আলোর নিচে আইপিএলের অন্ধকার

শুধুই আর্থিক ও গ্ল্যামার প্রাপ্তির গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়, বাড়িয়েছে ভয়ঙ্কর বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব। আর তাই তো নিজে দেশের ক্রিকেট কিংবদন্তিদেরও ডাকা হয় অপমানজনক সব নামে।

ভারতীয়দের কাছে ক্রিকেট শুধুই খেলা নয়, এটা একটা ধর্ম। ভক্তদের কাছে এই ক্রিকেট আবেগের যে সিন্ধু তৈরি করেছে তাতে মিশে আছে ভক্তি আর বিদ্বেষের জটিল ধাঁধা। আর এই ধাঁধার জন্মটা আইপিএলের হাত ধরেই।

ভারতে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে সেটাকে আর্থিকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যই আইপিএলের আগমন। তবে তা শুধুই আর্থিক ও গ্ল্যামার প্রাপ্তির গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়, বাড়িয়েছে ভয়ঙ্কর বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব। আর তাই তো নিজে দেশের ক্রিকেট কিংবদন্তিদেরও ডাকা হয় অপমানজনক সব নামে।

বিরাট কোহলি ভারতের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় নাম। প্রাপ্তির খাতায় যত অর্জন আছে তা হয়তো বলে শেষ করা যাবে না৷ বিশ্ব দরবারে ভারতের দাপট দেখিয়ে চলার পেছনে এই কোহলির অবদানটাও তো কম কিছু নয়। তবুও তাকে নিয়ে হয় কাটাছেঁড়া, এমনকি যা পৌছায় অপমানের পর্যায়ে।

বিরাট কোহলিকে ব্যাঙ্গ করে ডাকা হয় ‘চোকলি’ নামে। আর যার সূচনা আইপিএল দিয়েই। মূলত রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর প্রতিপক্ষদের দেওয়া নাম এটা। হয়তো বড় অনেক ম্যাচে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। আবার এটাও ঠিক কোহলি মানেই অসম্ভব সব রান তাড়া করার নজীর। ভারতকে অবিশ্বাস্য সব জয়ও তিনি এনে দিয়েছেন।

শুধু কোহলি নয় ধোনি কিংবা রোহিতও এই অপসংস্কৃতির শিকার। ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিকে ডাকা হয় ‘ধোবি’ নামে। যার বাংলা মানে করলে দাঁড়ায় ধোপা। অথচ ভারতের কিংবদন্তি ক্রিকেটার তিনি। রহিত শর্মা তো রীতিমতো বডি শেমিংয়ের শিকার। শারীরিক গঠনের জন্য তাকে ডাকা হয় ‘বাড়া পাও’ নামে। ভারতের জনপ্রিয় এই খাবার রোহিতেরও খুব পছন্দের।

ভারতে অনেক রাজ্য, অনেক ধর্ম। আইপিএল সেই বিভাজন বাড়িয়েছে। সেখানে চেন্নাই-কলকাতার আলাদা সমর্থক। সেটা হওয়াটাই স্বাভাবিক। সেই সমর্থনের কারণে বেড়েছে রেষারেষি, বাড়িয়েছে দ্বন্দ্ব। আর ক্রিকেট প্রচণ্ড জাতীয়তাবাদী খেলা। এখানে রেষারেষি থাকবেই। আর রেষারেষিই এই বিপুল বানিজ্যিকর লাভের পেছনে মূল চালিকাশক্তি। ফলে, দেশের ক্রিকেটারদের কিছু বলার আগে খোদ সমর্থকদেরই দ্বিতীয়বার ভাবা উচিৎ।

লেখক পরিচিতি

প্রত্যয় হক কাব্য

স্বপ্ন লেখার কি-বোর্ড

Share via
Copy link