আঁধারে বিলীন হয়েছিলেন না হতে পারা এক ফুটবল সম্রাট। নাম তাঁর আদ্রিয়ানো লেইতে রিবেইরো, বা সংক্ষেপে আদ্রিয়ানো। একসময় ব্রাজিলের সর্বকালের সেরা প্রতিভাদের একজন হিসেবে বিবেচিত হতেন। ‘দ্য এম্পেরর’ বা ‘সম্রাট’ নামে খ্যাত আদ্রিয়ানো ছিলেন অসাধারণ শক্তিশালী, দ্রুতগতি এবং দুর্দান্ত টেকনিক্যাল একজন খেলোয়াড়।
তাঁর ভয়ঙ্কর বাঁ পায়ের শটে ফুটবল বিশ্বে তিনি কিংবদন্তি হয়ে উঠেছিলেন। এমনকি জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচও তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন যে, ‘আদ্রিয়ানো ছিলেন অপ্রতিরোধ্য এক প্রাণী।’
ইন্টার মিলানে যোগ দেওয়ার পর আদ্রিয়ানোর ক্যারিয়ার আকাশচুম্বী হয়ে ওঠে। সেখানে তিনি ১৭৭ ম্যাচে ৭৪ গোল করেন। দর্শকদের মন জয় করে নেয় তাঁর অনন্য খেলার ধরন। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও তিনি চমক দেখান।
২০০৪ সালে ব্রাজিলের হয়ে কোপা আমেরিকা জিতে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হন। তবে আদ্রিয়ানোর গল্পটি শীঘ্রই করুণ মোড় নেয়। ২০০৪ সালে তাঁর বাবার মৃত্যু ঘটে। এরপর তিনি হতাশায় ভুগতে শুরু করেন।
মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে তিনি মদ্যপানে জড়িয়ে পড়েন। পরিবার থেকে দূরে থাকায় তাঁর কষ্ট আরও বেড়ে যায়। এর প্রভাব তাঁর খেলায় পড়তে থাকে।
ইন্টার মিলান তাঁর পাশে দাঁড়ায়। কিন্তু মাঠের বাইরের লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত আদ্রিয়ানো পিছিয়ে পড়েন। ২০০৮ সালের মধ্যে তিনি ইন্টারের কাছ থেকে দীর্ঘ ছুটি নেন এবং ব্রাজিলে পুনর্বাসনের চেষ্টা করেন।
হোসে মরিনহোর অধীনে তিনি ইন্টার মিলানে ফিরে আসেন। সেখানে কিছুটা পুরনো ফর্ম ফিরে পেলেও তাঁর সংগ্রাম চলতেই থাকে। অত:পর ২০০৯ সালে ইন্টার তাঁর চুক্তি বাতিল করে।
এরপর আদ্রিয়ানো ফ্ল্যামেঙ্গোতে ফেরেন। সেখানে তিনি স্বল্প সময়ের জন্য ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা ফিরে পান। তিনি তার দলকে শিরোপা জিততে সহায়তা করেন।
ফিরেছিলেন ইতালিতে, তাঁর জন্য বিড করে এএস রোমা। ৮ নম্বর জার্সিটাই তাকে তুলে দেওয়া হয়! সেখানে ৭ মাসে মাত্র ৫ ম্যাচ খেলেন তিনি!
মাঠের বাইরের সমস্যাগুলো তাঁর প্রতিভাকে ম্লান করে দেয় বারবার। ২০১১ সালে ব্রাজিলে ফেরেন। এরপর ২০১৬ সাল পর্যন্ত কখনও কোরিয়েন্থাস, কখনও ফ্ল্যামেঙ্গো কখনও বা মিয়ামি ইউনাইটেডে ছিলেন। এই ছয় বছরে খেলেন মাত্র নয়টি ম্যাচ।
ক্যারিয়ার পুনরুদ্ধারের কিছু চেষ্টার পরেও আদ্রিয়ানো আর কখনোই পুরনো ফর্মে ফিরতে পারেননি। তাঁর মানসিক স্বাস্থ্য ও আসক্তির সংগ্রাম সবার সামনে আসে। ফিরে যান বস্তির জীবনে, যুক্ত হয়ে পড়েন অপরাধ জগতে, মাদক চোরাকারবারিদের সাথে সখ্যতা হয়।
ফুটবলের সম্রাট হওয়ার কথা ছিল তাঁর, ব্রাজিলের হয়ে সর্বজয় করার সম্ভাবনা ছিল। ইউরোপে গড়তে পারতেন জমকালো ক্যারিয়ার। স্রেফ মাদকের নেশায় বিলীন হয়ে গেলেন আঁধারের দুনিয়ায়। আজো তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়, ব্রাজিলের ঘিঞ্জি বস্তিতে নেশায় বুঁদ হয়ে আজও তাঁকে পড়ে থাকতে দেখা যায়!