অনবদ্য সে এক বাতিগোল

তিনি ফিওরেন্টিনার ইতিহাসের ইতালিয়ান লিগের সর্বাধিক গোল করা খেলোয়াড়। তিনি ফ্লোরেন্সের মানুষদের মহানায়ক ছিলেন। তার সম্মানে ফ্লোরেন্সে একটি ব্রোঞ্জের ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়।

লম্বা চুল, সুদর্শন চেহারা, শক্তিশালী দেহ এবং অদম্য মানসিকতার অধিকারি। না প্রাচীন রোমের কোনো যোদ্ধার কথা বলছি না, বলছি ফ্লোরেন্সের এক নায়কের কথা। যিনি তার পায়ের জাদুতে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন ফুটবল বিশ্বে। যিনি রাঙিয়ে দিয়েছিলেন ইতালির ফ্লোরেন্স শহরকে তার ফুটবলীয় উন্মাদনায়।তিনি আর কেউ নন, তিনি- গ্যাব্রিয়েল ওমার বাতিস্তুতা।

১৯৬৯ সালের, ১ফেব্রুয়ারি আর্জেন্টিনার ছোট্ট শহর রেকোনকিস্তায় বাতিসতুতার জন্ম হয়। রোজারিওর নিউওয়েলস ওল্ড বয়েস ক্লাবের হয়ে ১৯৮৮তে তার ফুটবলের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে তিনি রিভার প্লেট এবং বোকা জুনিয়ার্সের হয়েও খেলেছেন। তবে ইউরোপিয়ান ফুটবলে তিনি নিজের সত্তার জানান দেন ইতালিয়ান ক্লাব ফিওরেন্টিনার হয়ে।

তার ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় তিনি ফিওরেন্টিনার হয়ে খেলেছেন। তিনি ফিওরেন্টিনার হয়ে তিনি মোট ২৬৯টি ম্যাচ খেলেছেন যেখানে তার গোল সংখ্যা ১৬৮টি। ফিওরেণ্টিনার হয়ে তিনি কোপা ইতালিয়া এবং সুপার কোপা ইতালিয়ানা শিরোপা জিতেছেন। তবে তিনি ফিওরেন্টিনার হয়ে কখনও লিগ শিরোপা জিততে পারেননি।

তিনি ফিওরেন্টিনার ইতিহাসের ইতালিয়ান লিগের সর্বাধিক গোল করা খেলোয়াড়। তিনি ফ্লোরেন্সের মানুষদের মহানায়ক ছিলেন। তার সম্মানে ফ্লোরেন্সে একটি ব্রোঞ্জের ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়।

২০০০সালে তিনি রোমার সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেন। রোমাতে এসে তিনি প্রথমবারের মতো ইতালিয়ান লিগ জিততে সক্ষম হন। রোমাতে তিনি ৩ মৌসুম খেলেন। তিনি রোমার হয়ে ৬৩ ম্যাচে ৩০ টি গোল করেন।

এই আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকারের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারও বেশ সফল ছিল। তিনি আর্জেন্টিনার হয়ে মোট ৭৮টি ম্যাচ খেলে ৫৬টি গোল করেছেন। ২০১৬ এর আগে পর্যন্ত তিনি আর্জেন্টিনার ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোল করা খেলোয়াড় ছিলেন। ২০১৬ সালে লিওনেল মেসি তার এই রেকর্ডটি টপকে যায়।

তিনি আর্জেন্টিনার হয়ে তিনটি বিশ্বকাপে খেলেন। তিনটি বিশ্বকাপ খেলে তিনি মোট ১০টি গোল করেন। তিনি আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা। বাতিস্তুতা একমাত্র খেলোয়াড় যিনি দুইটি বিশ্বকাপ আসরে হ্যাটট্রিক করেছেন। তিনি আর্জেন্টিনার হয়ে দুইটি কোপা আমেরিকা, একটি কনমেবল কাপ এবং একটি ফিফা কনফেডারেশন কাপ জিতেছেন। সব শেষে তিনি ২০০৫ সালে তার ফুটবলের যাত্রার ইতি টানেন।

বাতিস্তুতার জীবন কেবলমাত্র ফুটবলের সাফল্যের গল্প নয়, এটি স্বপ্ন দেখার, কঠোর পরিশ্রম করার এবং নিজের প্রতিভাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার। তার এই যাত্রা প্রমাণ করে যে, একজন মানুষের দৃঢ়তা আর নিষ্ঠা তাকে বিশ্বমঞ্চে কীভাবে অমর করে তুলতে পারে।

ফ্লোরেন্সের রাস্তায় এখনও তার নাম উচ্চারিত হয় শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়। আর আর্জেন্টিনার ফুটবল ইতিহাসে তিনি চিরকাল থেকে যাবেন সেই “গোলমেশিন” হিসেবে, যিনি আর্জেন্টিনাকে অনেক গৌরব এনে দিতে সক্ষম হয়েছেন।

Share via
Copy link