যাদের পায়ে ফুটবলের ভবিষ্যত

প্রতিবছর গোল ডট কম থেকে ৫০ জন ফুটবলেরের একটি তালিকা তৈরি করা হয়। যে তালিকায় উল্লেখ করা হয়ে থাকে ভবিষ্যতের তারকাদের।

প্রতি বছর পুরো ফুটবল বিশ্বের অনুর্ধ্ব-১৯ খেলোয়াড়দের থেকে বেছে নেওয়া হয় মোট ৫০ জন খেলোয়াড়কে। যাদেরকে দেওয়া হয়, ‘নেক্সট সুপারস্টার’ খেতাব। বিশে পা দেওয়ার আগে অনন্য কিছু করে বসলেই তাদের জন্য রয়েছে এই অ্যাওয়ার্ড। এ বছরে ২০০২ সালের ১ জানুয়ারির পর জন্ম নেওয়া ৫০ জন খেলোয়াড়কে দেওয়া হয়েছে এই সম্মাননা। দেখে আসা যাক সেই ৫০ এর মধ্যে থেকে সেরা ৫ জনকে।

  • জুড বেলিংহাম

বেলিংহামকে যখন প্রথম কিনে এনেছিল ডর্টমুন্ড, তখন এক অদ্ভুত ঘটনার দেখা মিলেছিল। জুডের পুরাতন দল ছিল বার্মিংহাম সিটি। ২৫ মিলিয়ন ইউরোর জুড যখন বুরুশিয়াতে যোগ দেন, পরদিনই বার্মিংহাম ঘোষণা দেয় তার ‘২২’ নম্বর জার্সিটিকে অবসরে পাঠানোর। পুরো সোশ্যাল মিডিয়ায় হাসির খেরাক হয়েছিল সে সিদ্ধান্ত। জার্সি তারই উঠিয়ে রাখা হয়, যে ক্লাবের আইকন হয়ে উঠেছেন সময়ের সাথে। ১৭ বছর বয়সী তারকার জন্য এয়ত বড় স্যাক্রিফাইসের প্রয়োজনীয়তা কী?

সত্যি বলতে ছিল। জুড বেলিংহামের ট্রান্সফার ফী-ই তাদের বাঁচিয়ে দিয়েছিল দেওলিয়া হওয়ার হাত থেকে। সমর্থক আর ক্লাবের কাছে তাই ১৭ বছর বয়সেই আইকন তিনি। তাই বলে নিজের প্রতিভা কমে গিয়েছে ভাববেন না।সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হিসেবে খেলা জুড ইতিমধ্যে রেকর্ডবুকে নিজের প্রতিভার সাক্ষর রাখতে শুরু করেছেন। এরই মধ্যে বুরুশিয়ার জার্সিতে সবচেয়ে কম-বয়সী গোলদাতার রেকর্ড তার নামের পাশে। বুরুশিয়ার বুন্দেসলিগা ক্যাম্পেইনের অন্যতম বড় তারকা হয়ে উঠেছেন তিনি।

ইংলিশ মিডিয়ার মতে গত ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তার মতন পারফেক্ট মিডফিল্ডার তৈরি করতে পারেনি ইংল্যান্ড। কিন্তু জুড তৈরি হয়েছেন নিজের তাড়নায়। ‘থ্রি লায়নস’-এর জার্সি গায়ে পরা শেষ তার। সামনের ইউরোতে সব ঠিক থাকলে ইংল্যান্ড দলের মাঝমাঠের কাণ্ডারি হবেন এই জুডই।

  • পেদ্রি

২০১৯ সালে যখন পেদ্রিকে কেনা সমপন্ন করে বার্সেলোনা, তখন লাস পালমাসের ম্যানেজার পেপে মেল ট্রান্সফারটাকে আখ্যা দিয়েছিলেন, ‘বার্সার নতুন যুগ’ হিসেবে। সত্যি বলতে এতে চমকাবার কিছু নেই। বরং ছোটখাটো দল থেকে বড় দলে কোনো ইয়াংস্টার মুভ করলে সাবেক কোচেরা এমনটা বলেই থাকেন।

কিন্তু বার্সেলোনার জার্সিতে অভিষেক হতে না হতেই বোঝা যায় পেপে মেল ভুল কিছু বলেননি। বার্সা সমর্থকদের কাছে পেদ্রির নাম হয়ে যায় ‘নতুন ইনিয়েস্তা’। মাত্র ৫ মিলিয়ন দিয়ে কিনে আনা পেদ্রি রাতারাতি হয়ে উঠলেন ক্যাম্প ন্যুর স্পটলাইট।যদিও এই পেদ্রির শুরুটা হতে পারতো রিয়ালের জার্সিতে। কিন্তু রিয়ালে ট্রায়াল দেওয়ার পর নিজেই সরে এসেছেন সেখান থেকে। রয়্যাল ক্লাবের জার্সিতে নাকি নিজে স্বাচ্ছন্দ্যই বোধ করতে পারেননি। আর সেই তারকা বার্সায় এসে হয়ে উঠেছেন মার্কার ‘সাইনিং অফ দ্যা ডিকেড’।

পেদ্রির মধ্যে চোখে পরার মতো আরেকটি যে ট্যালেন্ট ছিল সেটা হচ্ছে বার্সায় মানিয়ে নেওয়া। মেসি-সুয়ারেজের মতন খেলোয়াড়দের সাথে পাল্লা দিয়ে খেলা সহজ কথা নয়। কিন্তু লিওনেল মেসির সাথে পেদ্রির সম্পর্ক দেখলে মনে হয় কতবছর ধরে একসাথে খেলছেন দুজনে। নেক্সট জেনারেশনের টপ ফাইভে সুযোগ পেতে তাই খুব বেশি একটা কাঠখড় পোড়াতে হয়নি তাঁকে।

  • জিও রেইনা

গত কয়েক মৌসুম ধরে অ্যামেরিকান খেলোয়াড়দের আনাগোনা বেড়েছে ইউরোপিয়ান ফুটবলে। সেই ধারাতেই বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডে এসেছিলেন জিও রেইনা। ক্রিশ্চিয়ান পুলিসিচের পথ ধরে ডর্টমুন্ডে পা রেখেছিলেন জিও।আর এর মধ্যেই বুরুশিয়ার ভরসার পাত্র হয়ে উঠেছেন তিনি। গত মৌসুমে হয়েছিলেন ডিএফবি-পোকাল ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা। এই মৌসুমে আরো বড় হয়েছে তার রোল। আর্লিং হল্যান্ড এবং জ্যাডোন সানচোর সাথে গড়ে ট্রিও বুরুশিয়াকে লাইনে রেখেছে। যদিও দলের অবস্থা তেমন ভালো হয়, কিন্তু জিও রেইনা স্বপ্রতিভায় উজ্জ্বল। এই মৌসুমে ২৪ ম্যাচে ৩ গোল আর ৫ এসিস্ট তার।

  • এডুয়ার্ডো কামাভিঙ্গা

আগস্ট ২০১৯, পিএসজির মুখোমুখি সেন্ট রেনেঁ। যেখানে পুরো চিড়ে খুঁড়ে ফেলার কথা রেনেঁ ডিফেন্স, সেখানে ঢাল হয়ে দাঁড়ালেন এক ১৮ বছর বয়সী এক পুঁচকে ছেলে। তার কাছেই পকেটবন্দী হয়ে থাকল এমবাপ্পে, নেইমার, ডি মারিয়ারা। বিশ্ব দেখেছিল নতুন এক ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের আগমন। শুধু ডিফেন্সিভ মিড বললে ভুল হবে, কামাভিঙ্গা ছিলেন একের ভিতর সব। বক্স টু বক্স মিডফিল্ডারের সংজ্ঞাতেই তাঁকে ফেলা যায় বৈকি।১৮ বছর বয়সী কামাভিঙ্গার হয়েছিলেন ফ্রান্সের তৃতীয় কনিষ্ঠতম খেলোয়াড় অভিষিক্ত খেলোয়াড়, একমাস পরে লেস ব্লিউসের জার্সিতে দ্বিতীয় কনিষ্ঠতম গোলদাতা। অতএব, নিজ জায়গাটা খুব ভালোমতোই তৈরি করে নিয়েছেন বিশ্বে।

ছোট দলের বড় তারকা বলতে যা বোঝায়, তাই হয়ে গিয়েছেন কামাভিঙ্গা। যে কারণে বড় দলের নজরে সর্বদা রিনি। যদিও আপাত দৃষ্টিতে এগিয়ে রাখা হচ্ছে রিয়ালকে। আর দুই এক মৌসুমের মধ্যেই রিয়ালে যোগ দিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

  • আনসু ফাতি

বার্সেলোনার জার্সিতে সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সর্বকনিষ্ঠতম গোলদাতা। স্পেন জাতীয় দলেও সর্বকনিষ্ঠতম গোলদাতা। কথায় আছে রেকর্ড তৈরি হয় ভাঙ্গার জন্য কিন্তু আনসু ফাতি সেটাকে অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছে। তাও তার অভিষেকের মাত্র ১৮ মাসের মাথাতেই।বার্সেলোনা ‘বি’ দলের হয়ে না খেলেও সরাসরি প্রথম দলে সুযোগ পাওয়া মুষ্টিমেয় খেলোয়াড়দের মধ্যে অন্যতম ফাতি। মাত্র ১৬ বছর ২৯৮ দিন বয়সে অভিষেক হয়েছিল তার। আর এরপর থেকে নিজেকে শুধু প্রমাণই করে যাচ্ছেন। বুঝিয়ে দিচ্ছেন, এতোগুলো লেভেল স্কিপ করে সরাসরি দলে সুযোগ দেওয়াটা ভুল ছিল না।

আনসু ফাতি বলতে গেলে আধুনিক উইংগারের প্রতিরূপ। মাঠে গতি, কনফিডেন্স, ডি-বক্সে কাট ইন করে নেওয়া ফিনিশিং; কোনোটাতেই কমতি নেই তার। নভেম্বরে হাঁটুর চোটের আগে বার্সাকে তো একাই টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন ফাতি। মেসি ছিলেন তার সারথি। চোটের কারণে পথ থেকে ছিটকে গেলেও ম্যাচে ফিরলেই আগের রূপ বজায় রাখবেন, এমনটাই আশা সকলের। সবচেয়ে কম বয়সে লা লিগার প্লেয়ার অফ দ্যা মান্থ পাওয়া ফাতিই তাই গোলের চোখে সেরা নেক্সট জেনারেশন স্টার।

এছাড়াও তালিকায় শীর্ষ ১০-এ থাকা বাকি পাঁচজন হলেন যথাক্রমে; ফ্লোরিয়ান রিটজ, র‍্য্যান গ্র্যাভেনবার্চ, জামাল মুসিয়ালা, মোহাম্মদ ইহাত্তারেন ও রেইনার হেসুস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link