পেপ গার্দিওলা তার কোচিং ক্যারিয়ারে সবচেয়ে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। এখন আন্তর্জাতিক বিরতিতে তিনি নিশ্চয়ই বসে বসে ভাবছেন, কোথায় কী ভুল হলো। কিছুদিন আগে মজা করে তিনি বলেছিলেন, ‘প্রতি দুই সপ্তাহে আমি একটা বিরতি চাই, এটা আমার ভালো লাগে।’
আর এইবার তিনি সেটা পাচ্ছেন এমন একটা সময়ে যখন সিটির পারফরম্যান্সে টানা চারটি হারের ধাক্কা। গত মৌসুমে পুরো লিগে যে চারটি ম্যাচ হারেনি, এবার একই সংখ্যার হারে সব হিসাব পাল্টে গেছে।
ডিফেন্সের দুর্বলতা এখন স্পষ্ট। সাম্প্রতিক হারে স্পার্স, বোর্নমাউথ, স্পোর্টিং আর ব্রাইটনের বিরুদ্ধে ১০ গোল হজম করেছে সিটি। গার্দিওলার সেই বিখ্যাত ‘কন্ট্রোল’ – এই কয়েক সপ্তাহে যেন হারিয়ে গেছে। সবচেয়ে বড় ধাক্কা এসেছে রদ্রির অনুপস্থিতিতে।
তার সাথে সিটি ৭৪ শতাংশ ম্যাচ জিতেছে, কিন্তু তাকে ছাড়া সেই হার নেমে গেছে ৫৮ শতাংশে। ব্রাইটনের বিপক্ষে সিটির ৬০ শতাংশ বল দখল ছিল, তবুও তাদের হারতে হয়েছে। মিডফিল্ডে কন্ট্রোল ফেরাতে হবে, বিশেষ করে সেই অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের সাহায্যে যারা জানে কীভাবে ম্যাচের গতিপথ নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসা যায়।
অন্যদিকে, হালান্ডের ওপর ভরসা খুবই বেশি হয়ে যাচ্ছে। সে আবারও প্রিমিয়ার লিগে দ্রুততম ৭৫ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেছে, কিন্তু তার পাশে থাকা খেলোয়াড়দের সাপোর্ট এখনো অনুপস্থিত। হালান্ডের পিছনে জোস্কো গার্দিওল আর কোভাচিচ গোল স্কোরিংয়ের দিক থেকে এগিয়ে।
তাতেই প্রমাণিত হয় যে সিটির আক্রমণভাগের খেলোয়াড়েরা খুব বেশি গোল দিচ্ছে না। ফোডেনের আগের সেই ঝলক অনুপস্থিত, গুন্দোগান আর তেমন সাহসী না, আর সাভিনহো – অনেক সম্ভাবনা দেখিয়েও গোল করতে পারছে না।
ডিফেন্সের অবস্থা আরেক ধাপ খারাপ। ইউনাইটেডের চেয়েও সিটির ডিফেন্স বেশি গোল খেয়েছে, যেটা কল্পনাই করা কঠিন। চোটে ভরা দলের ডিফেন্স এখন এলোমেলো হয়ে গেছে।
গার্দিওলা তাই বাধ্য হয়ে ১৯ বছর বয়সী সিম্পসন-পুসেকে মাঠে নামাচ্ছেন। সিটি যখন একটি নির্দিষ্ট ব্যাক থ্রি নিয়ে শুরু করেছিল, তখন সবকিছু স্থির ছিল। নতুন খেলোয়াড়দের অন্তর্ভুক্তিতে গার্দিওলার ডিফেন্সলাইন নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে।
সিটি সুযোগ তৈরি ভালই করছে, কিন্তু শেষ মুহূর্তে গোল মিস করে চলছে। স্পোর্টিংয়ের বিপক্ষে হালান্ড পাঁচটি সুযোগ মিস করেছে, যার মধ্যে একটি ছিল পেনাল্টি। ব্রাইটনের বিপক্ষে সে ফর্মে ফিরেছে ঠিকই, কিন্তু অন্যদেরও এগিয়ে আসতে হবে; তাদের মধ্যে আস্থার অভাব দেখা যাচ্ছে, যা মাঠে ফুটে উঠছে।
সিটির সেই পরিশ্রমী ধারা সাম্প্রতিক ম্যাচগুলোতে দেখা যায়নি। ম্যাচের পর ওয়াকার স্বীকার করেছেন যে সিটি বলের লড়াইয়ে পিছিয়ে গেছে। গার্দিওলার টিম সবসময় কঠোর পরিশ্রমের জন্য পরিচিত ছিল, কিন্তু এখন সেই পরিশ্রমের অভাবে প্রতিপক্ষ সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। গুন্দোগান এটা নিয়েও সতর্ক করেছিল, কারণ প্রিমিয়ার লিগে কোনো সামান্যতম গাফিলতি বরদাস্ত হয় না।
অবশেষে, আলভারেজের প্রসঙ্গ আসে। সিটি তাকে আতলেটিকোতে বিক্রি করে ভালো লাভ করেছে কিন্তু সেই শূন্যস্থান পূরণ করেনি। জানুয়ারিতে নতুন প্রতিভা হিসেবে এচেভেরি আসছে ঠিকই, তবে সে আলভারেজের মতো গোল করতে পারবে কিনা সেটাই প্রশ্ন। বর্তমান চাপের সময়ে একজন অভিজ্ঞ গোলস্কোরার দরকার।
সিটির চ্যাম্পিয়নশিপ ধরে রাখতে কিংবা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এগিয়ে যেতে হলে, আলভারেজ থেকে পাওয়া অর্থ কাজে লাগিয়ে এখনই একজন দক্ষ গোলস্কোরার আনা প্রয়োজন। নতুবা এই বেহাল দশা কেবলই হবে দীর্ঘায়িত।