আবাহনীকে হারিয়ে দিল মিরাজরা

ঢাকা প্রমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের এবারের আসরের প্রথম তিন রাউন্ডে রান উৎসব দেখা যায়নি। তারকা ক্রিকেটারদের সাথে ব্যর্থ ছিলেন তরুণ ক্রিকেটাররাও। তবে চতুর্থ রাউন্ডের শুরু থেকেই রানের দেখা মিলেছে। চতুর্থ রাউন্ডের প্রথম তিন ম্যাচে জয় পেয়েছে খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতি, ব্রাদার্স ইউনিয়ন ও প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাব।

টানা তিন ম্যাচ জেতার পর চতুর্থ ম্যাচে এসে হারের স্বাদ পেল আবাহনী লিমিটেড। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থাও হারিয়েছে তারা। আর প্রথম বারের মতো পয়েন্ট টেবিরের শীর্ষস্থান দখল করেছে প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাব।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করার পরের তিন ইনিংসে ব্যর্থ ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। চলমান ঢাকা প্রমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের প্রথম তিন ম্যাচেও রান পাননি এই ব্যাটসম্যান। অবশেষে আজ চতুর্থ ম্যাচে রান পেয়েছেন শান্ত। তবে রান পেলেও দলকে জেতাতে পারেননি তিনি।

শুধু শান্তই নয়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে ও ডিপিএলের প্রথম তিন ম্যাচে ব্যর্থ হওয়ার পর আজ রান পেয়েছেন সাইফ হাসানও। সাইফরের হাফ সেঞ্চুরিতে ভর করেই এবারের আসরের তৃতীয় জয় তুলে নিয়েছে প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাব।

এছাড়া আজ রানের দেখা পেয়েছেন ইমতিয়াজ হোসেন ও মাইশুকুর রহমান ও আসিসুল হক ইমন। তিন জনই হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। এছাড়া রান পেয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাঈম শেখ। তবে আজ ব্যাট হাতে ব্যর্থ ছিলেন মুশফিকুর রহিম।

আগের তিন ম্যাচে জয়ের জন্য সহজ লক্ষ্য পেলেও আজ আবাহনীকে ১৬৫ রানের বড় লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েছিল খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতি। বড় রান তাড়া করতে নেমে দলীয় ১২ রানের ভিতর মুনিম শাহরিয়ার (০) ও মুশফিকুর রহিম (৮) ফিরে গেলে তৃতীয় উইকেটে ৮৫ রান যোগ করে ম্যাচ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও নাঈম সেখ।

কিন্ত শান্ত ৩৩ বলে ৪৯ ও নাঈম ৪২ বলে ৪২ রান করে ফিরে গেলে শেষের সমীকরন মেলাতে পারেনি আবাহনী। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ১৯ বলে ২১ ও আফিফ ১৮ বলে ২২ রান করলেও সেটা জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিলোনা। খেলাঘরের পক্ষে দুটি করে উইকেট শিকার করেন খালেদ আহমেদ ও রনি।

এর আগে বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামা খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতিকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার ইমতিয়াজ হোসেন ও রাফসান আল মাহমুদ। উদ্বোধনী জুটিতে চার ওভারে দুই জন তুলে ফেলেন ৪২ রান। দারুণ খেলতে থাকা রাফসান ১২ বলে ১৮ রান করে ফিরে গেলে ভাঙে এই জুটি।

রাফসান ফিরে গেলেও ইমতিয়াজ হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন। মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে তৃতীয় উইকেট জুটিতে যোগ করেন ৬২ রান। আগের ম্যাচে তিন নম্বরে নেমে হাফ সেঞ্চুরি করা মিরাজ আজও তিন নম্বরে নেমে দারুণ শুরু পেয়েছিলেন। কিন্তু আজ ইনিংস বেশী বড় করতে পারেননি। এই অলরাউন্ডার ফিরে যান ২৫ বলে ৩৩ রান করে।

মিরাজের বিদায়ের পর জহুরুল ইসলাম ও ইমতিয়াজ হোসেন দ্রুত ফিরে গেলে রানের গতি থেমে যায় সমাজ কল্যাণের। ৪৬ বলে ৬৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন ইমতিয়াজ। আর জহুরুলের ব্যাট থেকে আসে ৫ রান। এরপর শেষের দিকে সাদ্দাম হোসেনের ১৩ রানে ভর করে ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৬৪ রান সংগ্রহ করে সমাজ কল্যাণ ।

আবাহনী লিমিটেডের পক্ষে দুইটি করে উইকেট শিকার করেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও আরাফাত সানি। এছাড়া একটি করে উইকেট পেয়েছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও তানজিম হাসান সাকিব।

বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে সকালের আরেক ম্যাচে ওল্ড ডিওএইচএসকে ২ রানের হারিয়েছে ব্রাদার্স ইউনিয়ন। তবে ১৪০ রানের সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নামা ওল্ড ডিওএইচএস দারুণ শুরু পেয়েছিল। উদ্বোধনী জুটিতেই আনিসুল হক ইমন ও রাকিন আহমেদ ৫৭ রান যোগ করেন।

৩১ বলে ৩৩ রান করে রাকিন আউট হয়ে গেলে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৭৫ রান যোগ করে দলের জয় অনেকটা নিশ্চিতই করে দিয়েছিল আনিসুল হক ইমন ও মাহমুদুল হাসান। কিন্তু জয় থেকে মাত্র ৬ রান দূরে থাকতে আনিসুল ৫০ বলে ৬৪ রান করে ফিরে যাওয়ার পর ৩৩ বলে ৩৪ রান করে ফির যান মাহমুদুল।

এরপর ৪ বলে ৪ রানের সমীকরণ মেলাতে না পেরে ২ রানে হেরে যায় ওল্ড ডিওএইচএস। ব্রাদার্স ইউনিয়নের পক্ষে একটি করে উইকেট শিকার করেন রাতুল ফেরদৌস ও মানিক খান।

এর আগে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামা ব্রাদার্স ইউনিয়নের শুরুটা খুব একটা ভালো হয়নি। ওল্ড ডিওএইচএস স্পোর্টস ক্লাবের বোলারদের তোপের মুখে ৪৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে দলটি। ফিরে যান মিজানুর রহমান (২১) জাহিদুজ্জামান (৩) জুনায়েদ সিদ্দিকী (৬) ও নুরুজ্জামান (৪)।

এরপর পঞ্চম উইকেটে মাইশুকুর রহমান ও রাতুল ফেরদৌসের ৭০ রানের জুটিতর বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠে ব্রাদার্স। ২৪ বলে ২৬ রান করে রাতুল ফিরে গেলে ভাঙে এই জুটি। তবে রাতুল ফিরে গেলেও ইনিংসের শেষ পর্যন্ত ব্যাট করে দলকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেন মাইশুকুর।

তার অপরাজিত ৪৮ বলে ৬৮ রানে ভর করে ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৩৮ রান সংগ্রহ করে ব্রাদার্স ইউনিয়ন। ওল্ড ডিওএইচএস স্পোর্টস ক্লাবের পক্ষে দুটি উইকেট শিকার করেন আল ইসলাম। এছাড়া একটি করে উইকেট পেয়েছেন মোহাইমিনুল খান ও মোহাম্মদ শান্ত।

মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দিনের আরেক ম্যাচে শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবকে ৪ উইকেটে হারিয়ে টানা তৃতীয় জয় তুলে নিয়েছে প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাব। তবে ১৬৩ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়েছিল না প্রাইম দোলেশ্বরের। দলীয় ২৯ রানে দুই ওপেনার ইমরান ও তৌফিক ফিরে যাওয়ার পর তৃতীয় উইকেট জুটিতে ম্যাচ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় প্রাইম দোলেশ্বর।

সাইফ হাসান ও ফজলে মাহমুদ তৃতীয় উইকেটে ৫৪ রান যোগ করেন। ৩৫ বলে ৫০ রান করে সাইফ ও ৩৩ বলে ৪১ রান করে ফজলে ফিরে গেলেও জয় পেতে সমস্য হয়নি প্রাইম দোলেশ্বরের। শামিমের ১৬ বলে ২২ ও ফরহাদের ১১ বলে ২৭ রানে ভর করে জয় নিশ্চিত করে প্রাইম দোলেশ্বর। শাইনপুকুরের পক্ষে দুটি উইকেট শিকার করেন মহর শেখ।

এর আগে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামা শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবকে আক্রমণাত্মক শুরু এনে দেন তানজিদ হাসান তামিম ও সাব্বির হোসেন। উদ্বোধনী জুটিতে ২৭ বলে ৪৯ রান সংগ্রহ করেন দুজন। ১৬ বলে ২৫ রান করে তানজিদ ফিরে গেলে ভাঙে এই জুটি। এই জুটি ভাঙার পর সাব্বির ও রবিউলের ব্যাটে এগিয়ে যায় শাইনপুকুর।

তবে সাব্বির ঝড়ো ব্যাটিং করলেও অন্য প্রান্তে মন্থর ব্যাটিং করেছেন রবিউল। ১৯ বলে ৩৬ রান করে সাব্বির ও ৩৬ বলে ৩৪ রান করে রবিউল ফিরে গেলে একটু চাপে পড়ে শাইনপুকুর। কিন্তু শেষের দিকে মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের ৩২ বলে ৪৪ রানের ঝড়ো ইনিংসে ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৬২ রান সংগ্রহ করে শাইনপুকুর।

প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাবের পক্ষে দুটি করে উইকেট শিকার করেন রেজাউর রহমান রেজা ও শামিম হোসেন। এছাড়া একটি করে উইকেট শিকার করেন ফরহাদ রেজা এবং কামরুল ইসলাম।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

  • খেলাঘর-আবাহনী

খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতি: ১৬৪/৬ (ওভার: ২০; ইমতিয়াজ- ৬৬, রাফসান- ১৮, মিরাজ- ৩৩) (আরাফাত- ৪-০-২৫-২, মোসাদ্দেক- ৩-০-২৪-২)

আবাহনী লিমিটেড: ১৫৬/ ৫ (ওভার: ২০; নাঈম- ৪৯, শান্ত- ৪৯, মুশফিক- ৮, সৈকত- ২১, আফিফ- ২২*) (খালেদ- ৪-০-৩২-২)

ফলাফল: খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতি ৮ রানে জয়ী।

  • ব্রাদার্স-ওল্ড ডিওএইচএস

ব্রাদার্স ইউনিয়ন: ১৩৯/৫ (ওভার: ২০, মিজানুর- ২১, মাইশুকুর- ৬৮*, রাতুল- ২৬) (ইসলাম- ৪-০-২৩-২, মোহাইমিনুল- ৩-০-১১-১)

ওল্ড ডিওএইচএস স্পোর্টস ক্লাব: ১৩৭/৩ (ওভার: ২০; আনিসুল- ৬৪, রাকিন- ৩৩, মাহমুদুল- ৩৪) (রাতুল- ৪-০-১৫-১, মানিক- ২-০-১৪-১)

ফলাফল: ব্রাদার্স ইউনিয়ন ২ রানে জয়ী।

  • শাইনপুকুর-প্রাইম দোলেশ্বর

শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব: ১৬২/৭ (ওভার: ২০; ইমতিয়াজ- ২৫, সাব্বির- ৩৬, রবিউল- ৩৪, মাহমুদুল- ৪৪) (শামিম- ৪-০-২১-২, রেজাউর- ৪-০-২২-২)

প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাব: ১৬৩/৬ (ওভার: ১৯.৪; সাইফ- ৫০, রাব্বি- ৪১, শামিম- ২২, ফরহাদ- ২৭*) (মহর- ৪-০-২৯-২)

ফলাফল: প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাব ৪ উইকেটে জয়ী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link