৯ এপ্রিল।
সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইন্সে তখন বৃহষ্পতিবার সকাল। হঠাৎ করেই স্থানীয় ভূ অধিদপ্তর থেকে সতর্কতা ঘোষনা করা হলো-অগ্নুতপাত হতে পারে।
কেসরিক উইলিয়ামস তখন বাড়িতেই ছিলেন। বিকেলের মধ্যে সবাইকে রেড জোনের বাইরে নিয়ে এলেন। হাফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন। কিন্তু সেটা ছিলো ভয়াবহ এক অভিজ্ঞতার শুরু মাত্র। এরপর সারা রাত ধরে মরুভূমির মতো তপ্ত হাওয়া, গরম বৃষ্টি এবং ছাইয়ে ঢেকে যাওয়া। শ্বাসকষ্ট নিয়ে কেসরিক হাসপাতালেও ভর্তি হয়েছিলেন।
কেসরিকের মতো সামর্থ থাকলে আর দশ জন হয়তো হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর উড়াল দিতেন নিরাপদ কোনো দেশে। কিন্তু ক্যারিবিয় এই অলরাউন্ডার তা করেননি। পরিবারের সবাইকে পাঠিয়ে দিয়ে এখন তিনি নেমে পড়েছেন মানুষের জন্য কিছু করতে। এখন সেন্ট ভিনসেন্টে সুপেয় পানির প্রচন্ড অভাব। আর কেসরিক এই সময়ে তার বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের বন্ধুদের কাছ থেকে তহবিল জোগাড় করে কাজ করছেন মানুষের জন্য।
কেসরিক উইলিয়ামস বলছেন, ক্রিকেটের চেয়েও বড় এখন তার কাছে এই মানুষের পাশে থাকা।
গত ৯ এপ্রিল লা সোফ্রিয়েরে নামের এই আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্নুতপাত শুরু হয়। এতে কেউ মারা না গেলেও দ্বীপরাষ্ট্রটিতে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। এর আগেই এখানে করোনা সংক্রমণের কারণে লোকেদের জীবিকা সংকুচিত হয়ে এসেছিলো। তার মধ্যে এই অগ্নুতপাত ভয়াবহ বিপদে ফেলেছে লোকেদের। এই স্থানীয়দের মধ্যেই ছিলেন কেসরিক।
তিনি সেই সময়ের বর্ননা দিয়ে বলেছেন, ‘ভয়ানক গরম লাগছিলো। দুবাইয়ের মধ্যগ্রীষ্মের বিকেলের মত গরম। আমরা এরকম আবহাওয়া আগে কখনো দেখিনি। এর সাথে গরম বাতাস আসছিলো এবং গরম পানির বৃষ্টি। চারদিক ছাইয়ে ঢেকে যাচ্ছিলো। অনেকের মতো আমারও শ্বাসকষ্ট হয়েছে। আমাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিলো। আমার অ্যাজমার সমস্যা ছিলো না। তারপরও ভালোভাবে নিশ্বাস নিতে পারছিলাম না। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে, এটা (শ্বাসকষ্ট) বেশিক্ষন থাকেনি। এখন ভালো আছি।’
আর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েই কেসরিক ছুটে গেছেন লোকেদের ভেতরে। এখন সেখানে পানির সংকট চলছে। কেসরিক লোকেদের পানির বোতল কিনে দিচ্ছেন। সে জন্য নিজের টাকা ছাড়াও বন্ধুদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন, ‘পানি যে দুষিত হয়ে গেছে, তা বলা নিশ্চিত নয়।
তবে সন্দেহ করা হচ্ছে, পানিতে ধাতব পদার্থ মিশে গেছে। ফলে লোকেদের এখন খাওয়ার জন্য বোতলের পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। আমি এটাই গোছানোর কাজ করছি। আমার ইংল্যান্ড ও বাংলাদেশে কিছু ভালো বন্ধু আছে। ওরা ভালো সাড়া দিয়েছে। এটা দিয়ে গোছাচ্ছি আমরা।’
কেসরিকের এই তৎপরতার প্রশংসা করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডসহ অনেকেই। এখন অনেকেই তাকে দেখে এই কাজে এগিয়ে আসছেন। কেসরিকের মাধ্যমে ক্রিকেট দুনিয়া এখন এই দূর্গতদের সম্পর্কে জানছে।
২২ গজের চেয়েও বড় একটা লড়াই লড়ছেন এই অলরাউন্ডার।