বীরেন্দ্র শেবাগ, মারকাটারি ব্যাটিংয়ের অপর নাম। ভারতের বহু স্মরণীয় জয়ের নায়ক। কিন্তু অফ স্পিনার হিসেবে তিনি একবার করেছিলেন বাজিমাত। তার ঘূর্ণিতে ভর করে ফাইনালে উঠেছিল টিম ইন্ডিয়া। ঘটনাটা সেই ২০০২ সালের।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আসর সেবার বসেছিল শ্রীলঙ্কায়। প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথমে ব্যাট করতে নামে ভারত। ব্যাট হাতে দলের জন্যে শুভ সূচনাই এনে দিয়েছিলেন বীরেন্দ্র শেবাগ। আগ্রাসনকে পাশ কাটিয়ে তিনি বাইশ গজকে আকড়ে ধরেননি। বরং সেদিনও বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুলেছেন আপন ছন্দে।
ফিফটি করেছিলেন তিনি মাত্র ৪৭ বলে। যদিও তিনি সে ইনিংসটি বেশিদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। ৫৮ রানে তাকে থামতে হয়েছিল। কিন্তু শেষ দিকে যুবরাজ সিংয়ের ৬২ রানের কল্যাণে লড়াই করবার পুঁজি পেয়ে যায় ভারত। স্কোরবোর্ডে জমা হয় ২৬১ রান নয় উইকেটের বিনিময়ে।
সেই লক্ষ্যকেও মামুলি বানিয়ে ফেলেছিল প্রোটিয়ারা, বিশেষ করে হার্শেল গিবস। দূর্দান্ত শতক হাঁকিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে জয়ের পথেই রেখেছিলেন। কিন্তু হুট করেই ঘটে ছন্দপতন। সাধে কি আর প্রোটিয়াদের চোকার্স বলে! চোট পেয়ে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন গিবস। এরপর দৃশ্যপটে হাজির হন বীরেন্দ্র শেবাগ।
গিবস যখন উইকেট ছাড়েন তখন দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ ছিল ১৯২ রান, ইনিংসের ৩৭ তম ওভার শেষ হয়েছে কেবল। ৭৮ বলে প্রোটিয়াদের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল মাত্র ৭০ রান। কিন্তু সহজ কাজটাকে পাহাড়সম কঠিন করে ফেলেন পার্টটাইমার শেবাগ।
গিবসের পর একটা প্রান্ত আগলে রেখেছিলেন জ্যাক ক্যালিস। ফিফটি পেরিয়ে শতকের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তিনিও। কিন্তু শেবাগের ঘূর্ণিতে যেন মাথা ঘুরিয়ে যায় ক্যালিসদের। শেবাগের প্রথম শিকারে পরিণত হন মার্ক বাউচার।
টাইট বোলিংয়ে শেবাগ অতিষ্ঠ করে তুলেছিলেন আফ্রিকান ব্যাটারদের। তাতে করে শেষ ওভারে জয়ের জন্যে প্রোটিয়াদের প্রয়োজন গিয়ে দাঁড়ায় ২১ রানের। শেষ ওভারের জন্যে শেবাগের হাতেই বল তুলে দেন সৌরভ গাঙ্গুলি। অধিনায়ককে এক ফোঁটা নিরাশ করেননি তিনি। তবে শঙ্কা জেগেছিল ম্যাচ ফসকে যাওয়ার।
৯১ রানে ব্যাটিং করতে থাকা ক্যালিস শেবাগের প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকান। ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল বটে। কিন্তু পরের বলেই প্রত্যাবর্তন ঘটে বীরেন্দ্র শেবাগের। ভারতের একমাত্র পথের কাঁটা ক্যালিসের উইকেট শিকার করেন তিনি।
সেই ওভারের শেষ বলেও উইকেট পেয়ে যান শেবাগ। ল্যান্স ক্লুজনার ক্যাচ তুলে দেন মোহাম্মদ কাইফের হাতে। তাতে করে দশ রানের জয় পেয়ে যায় ভারত। ফাইনালে নিজেদের টিকিটও কেটে ফেলে দলটি। মারকুটে ব্যাটার শেবাগের ধুমকেতুর মত অলরাউন্ডিং পারফরমেন্স সেদিন ভারতকে শিরোপার অনেকটাই কাছে নিয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে তাদেরকে শিরোপা ভাগাভাগি করতে হয়েছে। ফাইনাল ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু উপমহাদেশের দুই দলের মধ্যে লড়াই হোক, তেমনটি হয়ত চায়নি প্রকৃতি। তাইতো বৃষ্টির জলে ভাসিয়ে দিয়েছে ফাইনাল ম্যাচকে। কিন্তু বীরেন্দ্র শেবাগের অনবদ্য স্পিনার হয়ে ওঠার সেই স্মৃতি, নিশ্চয়ই এখনও উজ্জ্বল আলোর বিকিরণ ঘটায় ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে।