১.
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হোয়াটসঅ্যাপ মারফত জনৈক ভারতীয় মিস্টার এক্স এর সাথে হিথ স্ট্রিকের আলাপ হয়। আলাপের মিস্টার এক্স-ই আলাপের সূত্রপাত করে এবং স্ট্রিককে জানায় সে জিম্বাবুয়েতে একটি ক্রিকেট লিগ চালু করতে চায়। মিস্টার এক্স আরও জানতে চায় এ ব্যাপারে স্ট্রিকের আগ্রহ আছে কী না, কারণ এ থেকে সে নিশ্চিতভাবে প্রচুর টাকা কামাতে পারবে।
২.
ধারাবাহিকভাবে একাধিক আলাপাচারিতার এক পর্যায়ে মিস্টার এক্স বুঝিয়ে দেয় সে বেটিং এর সাথে সম্পৃক্ত এবং সে জিম্বাবুয়ের বাইরে স্ট্রিকের কোন ব্যাংক একাউন্ট থাকলে তার ডিটেইল জানতে চায়। স্ট্রিক তাকে ব্যাংক একাউন্ট সম্পর্কে জানায়। মিস্টার স্ট্রিক এসব আলোচনার সময় পরিস্কার জানিয়ে দেয় এসব কিছু সে করছে জিম্বাবুয়েতে একটি টি-২০ লিগ চালু করার আশায়। তার ধারণা এতে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট সামনে এগিয়ে যাবে।
৩.
দুজনের সকল আলোচনা হয়েছে ব্যক্তিগত ইমেইল এড্রেস এবং ফোনের মাধ্যমে, কোনটিই অফিশিয়াল ছিল না। এ ব্যাপারে দুজনেরই সম্মতি ছিল।
৪.
প্রায় ১৫ মাসেরও বেশি সময় নিয়ে চলা এই আলাপচারিতায় মিস্টার এক্স নানা সময়ে হিথ স্ট্রিকের কাছ থেকে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট ও ম্যাচ (যেগুলোর সাথে সে সম্পৃক্ত ছিল) সম্পর্কে তথ্য জানতে চেয়েছিল।
বিশেষ করে –
ক. ২০১৭ সালের বিপিএল (বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ) চলাকালীন মিস্টার এক্স তার কাছে ‘লিংক’ চেয়েছিল, বিশেষ করে কোন দলের অধিনায়ক, মালিক বা খেলোয়াড়। সাথে এটাও বলেছিল যে বিপিএল থেকে ‘ভাল টাকা কামিয়ে’ সেই টাকা জিম্বাবুয়েতে টি-টোয়েন্টি লিগ চালু করার জন্য বিনিয়োগ করতে পারবে। বোঝাই যাচ্ছে স্ট্রিকের মাধ্যমে মিস্টার এক্স ইনসাইড ইনফরমেশন পাবার লিংক পেতে চেয়েছিল যাতে ভেতরের খবর জানতে পারে।
খ. এক পর্যায়ে হিথ স্ট্রিক তিনজন খেলোয়াড়ের (এর মধ্যে একজন একটি দেশের জাতীয় দলের অধিনায়ক) ডিটেইল মিস্টার এক্সকে দেয়। উল্লেখ্য, মিস্টার এক্স উক্ত খেলোয়াড়দের সাথে যোগাযোগ করে ভেতরের খবর জেনে সেটা দিয়ে বাজি জিততে চাইবে- এটা স্ট্রিকের জানা ছিল বা জানা উচিত ছিল। শুধু তাই নয়, এক পর্যায়ে স্ট্রিক নিজেই ঐ তিনজনের মধ্যে দুজন খেলোয়াড়ের সাথে যোগাযোগ করে এবং মিস্টার এক্স এর ব্যাপারে ভাল ভাল কথা শুনিয়ে দেয়।
গ. মিস্টার এক্স তার কাছে ২০১৮ সালের পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) লিংক চায়।
ঘ. ২০১৮ সালের আফগানিস্তান প্রিমিয়ার লিগ (এপিএল) চলাকালীন হিথ স্ট্রিক একজন খেলোয়াড়ের সাথে মিস্টার এক্স এর পরিচয় করিয়ে দেয় এবং অন্য আরেকজন খেলোয়াড়ের সাথে মুখোমুখি বসিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা নিতে উদ্যত হয়।
ঙ. মিস্টার এক্স এপিএল এর ম্যাচ সংক্রান্ত ভেতরের নানান তথ্য জানতে চায়। হিথ স্ট্রিক সেসব তথ্য প্রদান করে।
৫.
হিথ স্ট্রিক নিজেই স্বীকার করেছেন মিস্টার এক্স কে তথ্য দেয়াটা আইসিসি’র আইন ভঙ্গ করেছে।
৬.
মিস্টার এক্স এর কাছ থেকে দু’টি বিট কয়েন (যা ভাঙিয়ে পেয়েছিলেন ৩৫ হাজার মার্কিন ডলার) গ্রহণ করার ঘটনা তিনি স্বীকার করেছেন। এ ব্যাপারে দায়বদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আইসিসি’র আকু বা অন্য কোন দুর্নীতি দমন কর্তৃপক্ষকে তিনি অবহিত করেন নি।
৭.
হিথ স্ট্রিক স্বীকার করেছেন যে একেবারে শুরুতে মিস্টার এক্স তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে দায়বদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আইসিসি’র আকু বা অন্য কোন দুর্নীতি দমন কর্তৃপক্ষকে তিনি অবহিত করেন নি।
৮.
এপিএল চলাকালীন মিস্টার এক্স হিথ স্ট্রিককে একটি আইফোন দেয়, তার স্ত্রীর জন্য উপহার হিসেবে। হিথ স্ট্রিক সেটি গ্রহণ করেন এবং এ ব্যাপারে দায়বদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আইসিসি’র আকু বা অন্য কোন দুর্নীতি দমন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন নি।
৯.
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে আকু (ACU) থেকে জানানো হয় যে আসছে জানুয়ারি মাসে তার সাক্ষাতকার নেয়া হবে। এ সময় আরও জানানো হয় ২০১৮ সালে তার ব্যবহার করা সকল ফোন ও সিম কার্ড ঐ সাক্ষাৎকারে জমা দিতে হবে।
১০.
ইন্টারভিউ এর কথা শুনে তিনি মিস্টার এক্স এর সাথে একাধিকবার হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন অথচ তিনি জানতেন যে মিস্টার এক্স নিজেই সম্প্রতি আকু’র সাক্ষাতকারের সম্মুখীন হয়েছে। তখনকার হোয়াটঅ্যাপ আলাপে মূলত আকু’র সাথে করা সাক্ষাতকারে মিস্টার এক্স কী কী বলেছেন সংক্রান্ত কথা হত। হিথ স্ট্রিক স্বীকার করেছেন যে এক পর্যায়ে তারা ঠিক করেন দুজনের কথায় যেন মিল থাকে সেই অনুযায়ী ‘গল্পটা সাজানো হবে’ (মিস্টার এক্স এর বলা একটি ঘটনা সত্য ছিল না)। তিনি আরও স্বীকার করেছেন এর মাধ্যমে আকু’র তদন্তের ব্যাঘাত ঘটেছে। মিস্টার এক্স এর কাছে তিনি ইন্টারভিউ এর পদ্ধতি সম্পর্কেও জানতে চেয়েছিলেন।
১১.
হোয়াটসঅ্যাপের আলাপচারিতার পর মিস্টার এক্স এর নির্দেশ অনুযায়ী হিথ স্ট্রিক তাদের দুজনার সকল মেসেজ মুছে ফেলেন। পাশাপাশি তার নম্বরও মুছে দেন। এ থেকে বোঝা যায় স্ট্রিক নিজেও জানতেন যে তার এই কাজটি ভুল ছিল।
১২.
রায়ের সারাংশ
ক. হিথ স্ট্রিক মোট পাঁচটি ধারা ভঙ্গ করেছেন-ধারা ২.৩.২, ধারা ২.৩.৩, ধারা ২.৪.২, ধারা ২.৪.৪ এবং ধারা ২.৪.৭।
খ. ৮ বছরের জন্য তাকে সকল প্রকার ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করা হল, এ ব্যাপারে ৬.২ ধারায় বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। শাস্তি কার্যকর হবে সিদ্ধান্ত দেয়ার দিন থেকে।
গ. নিষেধাজ্ঞা-কালীন তিনি কী কী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না তার বিস্তারিত রয়েছে ৬.৫ ধারায়।
ঘ. এ ব্যাপারে এই সিদ্ধান্তটিই আইসিসি’র চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে পরিগণিত হবে। ৮.২ ধারা অনুযায়ী সিদ্ধান্তটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে যার অংশ হিসেবে আইসিসি ওয়েব পেজেও প্রকাশ করা হয়েছে।
ঙ. এ ব্যাপারে আর কোন শুনানির প্রয়োজন নেই। তদন্তের এখানেই ইতি টানা হল।
– আইসিসি, দুবাই, ২৮ মার্চ ২০২১