মোহাম্মদ মিঠুন — নামটা শুনলেই ব্যঙ্গ করা হাসি হাসবেন কেউ। কেউ বা ট্রল করবেন স্যোশাল মিডিয়াতে। বাংলাদেশ ক্রিকেটে তিনি এমন একটা নাম, যার সঙ্গে হাসি-তামাশার গল্পটা অবিচ্ছেদ্য। কিন্তু, যারা অট্টহাসি দিয়ে তাঁকে ঘিরে ঠাট্টা করেছিল, তাঁদের এখন মুখ লুকানোর জায়গা নেই।
মিঠুনকে ঘিরে তামাশার সেই হাসি একদিন থেমে যাবে — এটা হয়তো কেউ কল্পনাও করেনি। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, মিঠুনই চলতি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) অন্যতম সেরা অধিনায়ক। অধিনায়ক হিসেবে বিপিএলের শিরোপা থেকে মাত্র দু’টো ম্যাচ দূরে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি।
না, হঠাৎ করে পেয়ে যাওয়া কোনো ফ্লুক নয় এটা। মিঠুন অধিনায়ক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছেন সেই গত পাঁচ বছর ধরে। ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম মিঠুনকে প্রথম অধিনায়ক বানাল। তখনও চারপাশে যথারীতি কটাক্ষ হল।
মিঠুন জবাব দিলেন। তাঁর অধিনায়কত্বে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম নয় ম্যাচে সাতটি জিতল, হয়ে গেল রানার্সআপ। সবাই হতবাক! খুব বেশি আলোচনার জন্ম না দিলেও প্রশংসিত হলেন মিঠুন।
কাট টু ২০২৪ সালের বিপিএল — সিলেট স্ট্রাইকার্স প্রথম পাঁচ ম্যাচ হেরে গিয়েছিল। তখন সেই ভাঙা তরীর দায়িত্ব দেওয়া হয় মিঠুনকে। মিঠুন আবারও প্রমাণ করলেন তাঁর নেতৃত্বের শক্তি। পরবর্তী ৭ ম্যাচে ৫টি জয় নিয়ে সিলেট স্ট্রাইকার্স প্লে-অফের লড়াইয়ে ফিরলেও তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।
২০২৫ সালে শুরু থেকেই চিটাগং কিংসের কাণ্ডারি মিঠুন। শুরু থেকেই আবারও সেই তামাশা, আবারও ঠাট্টা। ঠাট্টা আর ট্রলে থামেননি মিঠুন। আলোচনার বাইরে ফিনিক্স পাখির মত উড়ে এসে ১১ ম্যাচের মধ্যে আটটিতে জেতালেন দলকে। বিপিএলের সেরা দুই দল হিসেবে খেলবেন প্রথম কোয়ালিফায়ার। বরিশালের বিপক্ষে জিতলেই এখন ফাইনাল। স্বপ্ন মিঠুনের হাতের মুঠোয়।
এর মধ্যেই প্রশ্ন উঠল আরও, অন্যরকম প্রশ্ন। অনৈতিকতার দায়ে কালি লাগল মিঠুনের এতগুলো বছরের ক্যারিয়ারে। মিঠুন মুখে জবাব দিলেন। মাঠে দলকে নিয়ে গেলেন প্রথম কোয়ালিফায়ারে।
তবে, যে কালি তাঁর শরীরে লেগেছে, সেটা যদি মিথ্যা হয়, তাঁর আসল জবাবটা তাঁকে মাঠেই দিতে হয়। মিঠুনদের পৃথিবী সহজ নয়। এখানে প্রতিটা পদে পদে নিজেকে প্রমাণ করতে হয়। মিঠুনের হাতে বিপিএল ট্রফিটা উঠলেই কেবল এবার সকল সমালোচনা, সকল কেলেঙ্কারি, সকল সন্দেহের জবাব দেওয়া যাবেন। এর ফাঁকে মিঠুনকে নিয়ে চাইলে এক পশলা ব্যাঙ্গ করে নিতে পারেন, সময় ফুরিয়ে আসছে!