হিরোরা এখন হাইলাইটস

কেনিয়ার বিরুদ্ধে অভিষেক হল দু’জনের, একেবারে তরতাজা যুবরাজ ব্যাট হাতে মাঠে নামলেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পরের ম্যাচে, ৮০ বলে ৮৪। তবে রানটা নয়, আজও পারলে ইউটিউবে দেখবেন ওই ম্যাচে যুবরাজের শটের ক্লিনিক্যাল অ্যাকুরেসিটা, ডান পায়ে ব্যালেন্স রেখে কী অদ্ভুত সুইফট খেলা । বহু বছর পর কেউ খেললো অমন, প্রতিপক্ষ বিশ্বত্রাস স্টিভ ওয়াহ’র অস্ট্রেলিয়া।

ম্যাচ ফিক্সিংয়ের থাবায় তখন ছাড়খাড় ভারতীয় ক্রিকেট। একে একে খেলোয়াড়দের পদত্যাগ। খারাপ পারফরম্যান্স, অধিনায়ক হিসেবে শচীন টেন্ডুলকারের ইস্তফা-সব মিলিয়ে যেকোনো ক্রিকেট বিশেষজ্ঞই একবাক্যে মেনে নেবেন যে ভারতীয় ক্রিকেটের ওই কটা বছর ছিল এতদিনের ইতিহাসে অন্ধকারতম অধ্যায়।

অধিনায়কত্বের ভার এল সৌরভ গাঙ্গুলির হাতে। ২০০০ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে সৌরভ একটা অদ্ভুত বদল আনলেন দলে। ভারতীয় দলকে এক ঝটকায় গেঁথে ফেললেন কী যেন এক অদৃশ্য সূত্রে।

সৌরভ বুঝতে পারছিলেন ঝিমিয়ে পড়া এই দলটাকে চাঙ্গা করতে দরকার নতুন রক্ত। যারা ওই নীল জার্সিটা পরে আগুন ঝরাতে পারবে বাইশ গজ।  তাই দলে নিয়ে এলেন মাত্র ১৮ বছরের যুবরাজ সিং আর ২১ বছরের জহির খানকে।

কেনিয়ার বিরুদ্ধে অভিষেক হল দু’জনের, একেবারে তরতাজা যুবরাজ ব্যাট হাতে মাঠে নামলেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পরের ম্যাচে, ৮০ বলে ৮৪। তবে রানটা নয়, আজও পারলে ইউটিউবে দেখবেন ওই ম্যাচে যুবরাজের শটের ক্লিনিক্যাল অ্যাকুরেসিটা, ডান পায়ে ব্যালেন্স রেখে কী অদ্ভুত সুইফট খেলা । বহু বছর পর কেউ খেললো অমন, প্রতিপক্ষ বিশ্বত্রাস স্টিভ ওয়াহ’র অস্ট্রেলিয়া।

সৌরভ আর ফিরে তাকালেন না। নিজের শক্ত মেরুদণ্ডে ভর রেখে ফলাফলের তোয়াক্কা না করে, বোর্ডের সকলের বিপক্ষে গিয়ে প্রতিটা টুর্নামেন্টে নিতে শুরু করলেন একের পর এক তরুণ খেলোয়াড়কে। ২০০১-এ নির্বাচন কমিটির মুখের ওপর কার্যত হুমকি দিয়ে ২১ বছরের হরভজন সিং-কে দলে নেওয়া, ২০০১ ত্রিদেশীয় সিরিজে শচীনের চোটের জন্য তরুণ শেবাগকে ওপেনার হিসেবে মাঠে নামানো, ওই বছরই আশিষ নেহরাকে দলে নেওয়া আর ২০০২ সালে তরুণ মোহম্মদ কাইফকে ডেকে আনা দলে – সব মিলিয়ে সাফল্যের তোয়াক্কা না করেই অধিনায়ক সৌরভ তখন কলার তুলে দাদাগিরি করে চলেছেন নিজস্ব ঢঙে। মিডিয়া-সমালোচকদের তুড়ি মেরে ২০০২ ন্যাটওয়েস্ট ট্রফি চলে এল ভারতে, সৌজন্যে সেই শেবাগ-কাইফ-যুবি ও জহির।

সৌরভ পিছন ফিরে তাকালেন না আর। ২০০৩ বিশ্বকাপ ফাইনাল হয়ে সে এক স্বপ্নের দৌড়, একে একে সামিল হলেন ধোনি-গম্ভীররাও।

সাফল্যের নিরীখে সৌরভ অধ্যায় কত নম্বরে পেয়েছিল সত্যিই জানা নেই তবে সৌরভ-শচীন-দ্রাবিড়-কুম্বলের ছায়ায় একটু একটু করে বেড়ে উঠছিল ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যত।

পাহাড়ি নদী যেমন বয়ে আনে নুড়ি,পাথর আর বুকভরা পলিমাটি- সৌরভ সেদিন যথার্থ দাদার মতোই নিজের দুহাতে ভারতীয় ক্রিকেটের রুখা জমিতে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন প্রাণের বীজ, সেই সবুজ চারা এতদিন প্রায় পনেরো বছর মহীরূহের ছায়া দিল সেদিনের প্রায় উলঙ্গ হয়ে যাওয়া ভারতীয় ক্রিকেটকে।

জহির-নেহরা-হরভজন-পাঠান-কাইফরা তো কবেই সরে গেছেন বাইশ গজ থেকে, ছেলেবেলাগুলো সাথে চলে গেলেন সেই নিদ্রিত ভারতকে বিশ্বের কাছে জাগিয়ে তোলার পেনাল্টিমেট সৈনিক যুবরাজ, শেষ সলতের মত টিকে থাকা মহেন্দ্র সিং ধোনিও নেই।। সৌরভের স্বপ্নের ‘টিম ইন্ডিয়া’ একটা অধ্যায় হয়ে গেল ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে, নব্বই দশকের ছেলেমেয়েদের লাইভ হিরোরা হাইলাইটস হয়ে গেলেন অচিরেই।

অতীত কী সত্যিই হল? সৌরভ যে আগুন ইশতেহার করে বিলিয়ে দিয়েছিলেন যুবরাজ-ধোনিদের মধ্যে তা হয়ত প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়েছে, ভারতীয় ক্রিকেট তার অন্ধকারকে পিছনে ফেলে উঠে এসেছে সোনালি স্বপ্নের গালিচায়, আরও হাজার হাজার যুবরাজ-ধোনিরা থেকে গেলেন আবার ভারতীয় ক্রিকেটকে স্বপ্ন দেখাতে, মাঝে মাঝে সেই পুরোনো দিন মনে পড়বে, কী অমোঘ শক্তি দিয়ে ভারত ভাগ্য বিধাতা সেদিন বেঁধে দিয়েছিলেন ভারতকে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...