মেক ইট ফাইভ!

এটা নিশ্চিত যে বেঁচে থাকলে নির্ঘাত এই দলটায় আরো একজনকে যোগ করে ফেললেন ক্রো। তিনি হলেন বাবর আজম। পাকিস্তানের অধিনায়ক ক্রমাগত এই চারজনের শ্রেষ্ঠত্বের দরজায় এমন ভাবে কড়া নাড়ছেন যে তাঁকে সেখানে অন্তর্ভূক্ত না করে আর উপায় নেই।

তখন ২০১৪ সাল। ক্রিকেট বিষয়ক গণমাধ্যম ইএসপিএন ক্রিকইনফোর এক লেখাতে ‘ফ্যাবুলাস ফোর’-এর ধারণা দিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের গ্রেট মার্টিন ক্রো। সেই চার জন ‘ফ্যাবুলাস’ হলেন – ভারতের বিরাট কোহলি, অস্ট্রেলিয়ার স্টিভেন স্মিথ, ইংল্যান্ডের জো রুট আর নিউজিল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসন।

মার্টিন ক্রো মূলত টেস্ট ক্রিকেটকে মাথায় রেখে লেখাটা লিখেছিলেন। যদিও, সব ফরম্যাট মিলিয়েই এই ফ্যাবুলাস ফোর ধারণাটা চালু হয়ে গিয়েছিল। আর মার্টিন ক্রো-কে সত্যি প্রমাণ করে এই চারজনও ক্রমাগত দাপুটে থেকে হয়ে উঠেছেন দানবীয়।

সেই মার্টিন ক্রো আজ নেই। প্রাণঘাতি এক রোগে তিনি ২০১৬ সালেই চলে গেছেন জীবন নদীর ওপারে। তিনি চলে গেলেও তাঁর দেওয়া থিওরিটা আজো টিকে আছে।

তবে, এটা নিশ্চিত যে বেঁচে থাকলে নির্ঘাত এই দলটায় আরো একজনকে যোগ করে ফেললেন ক্রো। তিনি হলেন বাবর আজম। পাকিস্তানের অধিনায়ক ক্রমাগত এই চারজনের শ্রেষ্ঠত্বের দরজায় এমন ভাবে কড়া নাড়ছেন যে তাঁকে সেখানে অন্তর্ভূক্ত না করে আর উপায় নেই।

সকালেই খবর আসলো, প্রথমবারের মত ওয়ানডে ব্যাটিং র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষে উঠেছেন। সাড়ে তিন বছর পর শীর্ষস্থান থেকে নেমে যেতে বাধ্য হয়েছেন বিরাট কোহলি – ভারতের ব্যাটিংয়ের শেষ কথা।

এটুকু হলেও হত। কিন্তু না। বাদশাহ বাবরের ব্যাট থামেনি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে রাতেই টি-টোয়েন্টি ম্যাচ ছিল। সেখানে তিনি করেছেন ১২২ রান। টি-টোয়েন্টিতে এটা পাকিস্তানের পক্ষে কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ সংগ্রহ।

৫৯ বলের ইনিংসটার পুরোটাই ছিল আক্রমণের। স্ট্রাইক রেট প্রায় ২০৭। ১৫ টি চার ও চারটি ছক্কায় পাকিস্তানের জয় নিশ্চিত হয়েছে দুই ওভার বাকি থাকতেই। ২০৪ রান তাড়া করতে নেমে দুই ওভার বাকি থাকতে নয় উইকেটের জয় সত্যিই অভাবনীয়। মোহাম্মদ রিজওয়ান ৭৩ রান করেন। উদ্বোধনী জুটিতে বাবর আজম ও রিজওয়ান মিলে করেন ১৯৭ রানের জুটি।

পুরোদমে চলছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। এর মধ্যে বিশ্বের আরেক প্রান্তে সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকায় চলমান টি-টোয়েন্টি সিরিজ নিয়ে খুব মাতামাতি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু সেটা হচ্ছে। ফলে, ধন্যবাদ পেতেই পারেন বাবর আজম।

পাকিস্তানের আর দশ জন কিশোরের মতই শুরু হয়েছিল বাবরের যাত্রা। লাহোরের রাস্তায় ক্রিকেট খেলে বড় হয়েছেন তিনি। ১২ বছর বয়সে এসে ‘সিরিয়াস’ টেপ টেনিস ক্রিকেট শূরু করেন। তবে, ১৪ বছর বয়সের আগে তিনি ক্রিকেট নিয়ে খুব সিরিয়াস ছিলেন না। সিরিয়াস হলেন যখন, জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে জায়গা হল না।

ক্ষুদে সেই বয়সেও সেটা তাতিয়ে তুললো বাবর আজমকে। এক বছরের মধ্যেই তিনি বনে গেলেন অনূর্ধ্ব ১৫ পর্যায়ে পাকিস্তানের সেরা ব্যাটসম্যান।

সেই যাত্রাটা সহজ ছিল না। প্রতিদিন সকাল ১০ টায় দুই কাজিন ও বন্ধুদের সাথে বের হতেন। এক ঘণ্টা হেঁটে যেতেন মডেল ডাউন পার্কে। সেখানে নেটে ব্যাটিং করতেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বাড়ি যখন ফিরতেন তখন ঘড়িতে রাত আটটা কি সাড়ে আটটা। এমন পরিশ্রম যিনি করতে পারেন – সাফল্য তো তাঁকে ধরা দিবেই।

বয়স যখন ১৭ বছর – ততদিনে ‍দু’টো অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ খেলে ফেলেছেন। ভারতের ঘরোয়া সার্কিটেও তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়েছে।

মার্টিন ক্রো’র পক্ষে নিজের থিওরি এখন পাল্টানো সম্ভব নয়। সেই পাল্টানোর কাজটা বাবর নিজেই করছেন। ব্যাট দিয়ে তিনি বারবার বলছেন – ‘মেক ইট ফাইভ!’

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...