দীর্ঘ আড়াই মাসের যাত্রা অবশেষে শেষ হয়েছে। রানবন্যার ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) ব্যাটাররাই সবচেয়ে নজর কেড়েছেন। তবে নামের প্রতি সুবিচার করে প্রায় প্রতিটা সেক্টরে ভারতীয় খেলোয়াড়দের দাপট ছিল চোখে পড়ার মত। ১৮তম আইপিএলের সেরা একাদশ সাঁজাতে তাই হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এমনকি একই স্থানে একাধিক খেলোয়াড় ছিলেন দূর্দান্ত। তাদের মধ্যে থেকে বাছাই করাও ছিল ভীষণ কষ্টসাধ্য কাজ। তবুও আইপিএলের সেরা একাদশ নিয়ে হাজির হয়েছে খেলা ৭১। চলুন দেখে নেওয়া যাক-
- সাই সুদর্শন (গুজরাট টাইটান্স)
এবারের আইপিএলে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক সাই সুদর্শন। ৭৫৯ রান করেছেন তিনি একটা সেঞ্চুরি ও ছয়টা হাফসেঞ্চুরির কল্যাণে। গুজরাট টাইটান্সের প্লে-অফ অবধি যাত্রায় তার অবদান ছিল অনস্বীকার্য। তরুণ ব্যাটার হিসেবে নিজস্ব আলোতে তিনি আলোকিত করেছেন আইপিএলের মঞ্চ।
- বিরাট কোহলি (রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু)
১৮ বছরের অপেক্ষা শেষ আইপিলের স্বর্ণালী ট্রফিতে চুমু এঁকেছেন বিরাট কোহলি। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটাতে ব্যাট হাতে বিরাট ছিলেন সমান উজ্জ্বল। তৃতীয় সর্বোচ্চ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে। ৬৫৭ রান করেছেন তিনি। আট ম্যাচে হাফসেঞ্চুরি করে ব্যাঙ্গালুরুকে রেখেছিলেন সঠিক কক্ষপথে। এমনকি ফাইনালের ম্যাচে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ৪৫ রানও এসেছে তারই ব্যাট থেকে।
- শ্রেয়াস আইয়ার (পাঞ্জাব কিংস)
অনায়াসে শ্রেয়াস বনে যেতে পারেন আইপিএলের সেরা একাদশের অধিনায়ক। পাঞ্জাব কিংসকে ১১ বছর পর ফাইনালে তুলতে তার অবদান ছিল সর্বোচ্চ। ৬০৪ রান করে দলকে একেবারে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। পাঞ্জাবকে ফাইনালে তোলার ম্যাচটিতে তো তার কাছেই পরাজিত হয়েছিল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। প্রভাব বিচারে তিন নম্বরে তিনিই সেরা পছন্দ।
- সুরিয়াকুমার যাদব (মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স)
রীতিমত বিশ্ব রেকর্ড গড়া পারফরমেন্স করেছেন সুরিয়াকুমার যাদব। টানা ১৬ ইনিংসে ২৫ বা তার বেশি রান এসেছে ব্যাট থেকে। টি-টোয়েন্টিতে এতটাও ধারাবাহিকতা দেখাতে পারেননি কেউই। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বাউন্স ব্যাকের পেছনে তার এই দৃঢ়তা বিশেষ প্রভাব ফেলেছে। ৭১৭ রান করা সুরিয়ার ব্যাটে শেষ অবধি বেঁচে ছিল মুম্বাইয়ের আরও একটি শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা।
- জিতেশ শর্মা (রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু)
জিতেশ শর্মাকে সেরা একাদশে দেখে হয়ত অনেকেই খানিকটা বিস্মিত হতে পারেন। তবে ইম্প্যাক্ট বিবেচনায় তিনি জায়গা করে নিয়েছেন ১৮তম আইপিএলের সেরা একাদশে। ব্যাঙ্গালুরুকে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে তোলার ম্যাচটিতে তার অনবদ্য ইনিংসটি বরং দলের ভেতরকার আত্মবিশ্বাসকে আরও চাঙ্গা করেছে। তাছাড়া উইকেটরক্ষক প্রয়োজন সে কারণেই তিনি একাদশে। লোকেশ রাহুল, ঋষাভ পান্তরা বাদ পড়েছেন প্রভাব বিবেচনায়।
- শশাঙ্ক সিং (পাঞ্জাব কিংস)
ফাইনালের মঞ্চের ট্র্যাজিক হিরো শশাঙ্ক সিং। মৌসুম শুরু হওয়ার আগে তিনি বিশ্বাস রেখেছিলেন যে পাঞ্জাব ফাইনাল অবধি যাবে। শিরোপার জন্যে শেষ অবধি তিনিই চেষ্টা করেছেন। ফাইনালের মঞ্চে তার করা ফিফটি হতে পারত অবিস্মরণীয় এক স্মৃতি। এছাড়াও ৩৫০ রান করে দলকে ফাইনাল অবধি তুলতেও তো তিনি সহয়তা করেছিলেন।
- ক্রুনাল পান্ডিয়া (রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু)
একটা স্পেলে শিরোপা নিশ্চিতের কাজটা করেছিলেন ক্রুনাল পান্ডিয়া। চার ওভারে ১৭ রান দিয়ে দু’টো উইকেট তুলে নিয়ে ব্যাঙ্গালুরুর চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথটা মসৃণ করেছেন। তাছাড়া পুরো মৌসুম জুড়ে ১৭ খানা উইকেট তুলে নিয়ে ব্যাঙ্গালুরুর যাত্রাকে সহজ করেছেন। এছাড়াও কালেভদ্রে ব্যাট হাতে অবদান রেখেছেন তিনি।
- নুর আহমেদ (চেন্নাই সুপার কিংস)
বিষাদময় এক সময় কেটেছে চেন্নাই সুপার কিংসের। কিন্তু সেই বিষাদের নগরীর মাঝে দাড়িয়েও নুর আহমেদ নিজের দ্যুতি ছড়িয়েছেন। ২৪ খানা উইকেট নিয়েছেন আফগানিস্তানের এই চায়নাম্যান বোলার। চেন্নাই তার এই সহয়তার ফায়দা তুলে নিতে পারেনি। নতুবা হয়ত আরও একটু ভাল অবস্থানে থাকতে পারত চেন্নাই।
- জশ হ্যাজেলউড (রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু)
ব্যাটিং ইউনিট বরাবরই শক্তপোক্ত ছিল ব্যাঙ্গালুরুর। কিন্তু বোলিং ইউনিটে বারংবার পিছিয়ে পড়েছিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু। কিন্তু এবার তেমনটি হতে দেননি জশ হ্যাজেলউড। ২২ খানা উইকেট গিয়েছে তার পকেটে। অজি এই পেসার ব্যাঙ্গালুরুর বোলিং ইউনিটের নেতৃত্ব দিয়েছেন। আর সে কারণেই ভারসাম্যের শেষটায় শিরোপা তাদের হয়েছে।
- জাসপ্রিত বুমরাহ (মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স)
আইপিএলের একাদশে চাইলেও জাসপ্রিত বুমরাহকে বাদ দেওয়ার উপায় নেই। চোখের পলকে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার এক অদ্ভুত শক্তিধারী তিনি। এবারও মুম্বাইয়ের বহু ম্যাচের পরিস্থিতি নিজেদের পক্ষে এনেছেন নিজের বোলিং নৈপুন্যে। যেমন প্রথম এলিমিনেটরে গুজরাট টাইটান্সের ওয়াশিনটন সুন্দরের উইকেটটি। এছাড়াও ১৮টি উইকেটের মালিক হয়েছেন তিনি এবারের আসরে।
- প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা (গুজরাট টাইটান্স)
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের ১৮ তম আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা। ২৫টি উইকেট রয়েছে তার দখলে। গুজরাটকে প্লে-অফে তোলার ক্ষেত্রে তার অবদানকে উপেক্ষা করার সুযোগ খুব একটা নেই। তাইতো সেরা একাদশে তিনি অনায়সেই সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন।
এই একাদশ নিয়ে নানান মত থাকতে পারে। পারফরমারে ঠাসা আইপিএলের সেরা একাদশ করা বেশ কঠিন। তবুও পারফরমেন্স, ইম্প্যাক্ট বিবেচনায় নিয়ে সাজানো হয়েছে এই একাদশ।