‘ছায়া জাতীয় দল’ ব্যাপারটা শুনতে বেশ নতুন লাগছে। তবে ধারণাটা বহুল প্রচলিত।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন মাত্র একদিন আগেই জানিয়েছেন, তারা একটি ছায়া জাতীয় দল গঠন করবেন। যার নাম হবে-বাংলাদেশ টাইগার্স। সভাপতির এই ঘোষণার সাথে সাথে কৌতুহল তৈরি হয়েছে যে, এই ছায়া জাতীয় দল বা বাংলাদেশ টাইগার্স ব্যাপারটা কী হবে? এর কাঠামো, কোচিং সেটআপ এবং কার্যক্রম কী হবে?
এই ছায়া জাতীয় দলের ধারণাটা এসেছে মূলত গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ সুজন এবং সিসিডিএম চেয়ারম্যান কাজী ইনাম আহমেদের কাছ থেকে। তাঁরা একটা পূর্ণাঙ্গ খসড়া বিসিবি সভাপতির কাছে জমা দিয়েছেন এই ছায়া দল সম্পর্কে। কিন্তু এখনই তাঁরা বিস্তারিত প্রকাশ করতে চাচ্ছেন না পরিকল্পনাগুলো।
খালেদ মাহমুদ বললেন, ‘এটা সারা বছর চলমান একটা দল হবে, এটুকু বলতে পারি। তবে বিস্তারিত এখন বলবো না। ইনাম ভাই (কাজী ইনাম) দু একদিনের (আজই) মধ্যে একটা সংবাদ সম্মেলন করে আপনাদের এই দলের কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবেন।’
তারপরও বিসিবির বিভিন্ন সূত্র থেকে যেটুকু জানা গেলো, তাতে বোঝা গেলো এই বাংলাদেশ টাইগার্স হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের সার্বক্ষনিক কার্যক্রমে থাকা প্রথম ‘এ’ দলের কাঠামো।
এরকম কাঠামো ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, ভারত থেকে শুরু করে আয়ারল্যান্ডের আছে। ইংল্যান্ডে লায়ন্স, আয়ারল্যান্ডে উলভস, পাকিস্তানে শাহিন নামে এই দলগুলো কার্যক্রম চালায়। বাকীরা ‘এ’ দল হিসেবেই খেলে। তবে বড় ব্যাপার হলো, এই দলটার জন্য একটা পূর্ণাঙ্গ আলাদা সেটআপ রাখা।
বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন সুজন যেমন বলছিলেন, ‘এটাকে আপনি এ-দল এবং এইচপির একটা সমন্বয় বলতে পারেন। তবে প্রধান ব্যাপার হবে, এদের বছর জুড়ে কার্যক্রম থাকবে। শুধু তাই না, এদের জন্য আলাদা প্রধাণ কোচ থেকে শুরু করে সব সাপোর্ট স্ট্যাফ থাকবে। জাতীয় দলের একটা সত্যিকারের পাইপলাইন বা ব্যাকআপ হবে এই দলটা।’
আর এই পয়েন্টটাকেই বড় করে দেখতে চাইছেন নির্বাচকরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নির্বাচক বললেন, ‘আমাদের জন্য একটা এ-দল থাকাটা খুব জরুরী। এখন যেটা হয়, কোনো সিরিজ থাকলে এ দল গঠন করা হয়। কিন্তু এরকম একটা সার্বক্ষনিক দল থাকলে যারা জাতীয় দলে আসবে, তারা ইন্টারন্যাশনালের জন্য প্রস্তুতই থাকবে। ফলে খেলোয়াড় খুজে পেতে সমস্যা হবে না।’
বিসিবি সূত্রে জানা যাচ্ছে যে, এই দলটাতে ঠাঁই পাবেন মূলত দুই ধরণের খেলোয়াড়। প্রথমত যারা বয়সভিত্তিক বা এইচপি থেকে উঠে আসছেন; মনে করা হচ্ছে যে, এরা ভবিষ্যত খেলোয়াড়। আরেকটা গ্রুপ এই ছায়া দলে থাকবেন; যারা জাতীয় দলের বাইরে গেছেন কোনো কারণে। নিজেদের প্রমাণের আরেকটা মঞ্চ পাবেন তাঁরা।
বেশ বড় বহরের এই দলটার জন্য একজন প্রধাণ কোচ থাকবেন। খুব সম্ভবত তিনিও বিদেশি কোচই হবেন। তার সাথে একেবারেই জাতীয় দল কাঠামোর মত ব্যাটিং কোচ, বোলিং কোচ, ফিল্ডিং কোচ, সহকারী কোচ, অ্যানালিস্ট, ফিজিও থাকবে। খেলা না থাকলেও সারা বছর এই দলের ক্যাম্প চলতে থাকবে।
তবে ম্যানেজমেন্ট এই দলটাকে অনেক বেশি খেলার মধ্যে রাখতে চায়। বিভিন্ন দেশের এ দল বা ছায়া দলের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক সফর করতে থাকবে এই দলটা। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের এরকম দলকে নিয়ে টুর্নামেন্টও আয়োজন হতে পারে।
সবমিলিয়ে ম্যানেজমেন্ট আশা করে যে, জাতীয় দলে যে কারো জায়গা নেওয়ার জন্য এক দল খেলোয়াড়কে প্রস্তুত রাখা যাবে এই কার্যক্রমের জন্য।
শেষ পর্যন্ত কাঠামোটা কী হবে, সেটা হয়তো দু একদিন পরে জানা যাবে। তবে আপাতত এটুকু বলা যায় যে, এর ভেতর দিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটে একটা নতুন যুগ শুরু হবে। এর আগে বহু পরামর্শের পরও বাংলাদেশে ‘এ’ দলের কোনো স্থায়ী কাঠামো তৈরি হয়নি। এবার যদি ছায়া দল বা বাংলাদেশ টাইগার্স নামে ব্যাপারটা হয়।