ওয়াইল্ড কার্ডের অপেক্ষায় তাঁরা

২০১২ অলিম্পিক গেমস পর্যন্ত বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদদের জন্য অলিম্পিক গেমসে খেলার জন্য ভরসার নাম ছিল ’ওয়াইল্ড কার্ড’। চারবছর পর ২০১৬ সালে এসে সেই অচলায়তন ভাঙেন সিদ্দিকুর রহমান। দেশসেরা এই গলফার প্রথমবারের মতো কোটাপ্লেসের মাধ্যমে সরাসরি অলিম্পিকে খেলার রেকর্ড গড়েন।

ধনীদের খেলা হিসেবে পরিচিত গলফে বাংলাদেশ নামক যে ছোট একটা দেশ রয়েছে তা জানতে পারে দুনিয়ার মানুষ। ইউরোপ আমেরিকার মানুষের কাছে বাংলাদেশ একটি দরিদ্র দেশের নাম। কিন্তু সিদ্দিকুর সেই পথে নতুন দিশা হয়ে দেখা দিয়েছেন। চারবছর পর তার দেখিয়ে দেওয়া পথে হেঁটেছেন রোমান সানা। এই আর্চার খেলাটির প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে সরাসরি অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেন।

২০১৮ সালের বিশ্ব আর্চারি চ্যাম্পিয়নশীপে ব্রোঞ্চ পদক জিতে বাংলাদেশকে আরো একটু উচ্চতায় নিয়ে যান। কোটা প্লেস পদ্ধতিতে অলিম্পিকে খেলার ধারা টানা দুটি অলিম্পিকে অব্যহত থাকায় লজ্জাটা কিছুটা হলেও কমেছে। কারণ ওয়াইল্ড কার্ড নামের সুযোগটাকে অনেকে দান বলতে চান। কারণ প্রতিটা দেশের আবেদনের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) খেলোয়াড়দের যোগ্যতা না থাকা স্বত্তেও এই সুযোগ দিয়ে থাকেন। কারণ যারা নিজেদের প্রমাণ করতে পারেন তারা কোটা প্লেসের মাধ্যমেই সরাসরি খেলার সুযোগ লাভ করেন।

রোমান সানা ছাড়া বাকিদের এখন অপেক্ষা করতে হচ্ছে ওয়াইল্ড কার্ডের। কারণ বেশিরভাগ খেলায়ই খেলোয়াড়রা সরাসরি খেলার যোগ্যতা হারিয়েছেন। সর্বশেষ ওয়ার্ল্ড শুটিং চ্যাম্পিয়নশিপে কোটা হাতছাড়া করেন আবদুল্লাহ হেল বাকি, শাকিল আহমেদ, সৈয়দা আতকিয়া হাসান দিশারা।

স্কোরে কিছুটা উন্নতি হলেও বলার মতো কিছুই করতে পারেনি তারা। আরো একটা আন্তর্জাতিক আসরে অংশগ্রহনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হয়েছে শুটারদের। যদিও এরই মধ্যে সাতার থেকে জুনাইনা আহমেদ ও আরিফুল ইসলামকে ওয়াইল্ড কার্ড দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আইওসি। কার্ডে খেলার সর্বমোট সংখ্যাটা ছয় কিংবা আট হতে পারে।

যা নির্ভর করছে আইওসির সিদ্বান্তের উপর। বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ) ওয়াইল্ড কার্ডের জন্য যাদের নাম পাঠিয়েছিলেন তারা হলেন, শুটিংয়ে আব্দুল্লাহ হেল বাকি, সৈয়দা আতকিয়া হাসান দিশা, আর্চারীতে ইতি খাতুন, মেহেনাজ আক্তার মোনেরা, বিউটি রায়, ভারোত্তোলনে মাবিয়া আক্তার সীমান্ত, কারাতে হুমায়ারা আক্তার অন্তরা, বক্সিংয়ে রবিন মিয়া। সাতারু আরিফুল ও জুনাইনাকে বিশ্ব সাতার ফেডারেশন (ফিনা) ওয়াইল্ড কার্ড পাঠিয়েছে বলে বাংলাদেশ সাতার ফেডারেশন সুত্রে জানা গেছে।

এর পাশাপাশি অ্যাথলেটিক্সেরও কার্ড চাওয়ার সুযোগ নেই। আইওসি নির্ধারন করে কাদেরকে অলিম্পিক গেমসে পাঠানো হবে। তবে এরপরও বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক ফেডারেশন একজনের নাম পাঠিয়েছে। বিওএ জানিয়েছে, যাদের নাম ওয়াইল্ড কার্ডের জন্য পাঠানো হয়েছে তারা সর্বশেষ এসএ (সাউথ এশিয়ান) গেমস থেকে পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে সুযোগ পেয়েছেন। কোটা প্লেসের মাধ্যমে সুযোগ পেলেও আর্চারীতে সম্ভাবনা বিচেনায় একাধিক কার্ডের জন্য আবেদন করা হয়েছে।

সুযোগ থাকলে ফেন্সিংয়ে কার্ডের জন্য আবেদন করা হতো বলে জানা গেছে। মূলত যারা কোয়ালিফাই করে নিজেদের প্রমাণ করে তারা কোটা প্লেসের মাধ্যমে সরাসরি অলিম্পিকে খেলার সুযোগ পেয়ে থাকেন। যারা নিজেদের প্রমাণে ব্যর্থ হয় তাদের জন্য বিশেষ ব্যস্থাপনায় খেলার নাম হচ্ছে ওয়াইল্ড কার্ড। পাক্কা এক বছর পিছিয়ে আগামী ২৩ জুলাই থেকে ৮ আগষ্ট পর্যন্ত জাপানের টোকিওতে এবারের অলিম্পিক গেমস মাঠে গড়ানোর কথা রয়েছে। যদিও করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব খুব একটা কমেনি। এভাবে অনিয়ন্ত্রিত থাকলে গেমসের ভবিষ্যতে নিয়েই দেখা দেবে অনিশ্চয়তা। যেমন করে সাম্প্রতিক সময়ের পারফরম্যান্সে নিজেকে অনিশ্চিত করে ফেলেছেন রোমান সানা।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সর্বশেষ এসএ গমেস আর্চারীতে ১০ টি ইভেন্টে অংশ নিয়ে সবকটিতে স্বর্নপদক জয় করে বাংলাদেশ। সেখানে অন্তত:পক্ষে তিনটি স্বর্নে সরাসরি অবদান রয়েচে রোমানের। এর আগে দেশের ও দেশের বাইরে একাধিক আন্তর্জাতিক আসরে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। কিন্তু দেড় বছর ধরে নিজেকে হারিয়ে খুজছেন।

জাতীয় আসর থেকে শুরু করে সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমসে দেখা পাননি স্বর্নের। অলিম্পিক গেমসের আগে তাকে আরও বেশি সুযোগ দেওয়ার পক্ষে ফেডারেশনের কর্মকর্তারা। কিন্তু রোমানকে নিয়ে অনিশ্চয়তা যেন কাটতেই চাইছেনা। জার্মান কোচ মার্টিন ফ্রেডরিখও পারছেন না প্রিয় শিষ্যকে হারিয়ে ফেলা পথের দিশা দিতে। রোমানের প্রিয় ইভেন্ট রিকার্ভ এককের পাশাপাশি দলগত ইভেন্টে বাংলাদেশ ওয়াইল্ড কার্ড চাইছে।

আগামী ১৭-২৩ মে সুইজারল্যান্ডের লুসানে আর্চারী বিশ্বকাপে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই আসর থেকে দলগত ইভেন্টে ওয়াইল্ড কার্ডের অপেক্ষা করছে বাংলাদেশ। এছাড়া গত দুই বছরের পারফরম্যান্সের উপর ভিত্তি করে ভারোত্তোলন থেকে সীমান্তর ওয়াইর্ল্ড কাড পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে।

ট্রিপারটিটি কমিশন (আন্তর্জাতিক শুটিং স্পোর্ট ফেডারেশন, আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি ও টোকিও অলিম্পিক কমিটির সমন্বয়ে গঠিত এই কমিটি) মিলিতভাবে স্বিান্ত নিয়ে এখন কয়টি কার্ড দেয় সেটাই দেখার বিষয়। যারা অপেক্ষা করছেন তাদের মধ্যে হতাশ হতে পারেন একাধিক খেলোয়াড়। আগামী ১০ থেকে ১৫ মে’র মধ্যে জানা যাবে কারা ওয়াইল্ড কার্ডের মাধ্যমে অলিম্পিকে খেলার সুযোগ পাচ্ছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link