ব্রাজিলকে উচিৎ শিক্ষা দিল আর্জেন্টিনা

শেষের দিকে তো ব্রাজিলের ট্রফি কাউন্ট করে, ডি-বক্সে ড্রি-বলের মক-আপ করে ব্রাজিলের সাথে স্রেফ ‘মজা’ই নিয়েছে পারেদেস-এমিলিয়ানো মার্টিনেজরা।

নামার আগেই সুখবর, আর নামার পর যেন সাইক্লোন! বিশ্বকাপ নিশ্চিত করে ফেলা আর্জেন্টিনা নেমেছিল নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের হুঙ্কার ছাড়তে, আর সেটা খোদ লিওনেল মেসি না থাকার পরও। ব্রাজিল যতই মুখের কথা নিয়ে লড়াই জিততে চেষ্টা করুক – তাতে লাভ হল না – মেসিহীন আর্জেন্টিনা সেলেসাওদের উচিৎ শিক্ষাই দিল।

কে জানে চিরকালের জন্যই হয়তো মুখ বন্ধ হয়ে গেল ভিনি রাফিনহাদের! মনুমেন্টালে ম্যাচের দুই মিনিটেই নিজেদের অবস্থান পরিস্কার করে দিয়েছে আর্জেন্টিনা। বলের দেখা পর্যন্ত পায়নি ব্রাজিল!

যেন প্রতিপক্ষকে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুম পাড়ানোর পরিকল্পনাই সেরে রেখেছিল স্কালোনির দল। অথচ, ব্রাজিলের ভিনিসিয়াস বলেছিলেন, আর্জেন্টিনাকে না হারিয়ে নাকি তাঁর ঘুম আসবে না। মাঠে কার্যত হল তাঁর উল্টোটা।

মাত্র চার মিনিটেই কাঁপিয়ে দেওয়া এক গোল! হুলিয়ান আলভারেজ যেন বিদ্যুৎগতিতে এসে মাকড়সার জাল ফেললেন ব্রাজিলের রক্ষণে। চোখের পলক ফেলতে না ফেলতেই আট মিনিটে দ্বিতীয় পোচ দিলেন এনজো ফার্নান্দেজ!

ব্রাজিল তখনও গুছিয়ে নিতে পারেনি, এরই মধ্যে দু’বার বল বের করে আনতে হয়েছে জাল থেকে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বিদের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের নতুন রেকর্ড—এত দ্রুত কখনো দুই গোল খায়নি ব্রাজিল!

তবে ম্যাচের নাটকীয়তা তখনও বাকি ছিল। আর্জেন্টিনাই যেন একটু দয়াদ্র হয়ে ফেরাল ব্রাজিলকে। ক্রিস্টিয়ান রোমেরোর ভুলে বল পেয়ে ২৬ মিনিটে ব্রাজিলের মাথিয়াস কুনিয়া ফিরিয়ে দিলেন এক গোল। যেন আর্জেন্টিনার রোমেরো নিজেই একটু দয়া দেখালেন, ‘এই নাও, একটা সুযোগ দিলাম!’

কিন্তু ব্রাজিলের সেই খুশি বেশি ক্ষণ টিকল না। ৩৬ মিনিটে থিয়াগো আলমাদা গোলকিপার বেন্তোকে রীতিমতো চোখ রাঙালেন এক শটে। এক মিনিট পরেই ম্যাক অ্যালিস্টার জাল কাঁপিয়ে দিলেন তৃতীয়বার। প্রথমার্ধেই ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে আর্জেন্টিনা!

বিরতির পর ব্রাজিল মরিয়া হয়ে তিন পরিবর্তন আনলেও লাভ হলো না। আক্রমণভাগ আর মাঝমাঠের মধ্যে সমন্বয় যেন হারিয়ে গেল আটলান্টিকে। প্রতিশ্রুতির আগুন নিয়ে আসা রাফিনিয়া পোস্ট কাঁপালেন, মানব দেয়াল কাঁপালেন, কিন্তু আর্জেন্টিনাকে কাঁপাতে পারলেন না।

বরং ৭১ মিনিটে বদলি হিসেবে নামা জিউলিয়ানো সিমিওনে করলেন ম্যাচের চতুর্থ গোল, একেবারে ডেডলাইনে এসে। ব্রাজিলের রক্ষণের বেহাল দশা দেখে মনে হচ্ছিল, তারা নিজেই জানে না কীভাবে বেরোবে এই দু:স্বপ্ন থেকে! শেষ বাঁশি বাজতেই আর্জেন্টিনা উদযাপনে মত্ত।

পাঁচ ম্যাচ হাতে রেখেই বিশ্বকাপ নিশ্চিত, আর তার সঙ্গে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বিদের জালে চার গোল! যেন বিজয়ের কেক কাটা হয়ে গেল মাঠেই! শেষের দিকে তো ব্রাজিলের ট্রফি কাউন্ট করে, ডি-বক্সে ড্রি-বলের মক-আপ করে ব্রাজিলের সাথে স্রেফ ‘মজা’ই নিয়েছে পারেদেস-এমিলিয়ানো মার্টিনেজরা।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Share via
Copy link