আরেক ফরাসী বিপ্লবের অপেক্ষা

একটা সময় ফ্রান্স মানেই ছিল জিনেদিন জিদান। আন্তর্জাতিক মঞ্চে জিদান আছেন তো ফ্রান্স আছেন, জিদান নেই তো ফ্রান্স নেই। ১৯৯৮ বিশ্বকাপ, ২০০০ ইউরো, ২০০৬ বিশ্বকাপ। সবেতেই জিনেদিন জিদানের স্পষ্ট প্রভাব। ’০২ বিশ্বকাপ আর ‘০৪ ইউরো ছিলেন না, ফ্রান্সকেও খুঁজে পাওয়া যায়নি আর।

জিদানের ছায়া থেকে বের হয়ে আসার প্রথম দৃষ্টান্ত ছিল ২০১৬ ইউরো। সেবারই দিদিয়ের দেশমের হাত ধরে শিরোপার ছোঁয়া পেয়েই গিয়েছিল ফ্রান্স। কিন্তু কোত্থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসা এডার ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন জয়। কিন্তু ২০১৮ সালে সেই প্রতিশোধ নিয়েছিল বিশ্বকাপ জিতে। তবে এবারে তাঁর লক্ষ্য ইউরো।

ফ্রান্সের সর্বজয়ী দল নিয়ে সবকিছুই জিততে চান দেশম। সে লক্ষ্যে দলটাও সাজিয়েছেন নতুন করে। পুরাতন নতুন সকলকে মিলিয়ে। ডাক পেয়েছেন করিম বেনজেমা, আদ্রিয়েন রাবিওটরা। যাদের দেশমের আমলে ডাক পাওয়া ছিল স্বপ্নের ব্যাপার।

গোলরক্ষক

হুগো লরিস (টটেনহাম হটস্পার), মাইক মাইনিয়ান (এসি মিলান), স্তেভ মাঁদাঁদা (অলিম্পিক মার্শেই)

ডিফেন্ডার

রাফায়েল ভারানে (রিয়াল মাদ্রিদ), প্রেসনেল কিমপেম্বে (পিএসজি), কার্ট জুমা (চেলসি), ক্লেমেন্ট লংলেট (বার্সেলোনা), জুলস কুন্দে (সেভিয়া) লিও দুবোয়া (অলিম্পিক লিওঁ), বেঞ্জামিন পাভার্দ (বায়ার্ন মিউনিখ) লুকাস ডিনিয়ে (এভারটন), লুকাস হার্নান্দেজ (বায়ার্ন মিউনিখ)

মিডফিল্ডার

এনগোলো কান্তে (চেলসি), পল পগবা (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), আদ্রিয়েন রাবিওট (জুভেন্টাস), মৌসা সিসোকো (টটেনহাম হটস্পার), করেন্টিন তোলিসো (বায়ার্ন মিউনিখ) থমাস লেমার (আতলেতিকো মাদ্রিদ)

ফরোয়ার্ড

কিলিয়ান এমবাপ্পে (পিএসজি), কিংসলে কোমান (বায়ার্ন মিউনিখ), মার্কাস থুরাম (বরুসিয়া মনশেনগ্লাডবাখ) ওসমান দেম্বেলে (বার্সেলোনা), আঁতোয়ান গ্রিজমান (বার্সেলোনা) করিম বেনজেমা (রিয়াল মাদ্রিদ), উইসাম বেন ইয়েদের (মোনাকো), অলিভিয়ের জিরু (চেলসি)

অধিনায়ক: হুগো লরিস

কোচ: দিদিয়ের দেশম

  • শক্তিমত্তা

ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা তাদের দলের প্রত্যেকের মধ্যে বন্ধুত্ব। জিদান পরবর্তী ফ্রান্স দল ছিল অন্তর্দ্বন্দ্বে পরিপূর্ণ। ২০১০ বিশ্বকাপের মাঝেই কোচ আর খেলোয়াড়দের দ্বন্দ্ব ক্যাম্প ছাড়েন অনেকে। এমনকি বেনজেমা-ভ্যালবুয়েনা কান্ডও বেশ নাজুক অবস্থায় ফেলে দিয়েছিল ফ্রান্স দলকে। কিন্তু দিদিয়ের দেশম সেটাকে সামলেছেন কড়া হাতে। দলের প্রতিটি খেলোয়াড়ের মধ্যে বন্ড অন্য যেকোনো সময়ের থেকে বেশি।

ম্যাচের বাইরে সোশ্যাল মিডিয়ায় সনসময়ই দেখা যায় খেলোয়াড়দের একে অপরের সাথে খুনসুটিতে মেতে থাকতে। এমনকি ৬ বছর পর দলে ফেরা করিম বেনজেমাকে সকলেই গ্রহণ করেছেন দুই হাত বাড়িয়ে। এতেই বোঝা গিয়েছে খেলোয়াড়দের মধ্যে কতটা বন্ধুত্ব বিদ্যমান।

শুধু তাই নয় ফ্রান্স দলের প্রতিটি পজিশনেই রয়েছে ব্যাকআপ। প্রতিটি পজিশনের যাচাই-বাছাই করে নেওয়া হয়েছে খেলোয়াড়। দেশম বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেননি নিজের স্কোয়াড গঠনে। যে কারণে প্রায় প্রতিটি পজিশনেই তয়েছে ওয়ার্ল্ড ক্লাস খেলোয়াড়। সেই সাথে দলে ডাক পেয়েছেন করিম বেনজেমা।

যার সাথে সাপে-নেউলে সম্পর্ক ছিল দেশমের। অথচ ইগোকে পাশে রেখে অসাধারণ এক মৌসুম কাটানো বেনজেমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন তিনি। ফলে বোঝাই যাচ্ছে ইউরো জিততে কতটা মরিয়া তিনি।

বেনজেমা, গ্রিজমান, এমবাপ্পের  মতন আক্রমণভাগ নেই কারো। যদিও গতকাল বেনজেমার চোট সামান্য চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে ফ্রেঞ্চদের কপালে, তবুও বেঞ্চ থেকে দেম্বেলে কিংবা কোমানের মতন তারকা নেমে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য রাখেন।

  • দুর্বলতা

ফ্রান্সের দুর্বলতা বলতে এক লেফট উইং পজিশন। গত বিশ্বকাপে এই পজিশন কাঁপিয়েছেন  মাতুইদি। কিন্তু এই ইউরোতে সুযোগ হয়নি তার। যে কারণে তাকে ভরসা রাখতে হচ্ছে রাবিওট কিংবা তোলিসোর উপর। তাদের কেউ ব্যর্থ হলে একপাশের অ্যাটাকে ভালো প্রভাব পরবে।

শুধু তাই নয় রক্ষণে ওয়ার্ল্ড ক্লাস খেলোয়াড় থাকলেও তাদের ব্যাকআপ ঠিক ঐ মানের নয়। সেই সাথে দলের সবচেয়ে গুরুতেপূর্ণ খেলোয়াড় এনগোলো কান্তের কোনো যোগ্য ব্যাকআপ নেই এই দলে। ফলে তার এক ইনজুরি ছিটকে দিতে পারে ফ্রান্সকে। ফলে দেশমের নির্ভর করতে হচ্ছে চোটভাগ্যের উপরেও।

  • সম্ভাব্য একাদশ

বিশ্বকাপ দল থেকে এই একাদশে পরিবর্তন শুধু সেন্টারব্যাক আর লেফট উইংয়ে। উমতিতি আর সেই ফর্মে নেই, সে জায়গায় এসেছেন কিমপেম্বে। আর লেফট উইংয়ে আসতে পারেন আদ্রিয়েন রাবিওট।

২০১৮ বিশ্বকাপ স্কোয়াডের স্ট্যান্ডবাই তালিকায় থাকার কারণে রেগেমেগে বিকল্প দল থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন রাবিওট। তখন রাগে দেশমও বলেছিলেন, তাকে আর দলেই ডাকবেন না। আর স্ট্রাইকিংয়ে এসেছেন বেনজেমা। তবে প্রয়োজনে বেনজেমা-জিরুকে ঘুরিয়ে ফিরিয়েই খেলাবেন দেশম।

প্রতিপক্ষ ও ম্যাচ: (বাংলাদেশ সময়)

জার্মানি, ১৫ জুন, রাত ১টা

হাঙ্গেরি, ১৯ জুন, সন্ধ্যা ৭টা

পর্তুগাল, ২৪ জুন, রাত ১টা

(রাত ১২টার পর পরবর্তী দিন ধরা হয়েছে)

গতবার সামান্যর জন্য ইউরো হারানো দলটি বিশ্বকাপ জিতে এবারের ইউরোর সবচেয়ে ফেবারিট দল। অনেকে তো এখনই তাদের হাতে শিরোপা তুলে দিচ্ছেন। সেটা শুরু ইউরো পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারলেই হয়। তবেই ইউরো শিরোপাটা যে তাদের জন্যই অপেক্ষা করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link