বাম পাশের ছবির ক্রিকেটারের নাম তাবিশ খান। জিম্বাবুয়ের হারারেতে পাকিস্তানের টেস্ট ক্যাপ পেলেন তিনি। উইকেট পেলেন নিজের প্রথম টেস্ট ওভারেই। এই তাবিশ মনে করিয়ে দিলেন পাশের ছবির ভদ্রলোককে। নাম, ইওয়ার্ট আস্তিল।
আগে তাবিশের কথা বলি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার অভিষেক ২০০৩ সালের জানুয়ারিতে! ভুল পড়ছেন না। আবার চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন। সেদিন তার বয়স ছিল ১৮ বছর ২৭ দিন। টেস্ট অভিষেকের তার বয়স ৩৬ বছর ১৪৬ দিন। উপমহাদেশের বয়স তো, সত্যিকারের বয়স ৪০-এর কাছাকাছি হওয়ার কথা। এই বয়স দেখে যদি চোখ কপালে উঠে যায়, তাহলে আরেকটু শুনুন, তিনি একজন স্পেশালিস্ট পেসার!
গোধূলিবেলায় যেন নতুন সূর্যোদয়। দেড় যুগের বেশি প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে ১৩৭ ম্যাচ খেলে ৫৯৮ উইকেট নেওয়ার পর অবশেষে টেস্ট অভিষেক!
পাকিস্তানের প্রধান প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট আসর কায়েদ-ই-আজম ট্রফিতে ৫০০ উইকেট শিকারী একমাত্র বোলার তিনি। ২০০৯ থেকে ২০১৮, এই সময়টাতেই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার শিকার ছিল ৪৯৫ উইকেট, অসাধারণ গড় (২২.০৯) ও স্ট্রাইক রেটে (৪২.৯০)।
তাবিশের সংখ্যাগুলো দেখে যদি বিস্ময়ে হাবুডুবু খেতে থাকেন, আস্তিলের রেকর্ড জানলে হয়তো ডুবেই যাবেন!
১৩৭ প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে টেস্ট অভিষেক তাবিশের। অনেকের মনে কৌতূহল জাগতেই পারে, সবচেয়ে বেশি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে টেস্ট অভিষেক কার। পাকিস্তানের রেকর্ডটি খালিদ ইবাদুল্লাহর। ২১৮ প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে তার অভিষেক হয়েছিল ১৯৬৪ সালে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। অভিষেক ইনিংসে খেলেছিলেন ১৬৬ রানের ইনিংস। তবে খালিদও বিশ্বরেকর্ডের ধারেকাছে নেই।
বিশ্বরেকর্ডটি ইওয়ার্ট আস্তিলের। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, ৪২৪টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলার পর তবেই প্রথম টেস্ট খেলার স্বাদ পেয়েছিলেন এই ইংলিশ অলরাউন্ডার!
১৯০৬ সালে তার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক। ১৯২৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জোহানেসবার্গে টেস্ট অভিষেক। বয়স তখন ৪০ ছুঁইছুঁই। শেষ পর্যন্ত ৯টি টেস্ট খেলতে পেরেছিলেন তিনি। সবকটিই দেশের বাইরে।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে লেস্টারশায়ারের হয়ে তার ৩৩ বছরের ক্যারিয়ার। সব মিলিয়ে খেলেছেন ৭৩৩টি ম্যাচ। রান করেছেন ২২ হাজার ৭৩৫, উইকেট ২ হাজার ৪৩২টি।
এই আস্তিল ছিলেন বর্ণাঢ্য এক চরিত্র। ক্রিকেটে ছিলেন দুর্দান্ত অলরাউন্ডার, বিলিয়ার্ডে চ্যাম্পিয়ন। গানের জগতেও ছিলেন অলরাউন্ডার। কণ্ঠ ছিল দারুণ, সঙ্গে বাজাতেন পিয়ানো, ব্যাঞ্জো ও ইউকেলেলে – আর হ্যাঁ, আর্মি অফিসারও ছিলেন, দুটি বিশ্বযুদ্ধেই অংশ নিয়েছিলেন।
এই বেলা ডন শেফার্ডকেও নিয়েও দুটি লাইন লিখে যাই। আস্তিল তো তবু ৪২৪ ম্যাচ খেলার পর টেস্ট খেলতে পেরেছিলেন। গ্ল্যামরগনের কিংবদন্তি শেফার্ড ৬৬৮টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন, ২ হাজার ২১৮ উইকেট নিয়েছেন। কখনোই টেস্ট খেলার সৌভাগ্য হয়নি। টেস্ট খেলতে না পারা ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ ও সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার রেকর্ড তার।
ভবিষ্যতে কখনও সময়-সুযোগ হলে আস্তিল ও শেফার্ডকে নিয়ে আরও লিখব।
– ফেসবুক থেকে