চতুর্থ ইনিংসের শতক ঝড়

একটা প্রশ্ন ছিল। আচ্ছা বলুন তো ক্রিকেট মাঠে সবচেয়ে কঠিন সময় কোনটি? নানানরকমের উত্তরের প্রত্যাশা করাটা নিতান্ত ভুল হবে না। তবে বিশেষ মত টেস্টের চতুর্থ দিন ব্যাটিং করা সবচেয়ে কঠিনতম কাজ। হ্যা, বনেদী এই ফরম্যাটে টানা পাঁচদিনের ধকল তো আর পিচ নিতে পারে না। ফেটে যায়, শুষ্ক হয়ে যায়। আরও কত কি।

একটা প্রশ্ন ছিল। আচ্ছা বলুন তো ক্রিকেট মাঠে সবচেয়ে কঠিন সময় কোনটি? নানানরকমের উত্তরের প্রত্যাশা করাটা নিতান্ত ভুল হবে না। তবে বিশেষ মত, টেস্টের চতুর্থ দিন ব্যাটিং করা সবচেয়ে কঠিনতম কাজ। হ্যা, বনেদী এই ফরম্যাটে টানা পাঁচদিনের ধকল তো আর পিচ নিতে পারে না। ফেটে যায়, শুষ্ক হয়ে যায়। আরও কত কি।

এর মাঝেই ব্যাটারদের ব্যাট করতে হয়। হয় ম্যাচ বাঁচাতে, না হয় ম্যাচ জিততে। কত সমীকরণ, কত পরিকল্পনার মারপ্যাঁচ এড়িয়ে তবেই তো ব্যাট করে যেতে হয়। তবে কিছু ব্যাটার যেন বরাবরই ভিন্ন। হঠাৎ করেই তাদের মধ্যে মারকাটারি ভাবটা চলে আসে। তখন পোশাক কিংবা বলের রঙ সবকিছুই যেন মিছে। টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে শতক হাঁকানো ব্যাটারদের নিয়েই থাকছে আজকের আয়োজন।

  • জো ডার্লিং (অস্ট্রেলিয়া)

১৮৯৮ সালের একটি ম্যাচ। মুখোমুখি হয়েছিল দুই চিরপ্রতিদ্বন্দী অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। বেশ একটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছিল দুই দলের মাঝে। প্রথম ইনিংসে ব্যাট করে ইংল্যান্ড। মোটামুটি ৩৩৫ রান জড়ো করে।

নিজেদের প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া মাত্র ২৩৯ রানে। পরের ইনিংসটা অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা নিজেরদের করে নেয়। ফলে অস্ট্রেলিয়ার সামনে টেস্ট জয়ের লক্ষ্যমাত্রা গিয়ে দাঁড়ায় ২৭৫ রান।

চতুর্থ ইনিংসে সে রান তাড়া করে জেতা সহজ নয়। তবে সে কাজটাই যেন সহজ করে দেন অজি ওপেনার জো ডার্লিং। মাত্র ৮৫ বলে সেঞ্চুরি হাঁকান। তবে সেখানেই থেমে যাননি। নিজের রানের সাথে আরও ৬০ খানা রান যুক্ত করে দলকে জয়ের ভীত গড়ে দিয়েই তবে আউট হন ডার্লিং। ম্যাচটা পরবর্তীতে ছয় উইকেটে জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া।

  • ম্যাথু হেইডেন (অস্ট্রেলিয়া)

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির ক্রিকেট মাঠটি সম্ভবত তাদের জন্যে সবচেয়ে বেশি সৌভাগ্য বয়ে আনে। কিংবা মাঠটি অজি খেলোয়াড়দের একেবারে হাতের তালুর মধ্যেই থাকে।

জো ডার্লিং চতুর্থ ইনিংসে ক্রিকেট ইতিহাসের পঞ্চম দ্রুততম সেঞ্চুরিটা করেছিলেন সিডিনিতে। আবার তাঁরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে চতুর্থ দ্রুততম শতকটা করেছেন আরেক অজি ওপেনার ম্যাথু হেইডেন।

সেটা করেছিলেন তিনি ২০০৩/০৪ মৌসুমে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। চতুর্থ ইনিংসে ১৭২ রানের টার্গেট নিয়ে ব্যাট করতে নামে অস্ট্রেলিয়া। হেইডেন সম্ভবত চিন্তা করেছিলেন দ্রুতই ম্যাচ শেষ করবার। তাইতো মাত্র ৮৪ বলে তুলে নেন সেঞ্চুরি। তিনি সেদিন ম্যাচ শেষ করেই মাঠ ছেড়েছিলেন। ১০১ রান করে অপরাজিত ছিলেন ৮৫ বল খেলে।

  • শহীদ আফ্রিদি (পাকিস্তান)

‘বুম বুম’ ডাকনামে বেশ বিখ্যাত ছিলেন পাকিস্তানের অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদি। মূলত তাঁর মারকাটারি ব্যাটিংয়ের জন্যেই এমন তকমা। ফরম্যাটে ভিন্নতা আসলেও আফ্রিদি নিজ স্বকীয়তায় ছিলেন অবিচল।

যখনই সময় পেয়েছেন। তখনই হাত খুলে মেরে খেলেছেন। তেমনই এক টেস্ট ম্যাচ তিনি খেলেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। তবে তাঁর ধুন্ধুমার ব্যাটিং সেদিন খুব একটা কাজে আসেনি।

পাকিস্তান নিজেদের প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৪৪ রানে অলআউট হয়ে যায়। এর ফলে চতুর্থ ইনিংসে গিয়ে তাদের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা গিয়ে ঠেকে ৫৭২ রানে। আফ্রিদি হয়ত সেদিন ব্রত করেছিলেন পাকিস্তানকে ম্যাচ জেতানোর।

বাইশ গজে নেমেই তিনি ক্যারিবিয়ান বোলারদেরকে তুলোধুনো করেন। মাত্র ৭৮ বলেই তুলে নেন সেঞ্চুরি। তবে শেষ রক্ষা আর হয়নি। ১২২ রানে আফ্রিদির ইনিংস থেমে গেলে ২০০৫ সালের সে টেস্ট ম্যাচটি হারতে হয়েছিল পাকিস্তানকে।

  • জনি বেয়ারস্টো (ইংল্যান্ড)

একটা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে ইংলিশ ক্রিকেট। নতুন কোচ আর নতুন অধিনায়কের উপর দায়িত্ব পড়েছে সাদা পোশাকের ইংল্যান্ড দলকে সামলাবার। আর পরিবর্তনের শুরুতেই ইংলিশ দল সমর্থকদের উপহার দিয়েছে এক অবিস্মরণীয় জয়। টেস্টের পঞ্চম দিনে ২৯৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয় ছিনিয়ে নেয় ইংল্যান্ড।

তবে এই জয়ের ভিত্তি স্থাপন করে দিয়ে গিয়েছিলেন জনি বেয়ারস্টো। মিডল অর্ডারে ব্যাট করতে নেমে তিনি করে ফেলেন টেস্টের ইতিহাসের চতুর্থ ইনিংসে দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি।

মাত্র ৭৭ বলে তিনি শতকের মাইলফলক পেড়িয়ে যান। তাছাড়া আউট হওয়ার আগে আরও ৩৬ খানা রান করে তিনি দলকে জয়ের বন্দরের দিকে ঠেলে দেন। বাকি কাজটা করেন নয়া অধিনায়ক বেন স্টোকস।

  • গিলবার্ট জেসপ (ইংল্যান্ড)

টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে দ্রুততম সেঞ্চুরি করার রেকর্ডটা নিজের দখলেই রেখেছেন গিলবার্ট জেসপ। ইংল্যান্ডের এই ক্রিকেটার রেকর্ডটি গড়েছিলেন ১৯০২ সালে। চিরচেনা প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওভালে। নানান নাটকীয়তায় সে ম্যাচটা ইংল্যান্ড জিতেছিল মাত্র এক উইকেটে। দুই দলই একবার করে দুইশ রানের নিচে অলআউট হয়ে যায়।

চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করতে নামা ইংল্যান্ডে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৬৩ রান। টেস্টের চতুর্থ দিন বিবেচনায় এই বিশাল লক্ষ্য তাড়া করার কাজটা সহজ করে দেন জেসপ।

তিনি মাত্র ৭৬ বলে শতক হাঁকান। ১০৪ রানে যখন জেসপ আউট হন তখন প্রায় জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। তবে সেখান থেকে ম্যাচটা খানিক কঠিন হয়ে যায়। তবে ম্যাচটি শেষমেশ জিতে নেয় ইংল্যান্ড।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...