ক্রিকেট থেকে অবসরের পর যেকোনো ক্রিকেটারই হয়তো কোচিং নয়তো ধারাভাষ্যকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। কেউ কেউ আবার নিজ দেশের বোর্ডের হয়েও কাজ করেন৷ কেউ কেউ যোগ দেন কোচিংয়ে। মূলত, ক্রিকেটাররা চান অবসরের পরেও ক্রিকেটের সাথেই যুক্ত থাকতে।
তবে সবার ভাগ্যে সেটা থাকে না!
কেউ কেউ ভাগ্যের টানে অন্য পেশাকেও বেছে নেন। ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের গ্রেট স্যার কার্টলি অ্যামব্রোস ক্রিকেট ছাড়ার পর একজন গিটারিস্ট হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। এছাড়া শচিন টেন্ডুলকারের সাথে অভিষেক হওয়া সলিল আঙ্কোলো এখন অভিনয় করেন।
কোনো কাজই ছোট নয়, কোনো পেশার মানুষকেই অন্য চোখে দেখাটা যুক্তিসঙ্গত নয়। তবে একসময় ক্রিকেটের ২২ গজ মাতানো জাতীয় দলের খেলোয়াড়েরা যখন পেটের দায়ে সাধারণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন সেটা অবশ্যই কোনো কোনো ক্ষেত্রে মেনে নেওয়া খুবই কঠিন।
২০১১ বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলা শ্রীলঙ্কা দলের সুরাজ রানদিভের কথা মনে আছে কি? সম্প্রতি খবরেওও এসেছিলো যে সেই রানদিভ এখন অস্ট্রেলিয়ায় বাস চালিয়ে সংসার চালান। বিশ্বকাপ খেলা ক্রিকেটারের এমন পরিণতি নিশ্চয়ই কেউ কামনা করেন না। এবার সেই ধারায় দেখা মিললো সাবেক অজি স্পিনার জ্যাভিয়ার ডোহার্টিকে! না তিনি বাস ড্রাইভার নন। ২০১৫ বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়া দলের অন্যতম সদস্য ডোহার্টি এখন একজন কাঠমিস্ত্রী।
প্রায় সাত বছর জাতীয় দলে ক্রিকেট খেলা, ২০১৫ বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্যতম সদস্য – সেই জ্যাভিয়ের ডোহার্টি এখন একজন কার্পেন্টার। এমনকি তার ভাষ্যমতে ক্রিকেট ছাড়ার এক বছরের মধ্যেই তিনি ভাবছিলেন কি করবেন এরপর! ছোটখাটো অনেক কাজই নাকি তিনি করেছেন, বিভিন্ন অফিসে চাকুরি করেছিলেন এরপর কাঠমিস্ত্রীর কাজ শিখেন এখন সেটাকেই তিনি মূল পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট অ্যাসোশিয়েশনকে (এসিএ) জ্যাভিয়ের ডোহার্টি এক ভিডিও বার্তায় জানান, ‘আমি কাঠমিস্ত্রীর কাজের প্রায় তিন চতুর্থাংশ অংশ শিখে ফেলেছি। এখন আমার দিন কাটে বিভিন্ন বিল্ডিং সাইটসে। আমি এটা বেশ উপভোগ করছি। নিজের হাতে বাইরের কাজ করার মাধ্যমে আমি বেশ কিছু নতুন জিনিসও শিখছি।’
এই জীবনটা অন্যরকম। জানালেন ডোহার্টি। তিনি বলেন, ‘কিছু জিনিস ক্রিকেট থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। যখন আমি ক্রিকেট থেকে অবসর নেই, তখনো আমি জানতাম না আমি কি করবো। এরপর আমি এক বছর এভাবেই কাটাই! এবং কাজ করার যেকোনো সুযোগ পেলেই সেটা করেছি। আমি ল্যান্ডস্কেপিং করেছি, অফিসে কাজ করেছি, ক্রিকেটেও কাজ করেছি এরপর আমি কাঠের কাজের সাথে যুক্ত হই।’
নিজের ২৮ বছর পূর্ণের অল্প কিছুদিন আগেই জাতীয় দলে ওয়ানডেতে অভিষেক হয় জ্যাভিয়ের ডোহার্টির। ২০১০ সালে ব্রিসবেনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে অভিষেক হয় এই বাঁ-হাতি স্পিনারের। সেই সিরিজে ইংলিশরা ৩-১ এ জয়লাভ করে। টেস্ট ক্যারিয়ার অবশ্য দীর্ঘায়িত হয়নি ডোহার্টির! মাত্র চার টেস্ট খেলে সেখানে শিকার করেন মোটে চার উইকেট। টেস্ট ক্রিকেটে তাই সফলও হতে পারেননি তিনি।
২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েও ইনজুরিতে দল থেকে ছিটকে যান তিনি। অভিষেকের মাত্র এক বছরের মাথায় বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন পূরণ হতে নিলেও ভাগ্য সহায় না হওয়ায় সেবার খেলা হয়নি তার। তবে পরের বছর ২০১২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আবার সুযোগ পান তিনি। ২০১৫ বিশ্বকাপে শিরোপা ঘরে তোলে অজিরা, আর সেই বিশ্বকাপেও দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন ডোহার্টি।
সাদা পোশাকে অনুজ্জ্বল এই স্পিনার ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে মোটামুটি সফল ছিলেন। ওয়ানডেতে ৫৫ আর টি-টোয়েন্টিতে শিকার করেন ৬০ উইকেট। ২০১৭ সালে সবধরনের ক্রিকেটকে বিদায় জানান ডোহার্টি। এরপর অবশ্য ২০২০ সালে রোড সেফটি টুর্নামেন্টে অস্ট্রেলিয়া লিজেন্ডসের হয়ে ভারত সফরে গিয়েছিলেন তিনি। তবে করোনা ভাইরাসের প্রকোপে মাঝ পথেই স্থগিত হয়ে যায় টুর্নামেন্টটি।