যত গর্জে তত বর্ষে না – রিয়াল মাদ্রিদ কাগজে কলমে যতই এগিয়ে থাকুক, মাঠের খেলায় তাঁদের চুনোপুঁটির চেয়ে বেশি কিছু মনে হয়নি বার্সেলোনার বিপক্ষে। কোপা দেল রে কিংবা অন্য কোন টুর্নামেন্টে তৃতীয় বা চতুর্থ সারির কোন দলকে যেভাবে সামলায় বার্সেলোনা ঠিক সেভাবেই তাঁরা সামলেছে রিয়ালকে।
আগের এল ক্ল্যাসিকোতেই তো ৪-০ গোলে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের উড়িয়ে দিয়েছিল হ্যান্সি ফ্লিকের শিষ্যরা। সেই ক্ষত শুকানোর আগেই এবার ৫-২ গোলের লজ্জায় প্রতিপক্ষকে ডুবিয়ে মারলো তাঁরা, লস ব্ল্যাঙ্কোসদের পালানোর একটা পথও বোধহয় খোলা নেই।
অথচ শুরুটা হয়েছিল স্বপ্নের মতন, অফসাইড ট্র্যাপ ডিঙিয়ে দুর্ধর্ষ একটা গোল দিয়েছিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। ভিনিসয়াস জুনিয়রের সঙ্গে তাঁর সমন্বয় দেখে নির্ঘাত আরেকটা ট্রফির সুবাস পেতে শুরু করেছিল সমর্থকেরা। কিন্তু এরপর একটা মরুঝড় বয়ে গেলো মাঠে, সেই ঝড়ে পুরোপুরি ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলো দলটা।
২২ মিনিটের মাথায় প্রথম গোলটা করেছিলেন লামিন ইয়ামাল, পরের ৩০ মিনিটের মধ্যেই পাঁচ গোল হজম করে রিয়াল। চোখের পলকে রক্ষণের এমন ভরাডুবির পেছনে বার্সার কৃতিত্বের চেয়ে অবশ্য তাঁদের নিজেদের ভুলটাই বেশি।
ইয়ামালের প্রথম গোলটার কথাই ভাবুন, লেওয়ানডস্কি যখন তাঁকে পাস বাড়িয়েছিলেন তখন তাঁর সামনে পুরো ফাঁকা। প্রশ্ন উঠতে পারে কামাভিঙাকে নিয়ে, কি মনে করে গাভিকে ওমন করে লাথি মারতে গেলেন তিনি? গাভি বল পেলে গোলের তেমন সম্ভাবনাও তৈরি হতো না। আর রাফিনহার তৃতীয় গোল নিয়ে বলার কিছু নেই, ভাস্কুয়েজ, শুয়েমেনি টেরই পাননি কিভাবে কি হলো।
পর পর তিন গোল হজম করে অল হোয়াইটরা যখন বিধ্বস্ত তখন শর্ট কর্নার নিতে গিয়ে রদ্রিগো বলের দখল হারালেন। আরো একবার বিশ্ব তখন দেখেছিল ব্লাউগানা জার্সিধারীদের কেমিস্ট্রি, একেবারে নিখুঁতভাবে চতুর্থ গোল এনে দেন বালদে। সবশেষ গোলটা পুরনো দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি, ডিফেন্ডারদের ফেলে রাখা স্পেসের সদ্ব্যবহার করেছেন রাফিনহা।
এবার অন্তত কার্লো আনচেলত্তিকে দায় নিতে হবে, আগের দেখায় হেরে যাওয়া সত্ত্বেও শিক্ষা নেননি তিনি। একগুঁয়ে বুড়োর মতন অটল ছিলেন নিজের স্টাইলে। তা নাহলে ইনফর্ম রাউল আসেনসিওকে বসিয়ে রাখবেন কেন? কেন-ইবা ভঙ্গুর রক্ষণভাগ নিয়েও ভাস্কুয়েজকে এত উপরে খেলাবেন?
এমনকি সেজনি লাল কার্ড হজম করার পরও সেটার সুবিধা নিতে পারেননি আনচেলত্তি। কেবল বড় বড় নাম আর মুখস্থ ট্যাকটিক্সে যে সফলতা আসে না সেটা এবার না বুঝলে আর কবে বুঝবেন তিনি? অবশ্য বোঝার জন্য আর তাঁকে সময় দেবেন কি না পেরেজ, সেটাও দেখার বিষয় ৷