আইপিএলের আত্মঘাতি আক্ষেপ

একজন ব্যাটসম্যানের জন্য সবচেয়ে আক্ষেপের উইকেটের একটি হলো হিট উইকেট।

আপনি বলকে বাউন্ডারি ছাড়া করলেন কিংবা মারার পর টের পেলেন আপনার পায়ে কিংবা শরীরে লেগে স্টাম্প পড়ে যাওয়ায় আপনি আউট! কিংবা আপনি বল মারতে গিয়ে ব্যাট স্টাম্পে গেলে বেল পড়ে যাওয়ায় আপনি আউট হয়েছেন এর চেয়ে আক্ষেপের উইকেট মনে হয় আর হতে পারে না।

হিট উইকেটটা যেকোনো ব্যাটসম্যানের জন্যই নিদারুণ আক্ষেপ৷ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগেও (আইপিএলে) এর ভুড়ি ভুড়ি নজীর পাওয়া যায়। তেমনই আলোচিত কিছু ঘটনা নিয়েই এবারের আয়োজন।

  • মিসবাহ উল হক (রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু) 

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে হিট আউট হন মিসবাহ উল হক। ২০০৮ সালে ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে খেলেছিলেন তিনি। ২০০৮ সালে পাঞ্জাবের বিপক্ষে ৮ বলে ২১ রান করে পেসার শ্রীশান্তের বলে হিট আউট হয়েছিলেন মিসবাহ।

২০০৮ সালেই প্রথম এবং শেষবারের মতো আইপিএলে অংশ নেয় পাকিস্তানি খেলোয়াড়। সেখানে ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে দল পান মিসবাহ উল হক। পাঞ্জাবের বিপক্ষে দূর্দান্ত শুরু পেলেও হিট আউট হন তিনি। সেই ম্যাচে ২৬ বল বাকি থাকতে জয় পায় কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব।

  • রবীন্দ্র জাদেজা (চেন্নাই সুপার কিংস) 

২০১২ সালের আইপিএলে ডেকান চার্জার্সের বিপক্ষে ব্যাট হাতে দূর্দান্ত একটি দিন পার করেছিলেন চেন্নাই সুপার কিংসের অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজা। তার করা ২৯ বলে ৪৮ রানের ঝড়ো ইনিংসে ৬ উইকেটে ১৯৩ রান সংগ্রহ করে চেন্নাই। ডেল স্টেইনের বলে শট খেলতে গিয়ে স্টাম্পের উপর পড়ায় হিট আউট হন জাদেজা।

তার খেলা দূর্দান্ত ইনিংসটি শেষ হয় হিট উইকেটের মাধ্যমে। ২ রানের জন্য ফিফটি মিস করেন তিনি। অবশ্য বল হাতেও সেদিন অসাধারণ ছিলেন তিনি। মাত্র ১৬ রানের বিনিময়ে ৫ উইকেট শিকার করেন জাদেজা। সেই সাথে ম্যান অব দ্যা ম্যাচের পুরষ্কারও জিতেছিলেন।

  • ডেভিড ওয়ার্নার (সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ)

২০১৬ সালে আইপিএলে শিরোপা জয়ী দল ছিলো সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ। সেই সিজনে ডেভিড ওয়ার্নার পাঞ্জাবের বিপক্ষে ম্যাচ একবার হিট আউট হয়েছিলেন। অবশ্য ওয়ার্নার একাই নন সেই সিজনে আরো তিন ব্যাটসম্যান হিট আউট হয়েছিলেন সেবার। ব্যাট হাতে দূর্দান্ত এক সেশন পার করেছিলেন ওয়ার্নার।

পাঞ্জাবের বিপক্ষে ১৮০ রান তাড়া করতে নেমে ফিফটি করেন তিনি। ব্যক্তিগত ৫২ রানে অক্ষর প্যাটেলের বলে হিট আউট হয়ে ফেরত যান তিনি। অবশ্য সেই ম্যাচে ২ বল বাকি থাকতেই ৭ উইকেটের জয় পায় হায়দরাবাদ।

  • যুবরাজ সিং (সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ) 

২০১৬ সালে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি ইনিংস খেলেছিলেন যুবরাজ সিং। মিচেল ম্যাকলেনাগানের বলে হিট আউট হবার আগে মুম্বাইর বিপক্ষে অসাধারণ একটি ইনিংস খেলেন তিনি। সে বছর হায়দরাবাদ আইপিএল শিরোপা জয়লাভ করে। এটা যুবরাজের ১০০তম আইপিএল ম্যাচ ছিলো।

২৩ বলে ৩৯ রানের একটি ক্যামিও খেলেন যুবরাজ। সেই ম্যাচে হায়দরাবাদ ৮২ রানের জয় পায়। ২৩ বলে ৩৯ রানের ইনিংস খেলার পর ম্যাকলেনাঘানের বলে দূর্ভাগ্যবশত স্টাম্পে পা লাগায় তিনি হিট আউট হন।

  • জনি বেয়ারস্টো (সানরাইজার্স হায়দরাবাদ) 

ইংলিশ ওপেনার জনি বেয়ারস্টো শেষবার আইপিএলে হিট আউটের শিকার হয়েছেন। এখন পর্যন্ত তিনিই শেষ ব্যাটসম্যান যিনি হিট আউট হয়েছেন আইপিএলে। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে ব্যাট করতে ৪৪ রান করেন তিনি।

৪৪ রানের ইনিংস খেলার পর মুম্বাইয়ের স্পিনার ক্রুনাল পান্ডিয়ার বলে কিছুটা পেছনে এসে মারতে গিয়ে পায়ে গেলে স্টাম্পের বেল পড়ায় হিট আউটের শিকার হন তিনি। বেয়ারস্টোর উইকেটের পর হায়দ্রাবাদ সেই ম্যাচে অলআউট হয় মাত্র ১৩৭ রানে এবং ১৩ রানে ম্যাচটি তারা হেরে যায়।

  • হার্দিক পান্ডিয়া (মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স)

২০২০ সাল। মুম্বাইয়ের পঞ্চম ম্যাচ। প্রতিপক্ষ কলকাতা নাইট রাইডার্স।  ১৩ বলে ১৮ রান করে ব্যাট করছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া। ১৯ তম ওভারে রানটা বাড়িয়ে নেওয়ােই লক্ষ্য ছিল। সামনে ক্যারিবিয়ান পেসার আন্দ্রে রাসেল। কাট করতে গিয়েছিলেন, কিন্তু দুর্ঘটনাবশত হিট উইকেট হন। উইকেট উপহার পায় কেকেআর।

আইপিএলে হিট উইকেটের তালিকা আসলে এর চেয়েও অনেক লম্বা। আইপিএলে প্রথম আত্মঘাতি আউট হন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের মুসাভির খোটে, সেটা সেই ২০০৮ সালে। সেই তালিকায় আন্দ্রে রাসেল, রিয়ান পরাগ, শেলডন জ্যাকসন, সৌরভ তিওয়ারি, স্বপ্নীল আস্নোদকারদের নামও আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link