দশ নিয়মের লাগাম টেনে দিল বিসিসিআই

বিসিসিআই স্পষ্ট জানিয়েছে, কোনো খেলোয়াড় যদি এই নির্দেশনা লঙ্ঘন করেন তাহলে আইপিএলসহ বোর্ড পরিচালিত সমস্ত টুর্নামেন্টে নিষিদ্ধ হতে পারেন তিনি। এমনকি কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে কেটে নেওয়া হতে পারে বেতনও।

ক্রিকেটারদের লাগাম টেনে ধরল বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই)। সময়টা মোটেই ভালো যাচ্ছে না ভারতের। ঘরের মাঠে টেস্টে ৩-০ তে হারিয়ে হোয়াইট ওয়াশের লজ্জা দিয়ে গেছে নিউজিল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতেও ৩-১ ব্যবধানে হেরে ছিটকে গেছে ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল থেকেও। ঘরে বাইরে সবখানেই নাস্তানাবুদ হওয়া ভারতের ড্রেসিংরুমে চলছে অভ্যন্তরীন কোন্দল। খেলোয়াড়দের মধ্যে বাড়ছে দ্বন্দ ও দূরত্ব। এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে ক্রিকেট বোর্ড।

এজন্যই দলে শৃঙ্খলা, একতা এবং ইতিবাচক মনোভাব ফিরিয়ে আনতে, দশটি বাধ্যতামূলক নির্দেশনা জারি করেছে বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই) । সাম্প্রতিক সময়ে দলের পারফরম্যান্সে অবনতি ও কিছু খেলোয়াড়ের নিয়ম লঙ্ঘনের প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিসিসিআই স্পষ্ট জানিয়েছে, কোনো খেলোয়াড় যদি এই নির্দেশনা লঙ্ঘন করেন তাহলে আইপিএলসহ বোর্ড পরিচালিত সমস্ত টুর্নামেন্টে নিষিদ্ধ হতে পারেন তিনি। এমনকি কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে কেটে নেওয়া হতে পারে বেতনও।

শেষ দুই টেস্টের ব্যর্থতার কারণ পর্যালোচনা করতে সম্প্রতিই মিটিংয়ে বসে শীর্ষ কর্তারা। ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা, প্রধান কোচ গৌতম গম্ভীর, নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান অজিত আগারকার, বোর্ড সচিব দেবজিত সাইকিয়ারাও উপস্থিত ছিলেন। সেখানেই চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়দের এই দশটি নির্দেশনা ব্যাপারে অবগত করতে বলা হয়েছে। পরিবারের সাথে সীমিত সময় কাটানোর নির্দেশনার সাথে আছে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞাও।

নতুন নির্দেশনায় খেলোয়াড়দের ঘরোয়া ক্রিকেটে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ঘরোয়া লিগে অংশ নেওয়া ছাড়া জাতীয় দলে বিবেচিত হওয়া যাবে না। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে নির্বাচক কমিটির অনুমতি সাপেক্ষে এর ব্যতিক্রম হতে পারে। সফরের সময় খেলোয়াড়দের টিম বাসে যাতায়াত করতে হবে। পরিবার বা ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে নিতে হবে বোর্ডের অনুমোদন। এছাড়াও খেলোয়াড়দের সঙ্গে ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপক, রাঁধুনি বা নিরাপত্তারক্ষী নেওয়ার ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।

সফরে পরিবারের উপস্থিতির বিষয়েও নতুন নিয়ম আনা হয়েছে। ৪৫ দিনের বেশি দীর্ঘ সফরে স্ত্রী-সন্তানদের সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহ সঙ্গে রাখা যাবে। সংক্ষিপ্ত সফরে এই সময় আরও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিবারের থাকা খরচ বিসিসিআই বহন করলেও অন্যান্য খরচ খেলোয়াড়দের নিজ দায়িত্বে বহন করতে হবে। ট্যুর চলাকালে খেলোয়াড়দের বাণিজ্যিক কার্যক্রম, যেমন বিজ্ঞাপন বা প্রচারণা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

অনুশীলনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক খেলোয়াড়কে পুরো সেশন উপস্থিত থাকতে হবে। অনুশীলন শেষ হওয়ার আগেই চলে যাওয়ার অনুমতি নেই। খেলোয়াড়দের বেঙ্গালুরুর সেন্টার অব এক্সেলেন্সে ক্রীড়াসামগ্রী ও ব্যক্তিগত জিনিসপত্র পাঠাতে হবে। অতিরিক্ত ব্যাগেজ বহনের ক্ষেত্রে খেলোয়াড়দের নিজ খরচে তা বহন করতে হবে। বোর্ডের প্রচারণামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সফরের সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে কোনো খেলোয়াড় দলের থেকে আলাদা হতে পারবে না। কোনো ম্যাচ আগে শেষ হলেও পুরো সফরের সময় খেলোয়াড়কে দলের সঙ্গেই থাকতে হবে।

এসব নিয়ম ভঙ্গ করলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে খেলোয়াড়দের। বিসিসিআইয়ের মতে, এই নির্দেশনাগুলো ভারতীয় ক্রিকেটের অগ্রগতিতে সাহায্য করবে এবং খেলোয়াড়দের জবাবদিহি নিশ্চিত করবে।

Share via
Copy link