কলম্বোর সেই ম্যাচে কখনোই জয়ের পরিস্থিতিই তৈরি করতে পারেনি বাংলাদেশ।
যার কথা বলছি, সেই সৌম্য সরকার সেই ম্যাচে খেলেছিলেন তিন নম্বরে। তিনি বিচিত্র একটা চরিত্র। রহস্যময় তাঁর ব্যাটিং পজিশন। তিনি কখনো ইনিংসের সূচনা করেন ওপেনার হিসেবে, কখনো বা তিন নম্বরে নামেন। কখনো বা দলের স্বার্থে তাঁকে পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবেও খেলানো হয়। সাত নম্বরে ব্যাটিং করেন।
শুধু সীমিত ওভার বা ওয়ানডে নয়। সাদা পোশাকেও তিনি তাই। দেশের মাটিতে তিনি ওপেনিংয়ে নেমে সাদা পোশাকে বাজে ভাবে আউট হন। আবার নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে নিচের দিকে নেমে সেঞ্চুরি করে ফেলেন।
এই পরিসংখ্যান একটা বার্তা দেয় – সেটা দল সৌম্য সরকার সব পজিশনেই সমান পারদর্শী। যেকোনো ভূমিকাতেই তিনি তুখোড়। আসলেই কি তাই? না, মূল ঘটনা হল – তাকে দিয়ে যখন যেটা করানোর চেষ্টা করা হয় – তখন সেটাতে ব্যর্থ হন তিনি।
হ্যাঁ, কখনো কখনো তিনি জ্বলে অবশ্যই ওঠেন। কারণ, স্কিল বা প্রতিভা নিয়ে কোনো সংশয় নেই। কিন্তু, যে মাত্রায় তিনি জ্বলে উঠছেন – তা দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সার্ভাইভ কেউ করে গেলে বলা উচিৎ, সিস্টেমেই সমস্যা আছে।
প্রথম ব্যাপার হল, সৌম্য আদৌ আর তরুণ খেলোয়াড় নন। তাঁর অভিষেক সেই ২০১৫ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আগে। মানে, তিনি এরই মধ্যে দু’টো ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলে ফেলেছেন। সাত-আট বছর ধরে তিনি আছেন এই সার্কিটে।
এই সময়ে ৬১ টি ওয়ানডে খেলে করেছেন ১৮০০’র কাছাকাছি রান। গড় ৩২-এর মত। হাফ সেঞ্চুরি ১১ টি, সেঞ্চুরি দু’টি। টি-টোয়েন্টিতে অবস্থাটা আরো যাচ্ছেতাই। ৫০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে গড় মাত্র ১৮।
ওয়ানডেতে সর্বশেষ সেঞ্চুরিটা ২০১৮ সালে, দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। বিশেষ করে ২০১৫-১৬ তে তিনি যেভাবে বড় ইনিংস খেলছিলেন স্বাচ্ছ্বন্দে – সেই সৌম্য এখন অনেকটাই নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন। হারিয়ে খোঁজা নয়, বাস্তবতা হল – সেই সৌম্যর ছিটেফোঁটাও আজকের সৌম্যর মধ্যে নেই।
তাহলে নিস্তার কি? এখানে প্রথম ব্যাপার হল, সৌম্য আরেকজনের বিকল্প হিসেবে খেলবেন না। টিম ম্যানেজমেন্ট সেটা করতে গিয়ে একেকবার একেক জায়গায় তাঁকে দিয়ে চেষ্টা করেছে। বার বার ব্যর্থতার পরও চেষ্টা চালিয়ে গেছে। ফলে, ব্যর্থতার পেছনে সৌম্যর দায় যতটুকু – টিম ম্যানেজমেন্টও ততটুকুই দায়ী।
আর এখন যা অবস্থা, তাতে দলে সৌম্যর জায়গা হারানো ছাড়া বিকল্প কোনো রাস্তা নেই। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তিনি যেমন ইনটেন্টে টপ অর্ডারে ব্যাট করেছেন – সেটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিশেষ করে নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে খেলা বলেই তাঁর প্রতি প্রত্যাশা ছিল বেশি – অথচ তিনি তার ধারের কাছেও যেতে পারেননি।
সৌম্যকে এখন আবারও শুরু থেকে শুরু করার কোনো বিকল্প নেই। বয়স খুব বেশি নয়, মোটে ২৮। চাইলে এখান থেকেও সম্ভব। তাঁকে ফিরতে হবে ঘরোয়া ক্রিকেটে। সেখানে রান করতে হবে। ‘এ’ দলের হয়ে খেলতে হবে। সেখানে দেশে বিদেশে প্রচুর রান করলে তবেই আবার জাতীয় দলের টিকেট মিলবে। নিয়মটা এমনই হওয়া উচিৎ।
বাংলাদেশ বলেই এই নিয়মটা যে মানা হবে না, সেটা চোখ বুজেই বলে ফেলা যায়!