দ্বিস্তর টেস্ট কাঠামো, নবাগত শ্রেণিশোষণের দুয়ারে ক্রিকেট

প্রস্তাবিত নিয়ম অনুযায়ী, শীর্ষ সাতটি দল প্রথম স্তরে থাকবে এবং বাকি দলগুলোকে দ্বিতীয় স্তরে রাখা হবে। এই পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য হলো শক্তিশালী দলগুলোর মধ্যে বেশি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলানো। এতে করে দর্শকসংখ্যা এবং রাজস্ব বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে প্রবল। তবে দুই স্তরের মধ্যে যদি পদোন্নতি বা অবনতি না থাকে, তাহলে দ্বিতীয় স্তরের দলগুলোর জন্য শীর্ষ স্তরে উঠার কোনো সুযোগ থাকবে না। এতে ছোট দলগুলো টেস্ট ক্রিকেটের মূলধারা থেকে দূরে সরে যেতে পারে।

টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে বর্তমানে চলছে উত্তপ্ত আলোচনা। প্রস্তাবিত দুই-স্তরভিত্তিক কাঠামো ঘিরে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ক্রিকেটের তিন মোড়ল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) চেয়ারম্যান জয় শাহ এবং অন্যান্য শীর্ষ ক্রিকেট বোর্ডের প্রতিনিধিরা এ নিয়ে শিগগিরই আলোচনা করবেন।

টেস্ট ক্রিকেট দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। টি-টোয়েন্টি ও একদিনের ক্রিকেটের আকর্ষণ বাড়ার কারণে দর্শকদের একটি বড় অংশ ধীরে ধীরে টেস্ট ক্রিকেট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এমন অবস্থায় রাজস্ব আয় এবং দর্শক টানার ক্ষেত্রে শীর্ষ তিন দল ভারত, অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ড নতুন দুই স্তরবিশিষ্ট পদ্ধতির প্রস্তাব এসেছে। আর্থিকভাবে লাভবান করার উদ্দেশ্যে এই পরিকল্পনা তৈরি হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৭ সালের পর এই কাঠামো কার্যকর হতে পারে। তবে এটি আদৌ টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা।

প্রস্তাবিত নিয়ম অনুযায়ী, শীর্ষ সাতটি দল প্রথম স্তরে থাকবে এবং বাকি দলগুলোকে দ্বিতীয় স্তরে রাখা হবে। এই পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য হলো শক্তিশালী দলগুলোর মধ্যে বেশি প্রতিযোগিতা মূলক ম্যাচ খেলানো। এতে করে দর্শক সংখ্যা এবং রাজস্ব বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে প্রবল। তবে সমালোচকরা বলছেন, এতে ছোট দলগুলো টেস্ট ক্রিকেটের মূল ধারা থেকে দূরে সরে যেতে পারে।

তাছাড়া, দুই স্তরের মধ্যে যদি পদোন্নতি বা অবনতি না থাকে, তাহলে দ্বিতীয় স্তরের দলগুলোর জন্য শীর্ষ স্তরে উঠার কোনো সুযোগ থাকবে না। ছোট দলগুলো বড় দলগুলোর সঙ্গে খেলার সুযোগ কম পাবে। এতে তাদের খেলোয়াড়দের দক্ষতা বাড়ার পরিবর্তে সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হতে হবে। অনেক সাবেক ও বর্তমান খেলোয়াড়রা এই পদ্ধতির তীব্র বিরোধিতা করেছেন।

বাংলাদেশি ব্যাটার মমিনুল হক সৌরভ সরাসরি এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলেন, ‘এটি হতাশাজনক। আমরা যদি শক্তিশালী দলের বিপক্ষে না খেলি, তাহলে আমাদের মানোন্নয়ন কীভাবে হবে? ছোট পরিসরে খেললে আমরা একই স্তরে আটকে থাকব।’ তার মতে, টেস্ট ক্রিকেটের আকর্ষণ এবং গুরুত্ব এই প্রস্তাবে হ্রাস পাবে। উইন্ডিজের কিংবদন্তি অধিনায়ক স্যার ক্লাইভ লয়েড আরও কড়া ভাষায় বলেছেন, ‘এটি টেস্ট ক্রিকেটের জন্য ক্ষতিকর। শক্তিশালী দলের বিপক্ষে খেলেই উন্নতি সম্ভব। কিন্তু এই কাঠামো দুর্বল দলগুলোকে উন্নতির পথ থেকে দূরে ঠেলে দেবে।’

সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথও এই পদ্ধতিকে শঙ্কার চোখেই দেখছেন। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলগুলো যদি শক্তিশালী না হয়, তবে ভবিষ্যতে ক্রিকেট মাত্র তিনটি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে।’ তবে সাবেক ভারতীয় কোচ রবি শাস্ত্রী এবং সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক মাইকেল ভন এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মতে, টেস্ট ক্রিকেট বাঁচাতে শক্তিশালী দলগুলোর মধ্যে আরও বেশি প্রতিযোগিতা প্রয়োজন।

শাস্ত্রী বলেন, ‘শীর্ষ দলগুলোর মধ্যে লড়াই টেস্ট ক্রিকেটকে টিকিয়ে রাখবে।’ ভন বলেন, ‘এটি টেস্ট ক্রিকেটের গুণগত মান বাড়াবে এবং ম্যাচগুলো আরও আকর্ষণীয় হবে।’ ছোট দলগুলোর মধ্যে শুধু আয়ারল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড এই পদ্ধতিকে স্বাগত জানিয়েছে। আইরিশ নির্বাচক অ্যান্ড্রু হোয়াইট এই প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, ‘দুই-স্তরভিত্তিক কাঠামো ছোট দলগুলোর জন্য প্রতিযোগিতার সুযোগ বাড়াবে।’

এই দুই স্তরের প্রস্তাব নিয়ে এখনো অনেক ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। কেউ কেউ বলছেন, এটি টেস্ট ক্রিকেটকে নতুন প্রাণ দিতে পারে। তবে বেশিরভাগেরই আশঙ্কা, এটি শুধু বড় দলগুলোকে সুবিধা দেবে এবং ছোট দলগুলোর জন্য বৈষম্যের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আদৌ টেস্ট ক্রিকেট এক নতুন দিগন্তে পা রাখবে ,নাকি ঐতিহ্যবাহী কাঠামো ধরে রাখবে তা সময়ই বলে দেবে।

Share via
Copy link