পাকিস্তানের বিপক্ষে এই জয়কে আপনি কিভাবে বর্ণনা করবেন – একটি অলৌকিক ঘটনা নাকি একটি স্বপ্ন সত্যি হবার ঘটনা নাকি একটি উত্তেজনা পূর্ণ জয়?
যাই হোক না কেন, এটা কোনো ব্যাপার না, আমরা জানি একটি অবিশ্বাস্য জয়।
আর এই জয়ের নায়ক পাঁচ বছর পর জাতীয় দলে ফেরা লুক জোঙ্গে। লোকেরা তাকে আর সাধারণ এক খেলোয়াড় হিসেবে দেখছে না। তিনি এখন মিরাকল ম্যান।
এখন থেকে ২০ বছর পর জিম্বাবুয়ের বাচ্চারা হয়তো এই ধরনের পারফর্মেন্স এবং ফলাফল সম্পর্কে বড়দেরকে জিজ্ঞাসা করবে। হারারে স্পোর্টস ক্লাবে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওই দিন যা ঘটেছিলো তখন আপনি কোথায় ছিলেন?
পাকিস্তানের বিপক্ষে টানা ১৫ ম্যাচ হারার পর, প্রথমবারের মত পাকিস্তানকে ১৯ রানে হারিয়েছে জিম্বাবুয়ে। এই ম্যাচে জিম্বাবুয়ে ১৯ রানে দূর্দান্ত একটি জয় পায়।এটা দূর্ভাগ্যজনক যে, জিম্বাবুয়ের এই ঐতিহাসিক ম্যাচ জয়ের দিনে কোভিড-১৯ সমস্যার কারণে হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে কোনো দর্শকের অনুমতি ছিলো না।
এদিন মাঠে জিম্বাবুয়ের দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন ব্রেন্ডন টেইলর, তিনি জানান, দলের সবাই বেশ ভালো খেলেছে। সম্প্রতি শেষ হওয়া ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো প্রস্তুতি হওয়ায় পাকিস্তান দলকে ছোটো লক্ষ্য তাড়া করতে দিয়েও আটকে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
এই কঠিন উইকেটে টসে জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান। ব্যাটিংয়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১১৯ রানে থামে জিম্বাবুয়ের ইনিংস। ২০১৬ সালের পর টি-টোয়েন্টিতে জিম্বাবুয়ের প্রথম জয়। সেবার ভারতকে হারিয়েছিলো জিম্বাবুয়ে।
এই সিরিজের মাধ্যমে পাঁচ বছর পর দলে ফেরেন অলরাউন্ডার লুক জোঙ্গে। দলে ফিরেই অবিস্মরণীয় পারফর্মেন্স করেন তিনি। জিম্বাবুয়ে তাঁদের প্রতিপক্ষ পাকিস্তানকে মাত্র ৯৯ রানে অল আউট করে ফেলে।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিলো ২০ রান। শেষ ওভারে কোনো রান না দিয়েই দুই উইকেট তুলে নেন তিনি। এছাড়াও শেষ ওভারের প্রথম বলেই একটি রান আউট হয়ে ফিরে গিয়েছিলেন উসমান কাদির । আর এই রান আউটেও অবদান ছিলো লুক জোঙ্গের।
এর আগেই জিম্বাবুয়ে দলকে জয়ের আশা দেখান লুক জোঙ্গে। তিনি শেষ ওভারে দুই উইকেট নেবার আগে আরো দুই উইকেট শিকার করেছিলেন। তিনি পাকিস্তানের সেরা ব্যাটসম্যান বাবর আজম এবং আগের ম্যাচের ম্যাচ সেরা মোহাম্মদ রিজওয়ানকে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠান।
২৬ বছর বয়সী লুক জোঙ্গে দলে ফিরেই ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করে ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন। এই ম্যাচে তিনি ১৮ রানে ৪ উইকেট শিকার করেন।
ম্যাচ শেষে লুক জোঙ্গে এই জয় উৎসর্গ করেছেন, জিম্বাবুয়ের জনগণের উদ্দেশ্যে যারা কোভিড ১৯ বিস্তার রোধে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘সর্বপ্রথম আমি এই জয় এবং অর্জনের জন্য সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা এবং সতীর্থদের ধন্যবাদ জানাই।‘ তিনি আরো বলেন, ‘এই জয় ১৫ মিলিয়ন জিম্বাবুইয়ানের জন্য। এই কোভিডের সময় আমি আশা করি আমরা আপনাদেরকে কিছু দিতে পেরেছি যা আপনাদেরকে উৎসাহিত করতে পারে।‘
ব্রেন্ডন টেইলর তাঁর দলের প্রশংসা করেন। টেইলর বলেন, ‘প্রথম ম্যাচের থেকে এই ম্যাচের প্যারফর্মেন্সের বেশ পরিবর্তন এসেছে।‘
তিনি আরো জানান, দলের সবাই মাঠে নিজের সেরাটা দিয়েছে। আমি ভাবিনি আমরা জয় পাবো, কিন্তু ইনিংসের প্রথম অংশের খেলার পর মনে হয়েছিলো ম্যাচ জয়ের পঞ্চাশ শতাংশ সম্ভাবনা আছে। এই জয়ের জন্য আমার দৃঢ় সংকল্প ছিলাম।
ব্রেন্ডন টেইলর পরবর্তী ম্যাচে দলে আরো বেশি উন্নতি দেখতে চান। তিনি জানান, ব্যাটিং ইউনিট হিসেবে পাওয়ার প্লেতে আরো রান তুলে মিডল অর্ডারের উপর চাপ কমাতে হবে। আর দলীয় সংগহ ১৪০-১৫০ করার জন্য বড় জুটির বিকল্প নেই।
জিম্বাবুয়ের পক্ষে সর্বোচ্চ রান করেছিলেন তিনাশে কামুনহাকামভে। তিনি ৪০ বলে ৩৪ রান করেছিলেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান এসেছিলো রেগিস চাকাভার ব্যাট থেকে। তিনি করেছিলেন ১৮ রান।
পাঁচ বছর পর দলে ফিরিয়ে দূর্দান্ত পারফর্মের পর সবার মনে একটাই প্রশ্ন ছিলো এতোদিন কোথায় ছিলেন লুক জোঙ্গে। মাথা এবং চোখের ইনজুরির কারণে জাতীয় দলে বাইরে ছিলেন তিনি। এই ইনজুরির কারণে দমে যাননি, বরং দলে ফিরে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটে ইতিহাস তৈরি করেছেন লুক জোঙ্গে। নিজের স্বপ্ন পূরণ করেছেন। তাঁর আরেকটি স্বপ্ন পূরণ হবার বাকি রয়েছে তা হলো আইপিএলে খেলা।
এই ম্যাচে পারফর্ম করার পর চার বছর আগে তাঁর আইপিএল খেলতে চাওয়া একটি টুইট ভাইরাল হয়। সেখানে তিনি জানান তিনি আইপিএল খেলতে চান। মাঠে ২৬ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডারেরে পারফর্মেন্স সবার মন কেড়েছে। ডেথ ওভারে বোলিংয়ের সময় গতির পরিবর্তন এবং লাইন লেন্থের বেশ ভালো রেখে পাকিস্তানকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন তিনি।